Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

অসহযোগী রাজ্য, সুপ্রিম কোর্টে জানাতে চান মান্নান

সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তে রাজ্য সরকারের অসহযোগিতা এবং খোদ আইনমন্ত্রীর ধর্নার বিরুদ্ধে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। প্রসঙ্গত, তাঁর করা মামলাতেই সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এর পাশাপাশিই সারদা মামলায় যে ভাবে ক্রমশ মুখ্যমন্ত্রীর নাম জড়াচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সিবিআইয়ের জেরা এবং প্রয়োজনে গ্রেফতারের দাবি তুললেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর পরিবারের কারও নাম না করেই ‘কালীঘাটে কারও কারও জমি-বাড়ি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত’ দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের সম্মেলনে আব্দুল মান্নান এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের সম্মেলনে আব্দুল মান্নান এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৩
Share: Save:

সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তে রাজ্য সরকারের অসহযোগিতা এবং খোদ আইনমন্ত্রীর ধর্নার বিরুদ্ধে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। প্রসঙ্গত, তাঁর করা মামলাতেই সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এর পাশাপাশিই সারদা মামলায় যে ভাবে ক্রমশ মুখ্যমন্ত্রীর নাম জড়াচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সিবিআইয়ের জেরা এবং প্রয়োজনে গ্রেফতারের দাবি তুললেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর পরিবারের কারও নাম না করেই ‘কালীঘাটে কারও কারও জমি-বাড়ি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত’ দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

সারদা কেলেঙ্কারিকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা যে এখন ক্রমাগত সুর চড়াবে, এ দিন দু’দলের নেতাদের বক্তব্যেই তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। আজ, সোমবার থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহেও সারদা-কাণ্ডে নানা কর্মসূচি নিয়ে পথে নামছে বিরোধীরা।

সারদা কাণ্ডে তৃণমূলের উপরে চাপ বাড়িয়েছে কংগ্রেস। দলের নেতা মান্নানের দায়ের-করা মামলার ভিত্তিতেই জল এত দূর গড়িয়েছে। সেই মান্নানই রাজ্য সরকারের ভূমিকার প্রতিবাদে ফের মামলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। রবিবার দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস আয়োজিত সারদা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত একটি কনভেনশনে তিনি জানান, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে সিবিআইকে সাহায্য করার কথা ছিল রাজ্য সরকারের। কিন্তু রাজ্যের আইনমন্ত্রীই দলবল নিয়ে সিবিআই দফতরের সামনে ধর্নায় বসেছেন! এতে সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর খাসতালুকে আশুতোষ কলেজ হলের ওই অনুষ্ঠানে মান্নান বলেন, “আদালত অবমাননা মামলার জন্য ইতিমধ্যেই আইনজীবী শুভাশিস ভৌমিক এবং বিকাশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, সর্বোচ্চ আদালতের রায়েই ফের মামলা করার অনুমতি রয়েছে। আইনমন্ত্রীকে গ্রেফতারের দাবিও তুলেছেন ওই কংগ্রেস নেতা।

দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে বলে দাবি তুলেছে বিজেপি। একই দাবি করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। এত বড় কেলেঙ্কারির অভিযোগ সামনে আসা সত্ত্বেও প্রধান বিরোধী দল সিপিএম বা বামফ্রন্ট কেন মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার কথা বলছে না, সেই প্রশ্ন উঠছিল। কলকাতায় রবিবার দলের যুব সমাবেশে সেই প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর বক্তব্য, “অনেকে বলছেন, কেন আপনারা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছেন না? আমরা বলছি, আগে তাঁকে ধরে জেরা করা হোক। জেরায় সহযোগিতা না করলে তাঁকে হাজতে নেওয়া হোক! তার পরে চার্জশিট। তবে তো পদত্যাগ! তার আগে পদত্যাগ করে উনি সব ছেড়েছুড়ে পালিয়ে যাবেন, তা হবে না!” কর্নাটকে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা যেমন দুর্নীতির অভিযোগে জেরার মুখে পড়ে এবং চার্জশিট পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আসন ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, এ দিন সেই উদাহরণ দিয়েছেন সূর্যবাবু। মান্নানের সুরেই এ দিন সূর্যবাবু বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী সংবিধান মানেন না। তাঁর নেতা-মন্ত্রীরাও মানেন না। আইনমন্ত্রী নিজেই ধর্নায় বসে পড়লেন!” অবশ্য দু’দিন ধরে সল্টলেকে মহিলা তৃণমূলের ধর্না বসছে না!

বিরোধীদের এমন চাপের মুখেও শাসক দল অবশ্য যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সারদা-তৃণমূল যোগ অস্বীকার করার। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় যেমন এ দিন ফের ঘোষণা করেছেন, সারদার সঙ্গে তাঁদের কারও যোগসাজশ প্রমাণিত হলে তিনি রাজনীতিই ছেড়ে দেবেন! পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে এ দিন জেলা যুব তৃণমূলের সমাবেশে মুকুলবাবু বলেছেন, “আমি দায়িত্ব নিয়ে বলে যাচ্ছি, সারদার সঙ্গে তৃণমূল বা আমাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ প্রমাণ হলে রাজনীতির আঙিনায় থাকব না!” সিবিআইকেও ফের দুষেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করার জন্য সিবিআইকে ব্যবহার করা হচ্ছে, এ নিয়ে আমাদের সন্দেহ নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি সারদাকে কাজ করতে দিতে চাইতেন, তা হলে সুদীপ্ত সেন গ্রেফতার হতো? তৃণমূল যদি চাইত, তা হলে সারদাকে (সুদীপ্ত সেনকে) পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারত। কাশ্মীর থেকে ৭ দিনের মধ্যে সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করে এনেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।” শ্যামল সেন কমিশন গঠন করে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ লক্ষ আমানতকারীর মধ্যে ৫ লক্ষ লোকের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে বলেও মুকুলবাবুর দাবি।

রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের যুব সমাবেশে এ দিন সূর্যবাবু বলেন, “সারদায় চুনোপুঁটি, বড় জোর ট্যাংরা ধরা পড়েছে। এখনও রাঘব বোয়াল বাকি। শুধু তাদের ধরলেই হবে না, টাকা বার করতে হবে! তার জন্য কালীঘাটের জমি-বাড়ি বা পুরীর হোটেল বিক্রি করতে হলে করতে হবে! টাকা ফেরত দিতেই হবে। আমাদের করের টাকায় ক্ষতিপূরণ চলবে না!” তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষের বক্তব্য এখন অস্বীকার করছেন মুখ্যমন্ত্রী, সুদীপ্তকেও তিনি চিনতেন না বলে দাবি করছেন। এই সূত্রেই সূর্যবাবুর বক্তব্য, “যাঁদের কাঁধে চেপে উনি ক্ষমতায় পৌঁছেছেন, তাঁদের কাউকেই পরে আর চিনতে পারেন না! কুণাল ঘোষ এখন জেলে। কিষেণজি জেলে বা বাইরে, কোথাওই নেই। ওঁর সঙ্গে যাঁরা সুসম্পর্ক রাখতে চান, তাঁরা সাবধানে থাকবেন!” ভিড়ে-ঠাসা ওই সমাবেশে ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক জামির মোল্লাও বলেছেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছি না। কিন্তু যে চেয়ারটাকে আপনি কলঙ্কিত করেছেন, সেখানে বসার নৈতিক অধিকার আপনার আছে কি না, ভেবে দেখুন!” যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সায়নদীপ মিত্র বলেছেন, “সারদা-রানির দলকে আমরা রাস্তায় বুঝে নিতে চাই!” আজ, সোমবারই ছাত্র-যুব-শ্রমিক-মহিলা সংগঠন মিলে প্রতিবাদ মিছিল করবে বামফ্রন্ট। এ দিকে মুকুলবাবুও ঘোষণা করেছেন, তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও কুৎসার প্রতিবাদে আগামী ১৯ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের সর্বত্র পাল্টা প্রচারে নামবেন তাঁরাও।


সারদা কেলেঙ্কারি, নারী নির্যাতন-সহ সাম্প্রতিক নানা ঘটনার প্রতিবাদে ডাকা ৮টি বামপন্থী
সংগঠনের সমাবেশে সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করলেও বিজেপি-কে অবশ্য রেয়াত করছেন না সূর্যবাবুরা। নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ পর্যন্ত যখন সিবিআইয়ের তদন্তের আওতায় এসেছেন, চার্জশিটও হয়েছে, তাঁদের কাছ থেকে ‘বড় বড় কথা শোনার’ কোনও দরকার নেই বলেই এ দিন মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর বক্তব্য, “আমরা যখন তিন বছর ধরে এই সব কাণ্ডের বিরুদ্ধে বলছিলাম, তখন কোথায় ছিলেন আপনারা? ভোটের সময় মুখ খুললেন। তার আগে বণিকসভার অনুষ্ঠানে কলকাতায় এসে তো ‘দিদি দিদি’ করে প্রশংসা করে গিয়েছিলেন!” সূর্যবাবুর ইঙ্গিত ছিল মোদীর দিকেই। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বা অন্য কাউকে ধরে তৃণমূল বিড়ম্বনা সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর।

এই আবহেই লোকসভা ভোটে পরাজয়ের পরে ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে তৃণমূলকে এ দিন দীপার কটাক্ষ, “অর্থলগ্নি সংস্থা আমাদের ভিত্তি, তোলাবাজি আমাদের ভবিষ্যৎ! পরে দাঁড়াবে, জেলখানা আমাদের ভবিষ্যৎ!” মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, গত বছর পয়লা বৈশাখের আগে তিনি সারদা নিয়ে কিছু জানতেন না। ওই প্রসঙ্গ টেনে আর এক প্রাক্তন সাংসদ সোমেন মিত্রের বক্রোক্তি, “ডেলোয় বৈঠক, অ্যাম্বুল্যান্সের উদ্বোধন করেছেন। অথচ বলছেন, সুদীপ্তকে চিনি না! আসলে উনি জেগে ঘুমোন। তাই ওঁকে জাগানো যাবে না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE