রানাঘাট কাণ্ডের জেরে পশ্চিমবঙ্গের সব ক’টি খ্রিস্টান স্কুল ও গির্জায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবান্নকে ‘পরামর্শ’ দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই এ দিন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও রাজ্যের থেকে রিপোর্ট চেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দু’সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্যাতিতাদের সঙ্গে কথা বলবেন কমিশনের প্রতিনিধিরা।
রানাঘাট নিয়ে রাজ্য সরকারের রিপোর্ট তলব করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রিপোর্ট চেয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। রানাঘাট-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘুরা যে ভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, তা মোটেই ভাল ভাবে নেননি নরেন্দ্র মোদী। ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী তাই এ ধরনের ঘটনা রুখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে যথাসম্ভব পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সংবিধানের চৌহদ্দির মধ্যে থেকে রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন মোদী। বিশেষ ভাবে জোর দিতে বলা হয়েছে, মিশনারি স্কুল ও গির্জার নিরাপত্তার বিষয়টিতে।
আজ কেন্দ্রের যে নির্দেশিকা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাঠানো হয়েছে, তাতে রাজ্যের সমস্ত মিশনারি স্কুল ও গির্জায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। যেখানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নেই, সেখানে স্থানীয় প্রশাসনকে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকায় গোয়েন্দা গতিবিধি বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। ঘটনার দিন স্কুলটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথ ছিল কিনা, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে।
কয়েক মাসে দিল্লি, অসম, উত্তরপ্রদেশে যে ভাবে সংখ্যালঘুদের নিশানা করা হয়েছে, তাতে অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে মোদী সরকার। রানাঘাটের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে তোলপাড় শুরু হওয়ায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে ভারতকে। জানুয়ারি মাসে ভারত সফর শেষে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ নিয়ে সরব হয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বহির্বিশ্বের সামনে দেশের মুখ পুড়ছে বুঝে তার পরে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার বার্তা দিয়ে মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীও। তাতেও যে বিশেষ লাভ হয়নি, রানাঘাট-সহ দিল্লির মিশনারি স্কুল, হরিয়ানার হিসারে একটি প্রার্থনাঘর, অসমেও সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার ঘটনা থেকেই প্রমাণ মিলছে।
এ সব নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জবাবদিহি নরেন্দ্র মোদীকেই করতে হবে, তা উপলব্ধি করেই এ ধরনের ঘটনা রুখতে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিকে আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অপ্রিয় ঘটনা রুখতে একই নির্দেশিকা অন্য রাজ্যগুলিকেও পাঠানো হচ্ছে।
এ দিন রাজ্য পুলিশের ডিজি ও মুখ্যসচিবের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সংবাদমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি হাতে নিয়েছে তারা। দু’সপ্তাহের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিশনের মতে, যে ভাবে দুষ্কৃতীরা সন্ন্যাসিনীদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। কমিশনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতা
ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর মন্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন, এটা নিছক কোনও সন্ন্যাসিনীর উপর আঘাত নয়, এই ঘটনায় মানবিকতা আক্রান্ত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy