Advertisement
১৯ মে ২০২৪
জেসপ-কাণ্ড

হিসেবপত্রের খোঁজ পেতে ফরেন্সিক অডিট চায় সিআইডি

সত্যম এবং সারদা কেলেঙ্কারির ধাঁচে এ বার জেসপ-কাণ্ডেও ফরেন্সিক অডিট করতে চায় সিআইডি। তার জন্য ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা শুরু হয়ে গিয়েছে।

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
Share: Save:

সত্যম এবং সারদা কেলেঙ্কারির ধাঁচে এ বার জেসপ-কাণ্ডেও ফরেন্সিক অডিট করতে চায় সিআইডি। তার জন্য ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা শুরু হয়ে গিয়েছে। এর পাশাপাশি তদন্তের স্বার্থে বুধবারও সংস্থার মালিক পবন রুইয়াকে ভবানী ভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। কিন্তু গত দু’বারের মতো এ বারও তিনি অনুপস্থিত থাকেন। তার কারণ হিসেবে সন্ধ্যায় চিঠি দিয়ে সিআইডি-কে নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন রুইয়া।

সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, জেসপে আগুন লাগার ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথম থেকেই সংস্থার আয়-ব্যয় ও সম্পত্তির হিসেব নিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন তদন্তকারীরা। সিআইডি-র দাবি, সংস্থার অন্যতম মালিক পবন রুইয়ার মতো তাঁর সংস্থার দায়িত্বে থাকা অন্য কর্তাব্যক্তিরাও তদন্তে অসহযোগিতা করছেন।
কোনও ধরনের সহায়তা মিলছে না সংস্থা থেকেও।

এমনকী কারখানার ভিতর থাকা প্রশাসনিক ভবনের চাবিও সিআইডির গোয়েন্দারা পাননি। তাই জেসপের সম্পত্তির হিসেব জানতে সত্যম এবং সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের ধাঁচেই এ বার জেসপ-কাণ্ডেও ‘ফরেন্সিক অডিট’ করতে চায় সিআইডি।

ভবানী ভবন সূত্রের খবর, ২০০৮ সালে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ‘সত্যম কম্পিউটার সার্ভিসেস’-এর আর্থিক তছরুপের তদন্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই একটি বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছিল। গোয়েন্দাদের ভাষায় যার নাম ‘ফরেন্সিক অডিট’। জেসপ-কাণ্ডে তার দ্বারস্থ নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর।

কেন এই ‘ফরেন্সিক অডিট’ শুরু করার ভাবনা?

গোয়েন্দাদের দাবি, জেসপের তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত সংস্থার যে সব কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাঁরা কেউই কারখানার সম্পত্তির কোনও হিসেবই দিতে পারেনি। ফলে পবন রুইয়া ২০০৩ সালে জেসপ অধিগ্রহণ করার সময়ে সংস্থার কত সম্পত্তি ছিল, তা যেমন তদন্তকারীরা জানতে পারেননি, তেমনই বর্তমানে ওই কারখানার সম্পত্তি কত, গোয়েন্দারা তারও এখনও হদিস পাননি বলে অভিযোগ। ফলে ওই সংস্থার আর্থিক হিসেব জানতেই ফরেন্সিক অডিট করা প্রয়োজন।

এই অডিটে কোনও সংস্থার হিসেবে কী কারচুপি রয়েছে বা কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কী ভাবে লেনদেনের হিসেব দেখানো হয়েছে, তা বোঝা যায়।

‘ফরেন্সিক অডিট’-এর জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল গড়া হয়। এই ধরনের বিশেষজ্ঞ দলে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের পাশাপাশি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের মতো বিশেষজ্ঞেরাও থাকেন। সিআইডি-র দাবি, সব সংস্থাই তাদের হিসেবের জন্য নিজস্ব সফট্ওয়্যার ব্যবহার করে। ফলে কম্পিউটার ও সফট্ওয়্যারের কারচুপি ধরতে ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজন।

অন্য দিকে, এ দিনও ভবানী ভবনে ডেকে পাঠানো হয়েছিল পবন রুইয়াকে। কিন্তু আগের কয়েক বারের মতো এ বারও তিনি গরহাজিরই থেকেছেন। সন্ধ্যায় অবশ্য অসুস্থতার কথা জানানোর পরে ফের শুক্রবার তাঁকে ভবানী ভবনে ডাকা হয়েছে।

গোয়েন্দারা আরও জানিয়েছেন, জেসপে বারবার আগুন লাগা এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনায় অন্তর্ঘাতের অভিযোগ ওঠায় পবন রুইয়ার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিল পুলিশ এবং দমকল।
সেই মামলায় গত ২৬ অক্টোবর রুইয়াকে প্রথম বার ডেকে পাঠানো হয় সিআইডি দফতরে। সেখানে হাজিরা না দিয়ে ওই দিন তিনি আদালতের দ্বারস্থ হলে কলকাতা হাইকোর্ট তাঁকে তদন্তকারীদের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করার নির্দেশ দেয়।

একই সঙ্গে বিচারপতির আরও নির্দেশ ছিল, যতক্ষণ জেসপের তদন্তে রুইয়া গোয়েন্দাদের সহযোগিতা করবেন, ততক্ষণ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে না পুলিশ।

আদালতের ওই নির্দেশের পরে গত শুক্রবার রুইয়াকে ভবানী ভবনে ডাকা হলেও তিনি আসেননি। বরং তদন্তকারীদের কাছে চিঠি দিয়ে সময় চান। কিন্তু গোয়েন্দারা তাঁর সেই আবেদন মঞ্জুর না করে এ দিন হাজির হতে বলেছিলেন।

ভবানী ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রুইয়া হাজিরা না দিলেও গোয়েন্দাদের সঙ্গে দেখা করেন জেসপের দুই কর্তা— সংস্থার প্রাক্তন এইচ আর আকিল আহমেদ এবং সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি এবং সিইও শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়।
প্রায় ঘণ্টা তিনেক ভবানী ভবনে ছিলেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CID Jessop forensic audits
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE