জয়দেবে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে বাউল গাইতে চান। দিন দুয়েক আগে সিউড়িতে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে এসে এমনই দরবার করছিলেন এক হতদরিদ্র বাউল। তত ক্ষণে তালিকা তৈরি হয়ে যাওয়ায় বিফল মনোরথেই ফিরতে হয় তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে গাওয়ার সুযোগ পেলে সম্মানের পাশপাশি হাজার টাকা সাম্মানিকও মিলত। তাই কিছুতেই আক্ষেপ যাচ্ছিল না ওই বাউলশিল্পীর।
বিশেষ করে যাঁরা দুঃস্থ, সরকারি-বেসরকারি কোনও মঞ্চেই ডাক পান না, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে এ বার লোকশিল্পীদের ‘ডেটা ব্যাঙ্ক’ তৈরির কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বীরভূমের জয়দেবে বাউল ও লোক উৎসবে বাউল অ্যাকাডেমির শিলান্যাস করে লোকশিল্পীদের এমনই আশার কথা শোনালেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘লোকশিল্পী ভাইবোনেরা আমার গর্ব। আমাদের যত গ্রাম আছে, যত রেজিস্টার্ড ক্লাব আছে, যে ক্লাবকে আমরা সাহায্য করি, জেলায় জেলায় যারা দুর্গাপুজো, কালীপুজো বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে, আমাদের লোকশিল্পীদের ডেটা ব্যাঙ্ক তাদের দিয়ে দাও। এই শিল্পী ভাইবোনেদের নিয়ে তারা অনুষ্ঠান করবে। যাতে শিল্পীদের পরিবারটা বেঁচে যায়।’’
তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রের খবর, শুধু বীরভূমেই নথিভুক্ত লোকশিল্পী সাড়ে পাঁচ হাজার। তাঁদের মধ্যে যাঁদের বয়স ৬০ ছাড়িয়েছে, সেই শিল্পীরা কেবল মাসে হাজার টাকা ভাতা পান। বাকি নথিভুক্তেরা ওই ভাতা ছাড়াও সরকারি অনুষ্ঠানে ডাক পান। সে ক্ষেত্রে অনুষ্ঠান পিছু অতিরিক্ত আরও এক হাজার টাকা করে পান। শিল্পীদের ডেটা ব্যাঙ্ক হলে অনুষ্ঠানে ডাক পাওয়ার ক্ষেত্রটা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন লোকশিল্পীরা। দুবরাজপুরের লোকশিল্পী শ্যামল দাস বৈষ্ণব, বোলপুরের স্বপন বৈরাগীরা বলছেন, ‘‘আমরা তেমন কাজ পাই না। আশার কথা শুনিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ রাজ্যের লোকশিল্পীদের ‘ডেটা ব্যাঙ্ক’ তৈরির কাজ করেছেন হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, দুবরাজপুরের তরুণ ইনতাজ আলি। সেই তথ্য নিয়ে একটি ওয়েবসাইটও বানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘যাঁরা প্রকৃত লোকশিল্পী, তাঁদের অনেকেরই কার্ড নেই। তাই দেখতে হবে, কাজ পাচ্ছেন কারা। যাঁরা নথিভুক্ত শিল্পী নন, তাঁরাও প্রাপ্য
সুযোগ পাক।’’
মখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই ব্লক ধরে ধরে ওই শিল্পীদের তথ্য তৈরি করার এই কাজ তাঁরা দ্রুত শুরু করবেন বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি গবেষক শক্তিনাথ ঝা মনে করছেন, ‘‘এতে লোকশিল্পীদের আর্থিক উন্নতি হয়তো হবে। কিন্তু তাতে লোকশিল্পের কতটা উন্নতি হবে, সে সন্দেহ থেকেই যায়। কেননা, ফরমায়েসি গান যখন পণ্য হয়, তখন তা লোকশিল্প নয়, ‘পপুলার মিউজিক’ হয়। এ ক্ষেত্রে সেই
আশঙ্কা থাকছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy