Advertisement
০৩ মে ২০২৪

কেটে নয়, গাছ সরিয়ে রাস্তা বাড়ানোর আশ্বাস

যশোর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বেশ কয়েকটি প্রাচীন গাছের জন্য ওই রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ আটকে আছে জেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা গাছগুলিকে সরিয়ে অন্যত্র বসিয়ে দেব। এখন তো বাড়িঘরও তুলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে।’’

ছায়াঘেরা: যশোর রোডের এই প্রহরীরা বাঁচবে তো, উঠছে প্রশ্ন! ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

ছায়াঘেরা: যশোর রোডের এই প্রহরীরা বাঁচবে তো, উঠছে প্রশ্ন! ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৯
Share: Save:

তারা রাস্তা সম্প্রসারণের বাধা ঠিকই। তবে মনুষ্যজীবনে সেই সব গাছের নিত্য অবদান যে তার থেকে অনেক বেশি, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই অবস্থায় গাছ বাঁচিয়ে কী ভাবে রাস্তা চওড়া করা যেতে পারে, মঙ্গলবার বারাসতে উত্তর ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে সেই পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

যশোর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বেশ কয়েকটি প্রাচীন গাছের জন্য ওই রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ আটকে আছে জেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা গাছগুলিকে সরিয়ে অন্যত্র বসিয়ে দেব। এখন তো বাড়িঘরও তুলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে।’’

মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরে যশোর রোড সম্প্রসারণের জট খুলতে পারে আশা করছেন সাধারণ মানুষ থেকে প্রকৃতিপ্রেমী। তবে প্রাচীন গাছগুলিকে সত্যিই অন্যত্র সরিয়ে বাঁচানো সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। যশোর রোড সম্প্রসারণের জন্য বারসত থেকে বনগাঁ শহর পর্যন্ত পাঁচটি রেলসেতু গড়ার কথা। তার জন্য সমীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে। কয়েক মাস আগে বনগাঁ শহরে ওই কাজের জন্য সড়কের দু’পাশের প্রাচীন গাছ কেটে ফেলতে শুরু করেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।

তার পরেই গাছ বাঁচানোর দাবিতে পথে নামেন বহু মানুষ। মিটিং-মিছিল, নাটক-গান-কবিতার মাধ্যমে গাছ বাঁচানোর পক্ষে সওয়াল করেন তাঁরা। কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও করে একটি মানবাধিকার সংগঠন। হাইকোর্টের নির্দেশে আপাতত ওই রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ বন্ধ রয়েছে। মামলাকারীদের পক্ষে অজয় মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা চাই, গাছগুলি অন্যত্র সরিয়ে রেলসেতু গড়া হোক। বড় গাছ যে তুলে নিয়ে গিয়ে অন্যত্র বসানো যায়, সেই ভিডিও আমরা আদালতে জমা দিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীও তো আমাদের কথাটাই বলেছেন।’’

আরও পড়ুন: নিরাপত্তার কড়াকড়িতে সুর কাটল উৎসবের

এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠকে বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের কাছে মুখমন্ত্রী জানতে চান, রেলসেতুর কাজ কী অবস্থায় আছে। বিধায়ক জানান, মামলার জন্য কাজ থমকে রয়েছে। এর পরে তাঁর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁদের বোঝাতে হবে যে, আমরা গাছ কাটার পক্ষে নই। ওঁদের সঙ্গে কথা বলে মামলা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য সড়ক সম্প্রসারণ জরুরি বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে অন্যত্র তুলে নিয়ে গিয়ে প্রাচীন গাছগুলিকে বাঁচানো সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা। শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেন্সের প্রাক্তন অধিকর্তা অরবিন্দ প্রামাণিক জানাচ্ছেন, গাছের বয়স ৫০-৬০ বছরের বেশি হয়ে গেলে সেগুলিকে তুলে অন্যত্র বসানোটা ঝুঁকির হয়ে যায়। গাছের বয়স যত বাড়ে, তার শিকড় মাটির গভীর থেকে আরও গভীরে চলে যেতে থাকে। শিকড়েরও শাখা-প্রশাখা গজিয়ে যায়। তাই এই ধরনের প্রবীণ গাছকে তুলে অন্যত্র বসানোটা বেশ ঝুঁকির বলে মন্তব্য করেন অরবিন্দবাবু।

ওই উদ্ভিদবিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, এ দেশে বট, অশ্বত্থ, ডুমুরের মতো যে-সব গাছের শিকড় চোট-আঘাতের ধাক্কা সামলাতে পারে, একমাত্র সেগুলোকেই এ ভাবে অন্যত্র সরিয়ে বাঁচানো যেতে পারে। ‘‘আমরা সম্প্রতি হাইকোর্ট-চত্বর থেকে একটি পুরনো গাছকে এই ভাবে সরিয়ে ময়দানে পুঁতেছি। গাছটি বেঁচেও আছে,’’ দৃষ্টান্ত দিয়েছেন অরবিন্দবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE