Advertisement
E-Paper

অন্য মুখে ‘অন্য পরিস্থিতি’ মাপছেন বুদ্ধ

গোটা দল সম্মেলনে ব্যস্ত। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বাকি সতীর্থেরা পালা করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জেলায় জেলায়। এরই মধ্যে সময় বার করে অনেককে আবার ছুটতে হচ্ছে দু’টি কেন্দ্রে উপনির্বাচনের প্রচারে। এমন ব্যস্ততার প্রহরে তিনি রয়ে গিয়েছেন আলিমুদ্দিনেই। এবং তাঁকে নিয়েই হালফিল আলিমুদ্দিনে তীব্র জল্পনা! শারীরিক কারণে তাঁর পক্ষে এখানে-ওখানে যাওয়া আর সম্ভব নয়, গোটা বাম মহল জানে। তা হলে আর জল্পনা কেন? তার কারণ সম্মেলনে অনুপস্থিতি নয়।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১২
দেখো তো চিনতে পারো কি না।

দেখো তো চিনতে পারো কি না।

গোটা দল সম্মেলনে ব্যস্ত। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বাকি সতীর্থেরা পালা করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জেলায় জেলায়। এরই মধ্যে সময় বার করে অনেককে আবার ছুটতে হচ্ছে দু’টি কেন্দ্রে উপনির্বাচনের প্রচারে। এমন ব্যস্ততার প্রহরে তিনি রয়ে গিয়েছেন আলিমুদ্দিনেই। এবং তাঁকে নিয়েই হালফিল আলিমুদ্দিনে তীব্র জল্পনা!

শারীরিক কারণে তাঁর পক্ষে এখানে-ওখানে যাওয়া আর সম্ভব নয়, গোটা বাম মহল জানে। তা হলে আর জল্পনা কেন? তার কারণ সম্মেলনে অনুপস্থিতি নয়। কারণ, তাঁর ইদানীং কালের অবয়ব! সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি, কখনও ধুতির বদলে পায়জামা এবং জওহরকোট-শোভিত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দলের সদর দফতরে আসছেন এক গাল দাড়ি নিয়ে! শুভ্র কেশের নীচে ধবধবে সাদা গোঁফ এবং দাড়ির বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখামাত্র আলিমুদ্দিনে সিপিএমের নেতা-কর্মী থেকে নিরাপত্তারক্ষী সব মহলে গুঞ্জন শুরু হয়ে যাচ্ছে! হলটা কী!

সেই ১৯৭৭ সালে জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভায় তরুণ মুখ হিসাবে যে বুদ্ধবাবুর অন্তর্ভুক্তি হয়েছিল, সেই ইস্তক দাড়ি-গোঁফের বালাই রাখতে কেউ দেখেনি তাঁকে। ভারতের রাজনীতিতে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর বা দক্ষিণের রামকৃষ্ণ হেগড়ে দাড়ি-বিশিষ্ট হিসাবেই পরিচিত হয়েছেন। পুবে প্রফুল্ল মহন্তও তা-ই। হালফিল রাজনীতিক এবং দাড়ির যোগ বলতেই লোকে মনে করে নরেন্দ্র মোদীর কথা। আবার দাড়ি রাখবেন না ফেলবেন, এই দ্বিধা থেকে বেরোতে পারেননি রাহুল গাঁধী! বুদ্ধবাবু এর মধ্যে কোনও তালিকাতেই পড়েন না। ‘পরিষ্কার’ মুখের তরুণ সদস্য হিসাবে বসুর মন্ত্রিসভায় শুরু করে কালে কালে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, বামফ্রন্ট সরকার বিদায় নেওয়ার পরে দলের অন্দরে অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা হিসাবে রয়ে গিয়েছেন। মাথার চুল শুভ্র থেকে শুভ্রতর হয়েছে। কিন্তু কখনওই মুখচ্ছবি পাল্টায়নি! সেই মুখকেই এখন দাড়ির জঙ্গলে দেখলে জল্পনা এবং কৌতূহল স্বাভাবিক!

দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলছেন, “এই রকম চেহারায় বুদ্ধদা’কে কোনও দিন দেখিনি! প্রথমে অচেনা লাগছিল ঠিকই। কিন্তু খুব বেমানান লাগছে না!” সাহিত্যপ্রেমী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে নতুন অবতারে দেখে তাঁর অনুরাগী এক জন আবার ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, আর্নস্ট হেমিংওয়ের মতো লাগছে! দলের মধ্যে অত্যুৎসাহী কেউ কেউ আরও এগিয়ে যাচ্ছেন! তাঁদের সরস জল্পনা, প্রকাশ কারাটের কট্টরপন্থী গ্রাস থেকে দলকে বার করে একটু মুক্ত বাতাসে আনতে চান বুদ্ধবাবু। দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে কারাটের বিদায় এখন ঘোষিত। তাঁর জায়গায় প্রকৃতই উদার চিন্তার কেউ অধিষ্ঠিত হচ্ছেন, এমন নিশ্চয়তা না পেলে পলিটব্যুরোর এই প্রবীণ সদস্য কি দাড়িই রাখবেন? নিজেদের আলাপচারিতায় প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা!

কাঁধে ঝোলা, মুখে উস্কোখুস্কো দাড়ি এমন চেহারার কমিউনিস্ট কোনও কালেই ছিলেন না বুদ্ধবাবু। সূর্যালোকের নীচে আর সব বিষয়ের মতো দাড়ি নিয়েও কমিউনিস্ট জগতে কিছু তত্ত্ব আছে অবশ্য! যেমন আছে ‘বেয়ার্ড থিওরেম’। এই দাড়ি-ভাবনা মতে, কমিউনিস্ট বা সোশ্যালিস্টদের সঙ্গে দাড়ি খুব সহজাত ভাবে মিশে যায়। যাঁর দাড়ি (যে আকারেরই হোক) যত ঘন, কমিউনিস্ট হিসাবে তিনিও তত দড়! কার্ল মার্ক্স, এঙ্গেলস থেকে লেনিন সব এই তালিকায় আসেন। আবার এই তত্ত্ব অনুযায়ীই জোসেফ স্টালিন কমিউনিস্ট পার্টিতে যত বড় সম্মানই পান না কেন, তাঁর রক্তে নাকি ‘কমিউনিজম’ নেই! কারণ, তাঁর দাড়িও নেই! মানে ছিল না!

দাড়ি-মাহাত্ম্যে সাচ্চা কমিউনিস্ট বাছতে গেলে এ রাজ্যে অবশ্য অনেকেই সে মাপকাঠিতে আসেন না। সিপিএম রাজনীতিতে বুদ্ধবাবুকে যাঁর ‘শিষ্য’ মানা হয়, সেই প্রমোদ দাশগুপ্তের দাড়ি ছিল না। মুখ্যমন্ত্রিত্বে বুদ্ধবাবুর পূর্বসুরি জ্যোতিবাবুও ‘ক্লিন শেভ্ন’! সেই ঐতিহ্য ছেড়ে বুদ্ধবাবু হঠাৎ অন্য পথে গেলেন কেন, ঘুরপাক খাচ্ছে জল্পনা! দাড়িকে কেউ কেউ আবার সন্ন্যাসের প্রতীক ভাবেন। দাড়ি নিয়ে নানা জল্পনা হচ্ছে মানে বুদ্ধবাবুও রাজনৈতিক সন্ন্যাসের জগতে ঢুকে পড়েছেন, তা কিন্তু একেবারেই নয়! দেশ ও রাজ্য রাজনীতির যাবতীয় ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ মাথা ঘামাচ্ছেন। বনগাঁ বা কৃষ্ণগঞ্জে উপনির্বাচনের প্রচারে যেতে পারেননি। কিন্তু নিয়মিত খবর নিচ্ছেন। বুদ্ধবাবুর কথায়, “সম্পূর্ণ অন্য রকম একটা পরিস্থিতিতে একটা নির্বাচন হচ্ছে। এ রকম অভিজ্ঞতা রাজ্যের মানুষের ছিল না, আমাদেরও ছিল না।”

কিন্তু গুরু-গম্ভীর এ সব প্রসঙ্গকে আপাতত ছাপিয়ে যাচ্ছে দাড়ি-চর্চা! দলের পলিটব্যুরোয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সতীর্থ সীতারাম ইয়েচুরি ঠাট্টার সুরেই বলছেন, “বুদ্ধদা’র দাড়ি? নিশ্চয়ই দাড়ি কামাতে আলসেমি পেয়েছে লোকটাকে!”

আর তিনি? বুদ্ধবাবুর সহাস্য জবাব, “কিচ্ছু না! চিবুকের কাছে একটু র্যাশ বেরিয়েছে। দাড়ি কাটতে অসুবিধা হচ্ছে!”

sandipan chakrabarty buddhadeb bhattacharjee new look
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy