Advertisement
E-Paper

ক্যারিব্যাগে বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে উদ্যোগ

অভিযোগ, শহরের একাধিক শপিং মল ও বড় বিপণিতে ক্রেতার থেকে ক্যারিব্যাগের জন্য টাকা নেওয়ার পাশাপাশি সেখানে ছাপানো হচ্ছে সেই সংস্থার বিজ্ঞাপনও।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২৫
ক্যারিব্যাগে দোকানের বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে পদক্ষেপ করছে ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। ফাইল চিত্র

ক্যারিব্যাগে দোকানের বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে পদক্ষেপ করছে ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। ফাইল চিত্র

মাস দুই আগে ধর্মতলার একটি প্রসিদ্ধ দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছিলেন বারুইপুরের মসিউর রহমান সর্দার। সেই মিষ্টি নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্যারিব্যাগ বাবদ তাঁর থেকে নেওয়া হয়েছিল তিন টাকা। উপরন্তু, তাতে লেখা ছিল ওই দোকানের নামও। কেন তিনি দোকানের বিজ্ঞাপন লেখা এমন ক্যারিব্যাগ নিয়ে যাবেন, তা নিয়ে আপত্তি করেন পেশায় ব্যবসায়ী মসিউর। অভিযোগ, তাতে কান দেয়নি সংশ্লিষ্ট দোকান। এর পরেই ওই ব্যবসায়ী ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। গত মাসে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের নোটিস পেয়ে তাদের ক্যারিব্যাগে সংস্থার নাম লেখা বন্ধ করেছে ওই দোকান।

উপরের ঘটনাটি হিমশৈলের চূড়া মাত্র। অভিযোগ, শহরের একাধিক শপিং মল ও বড় বিপণিতে ক্রেতার থেকে ক্যারিব্যাগের জন্য টাকা নেওয়ার পাশাপাশি সেখানে ছাপানো হচ্ছে সেই সংস্থার বিজ্ঞাপনও। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকদের মতে, এমন পন্থা সম্পূর্ণ বেআইনি। এই প্রবণতা বন্ধ করতে প্রতিটি জেলার ক্রেতা সুরক্ষা আধিকারিককে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, ‘‘ক্যারিব্যাগের জন্য ক্রেতার থেকে বাড়তি টাকা আদায় তো করা হচ্ছেই। এর উপরে সেই ক্যারিব্যাগে দোকানের বিজ্ঞাপন ছাপানো হচ্ছে। এমন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’’

গত ফেব্রুয়ারিতে চণ্ডীগড়ে একটি নামী জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থার শো-রুমে জুতো কিনতে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ললিতপ্রসাদ রাতুরিয়া। ক্যারিব্যাগে করে সেই জুতোর বাক্স নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর থেকে অতিরিক্ত তিন টাকা নেওয়া হয়। এর সঙ্গে ওই ব্যাগে সংস্থার বিজ্ঞাপন ছিল। ললিত তিন টাকা দিতে আপত্তি করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, কাগজের ওই ক্যারিব্যাগ বিনামূল্যে দেওয়া উচিত। কিন্তু সেই আবেদনে কর্ণপাত করেননি বিক্রেতা। এর পরে ললিত চণ্ডীগড় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন। গত ৯ এপ্রিল বিচারক ওই জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থাকে ৯০০০ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন। তিনি উষ্মা প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, এ ভাবে কোনও সংস্থা ক্যারিব্যাগের দাম নিতে পারে না। ক্যারিব্যাগে সংস্থার বিজ্ঞাপন ছাপানো সম্পর্কে বিচারকের মন্তব্য ছিল, ‘‘এ তো মনে হচ্ছে, ক্রেতাই যেন বিক্রেতা সংস্থার বিজ্ঞাপনী এজেন্ট!’’

রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা-সহ জেলার বিভিন্ন শপিং মল থেকে শুরু করে বড় বড় বিপণিতে জিনিসপত্র কিনে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্যারিব্যাগ বাবদ ক্রেতাদের থেকে অতিরিক্ত ৩-১০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এটা সম্পূর্ণ অসাধু ব্যবসা। ক্যারিব্যাগের জন্য কোনও সংস্থা টাকা নিতে পারে না। তাতে নিজেদের বিজ্ঞাপনও ছাপাতে পারে না।’’ ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘যে বিক্রেতারা নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে ক্যারিব্যাগ, বিশেষত কাগজের ক্যারিব্যাগের জন্য বাড়তি টাকা নিচ্ছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথমে অভিযুক্তদের নোটিস পাঠিয়ে সতর্ক করা হবে। নোটিস না মানলে প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

শহরের শপিং মল বা দোকানে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবশ্য বরাবরই সরব পরিবেশকর্মীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এর পরিবর্তে চটের ব্যাগ ব্যবহার করলে ভাল হয়। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘৫০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু ৫০ মাইক্রনের বেশি প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহৃত হলে আমরা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে বড় বড় বিপণিতে যাতে চট এবং কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, সে বিষয়ে আমরা প্রচার চালাব।’’

Consumer Forum Sadhan Pandey Carry Bag Advertisement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy