Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ছাত্রীর সোনা বাতিল, বিতর্ক সমাবর্তন ঘিরে

স্বর্ণপদক প্রাপক হিসেবে সমাবর্তনে আমন্ত্রণ জানালেও পরে ‘টেকনিক্যাল’ ত্রুটি দেখিয়ে বেশ কয়েক জন পড়ুয়াকে পদক দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। তাঁদের মধ্যে আইন বিভাগের এক ছাত্রী, দমদমের বাসিন্দা দীপান্বিতা গঙ্গোপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল এবং উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন, কেন এ রকম ঘটনা ঘটল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৮
Share: Save:

তিন বছর পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ তম সমাবর্তন উৎসব হতে চলেছে ১ ডিসেম্বর। সেই উৎসবেও লাগল বিতর্কের আঁচ।

স্বর্ণপদক প্রাপক হিসেবে সমাবর্তনে আমন্ত্রণ জানালেও পরে ‘টেকনিক্যাল’ ত্রুটি দেখিয়ে বেশ কয়েক জন পড়ুয়াকে পদক দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। তাঁদের মধ্যে আইন বিভাগের এক ছাত্রী, দমদমের বাসিন্দা দীপান্বিতা গঙ্গোপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল এবং উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন, কেন এ রকম ঘটনা ঘটল।

মার্কশিটের ভুল, ফল প্রকাশে দেরি, উইয়ে পরীক্ষা খাতা নষ্টের মতো ঘটনায় ইতিমধ্যেই অস্বস্তিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এ বার সমাবর্তন ঘিরেও প্রশ্ন ওঠায় অস্বস্তি বেড়েছে। আমন্ত্রণ-বিভ্রাটের ব্যাখ্যা চেয়ে উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন স্বয়ং রাজ্যপাল। কিন্তু, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক করেও রাজ্যপালের চিঠির জবাব দিতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য নিমাই সাহা বলেন, “এ ব্যাপারে যা বলার পরীক্ষা নিয়ামক বলবেন।”

শুধু দমদমের ওই ছাত্রী নয়, একই ঘটনা ঘটেছে মেমারির বাসিন্দা শুভদীপ বিষয়ীর সঙ্গেও। ২০১৫ সালে এমবিএ (মানবসম্পদ)-তে সর্বোচ্চ নম্বর পান। তাঁকে ৩১ অক্টোবর চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসার সমাবর্তন উৎসবে এসে স্বর্ণপদক নেওয়ার জন্য জানান। এর তিন সপ্তাহ পরে পরীক্ষা নিয়ামক ও ফিনান্স অফিসার চিঠি দিয়ে জানান, ‘টেকনিক্যাল’ কারণে তাঁদের ভুল হয়ে গিয়েছে। চিঠি পাওয়ার পরে ঠিক কী ধরনের ‘টেকনিক্যাল’ ভুল হয়েছে, তা জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন শুভদীপ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও উত্তর দিতে চাননি বলে ওই যুবকের অভিযোগ। শুভদীপের বাবা অচিন্ত্যবাবু বলেন, “এই ঘটনার ফলে সামাজিক সম্মান ক্ষুন্ন হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার পরেও ঠিক কী কারণে স্বর্ণপদক দেওয়ার চিঠি আসার পরেও তা কেড়ে নেওয়া হল, তা জানার অধিকার থাকবে না!” বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক সুজিত চৌধুরীর দাবি, ‘‘ওই ছাত্র সেমেস্টার মেনে পরীক্ষা দেননি। তা ধরা পড়ার পরেই স্বর্ণপদক প্রাপকের তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে হয়েছে।”

দীপান্বিতা ২০১৬ সালে আইন বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্নাতক হন। তাঁকেও স্বর্ণপদক নিতে চিঠি পাঠান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চলতি সপ্তাহে ফের চিঠি পাঠিয়ে ‘টেকনিক্যাল’ ভুল বলে জানানো হয়। তিনি রাজ্যপাল ও উপাচার্যকে চিঠি দেন। ওই চিঠি পাওয়ার পরেই মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রতিনিধি দীপান্বিতার বাড়িতে গিয়ে চিঠি তুলে নেওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু, দীপান্বিতা সাড়া দেননি। একই ঘটনা ঘটেছে সঙ্গীত বিভাগের এক ছাত্রী-সহ আরও পাঁচ-ছ’জনের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবকুমার পাঁজা বলেন, “আইনের রিভিউয়ের ফল বের করার আগেই দীপান্বিতাকে চিঠি দেওয়া হয়। রিভিউয়ের ফল পাল্টে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে।’’

দীপান্বিতার প্রশ্ন, ‘‘রিভিউয়ের ফল না দেখেই কেন স্বর্ণপদক দেওয়ার জন্য আমাকে চিঠি দেওয়া হল?’’ এর উত্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নেই। কিন্তু রেজিস্ট্রার মেনেছেন, এ ধরনের ভুলের জন্য সামাজিক সম্মানে আঘাত পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Burdwan University Convocation Controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE