E-Paper

পিংলা ব্লকের বড়িশা গ্রামে এক দিনেই ৫২০ মিলিমিটার বৃষ্টি! ‘বিরল’ বলেছে মৌসম ভবন

সাম্প্রতিক কালে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এক দিনে আসানসোলে ৪৩৪.৫ মিলিমিটার এবং বাঁকুড়ায় ৩৫৪.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। তার আগে, ঘূর্ণিঝড় আমপানের দিন কলকাতায় ২৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৫৪
কংসাবতীতে বাড়ছে জল। ডুবছে কাশফুলের বন। মেদিনীপুরে।

কংসাবতীতে বাড়ছে জল। ডুবছে কাশফুলের বন। মেদিনীপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

দেবদূতরূপী পাগলা দাশু ‘আবার সে এসেছে ফিরিয়া’ বলে ফিরে এসেছিল মঞ্চে এবং নাটক ভন্ডুল করে ছেড়েছিল।

একই ভাবে গাঙ্গেয় বঙ্গ থেকে কার্যত বেরিয়ে গিয়েও আবার ফিরে এসেছে নিম্নচাপ এবং তার দাপটেই ভরা শরতেও প্রবল বৃষ্টি সইতে হচ্ছে রাজ্যকে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আজ, বৃহস্পতিবারও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হবে। উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। আগামিকাল, শুক্রবার বিকেল থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে বলে আশা করছে হাওয়া অফিস।

নিম্নচাপের এই ফিরে আসার ব্যাপারে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বুধবার জানান, উত্তর ভারতের একাংশ থেকে বর্ষা বিদায় নিয়েছে। ওই এলাকায় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে জোরালো হাওয়া বইছে। সেই বাধাতেই নিম্নচাপটি ফের গাঙ্গেয় বঙ্গে ফিরে এসেছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বুধবার থেকেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। তবে তার মধ্যে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের বড়িশা গ্রাম। মৌসম ভবন জানিয়েছে, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৫২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সেখানে! যদিও স্থানীয় ভাবে সেখানে এত বৃষ্টির খবর রাত পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এই ধরনের বর্ষণকে ‘বিরল’ বলেছে মৌসম ভবন। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রাজ্য সেচ দফতরের কাছ থেকে বড়িশার এই বৃষ্টির কথা তারা পেয়েছে। ৫২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের তথ্য কলকাতায় বসে স্বীকার করেছেন রাজ্যের সেচ দফতরের কর্তারাও।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক কালে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এক দিনে আসানসোলে ৪৩৪.৫ মিলিমিটার এবং বাঁকুড়ায় ৩৫৪.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। তার আগে, ঘূর্ণিঝড় আমপানের দিন কলকাতায় ২৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তারও আগে ১৯৯৯ সালে এবং ২০০০ সালে পুজোর আগে জোরালো বৃষ্টি দেখেছিল রাজ্য। ১৯৯৩ সালে ডুয়ার্সে ভয়াবহ বন্যার সময়েও এত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছিল বলে মনে করতে পারছেন না ডুয়ার্সের বাসিন্দারা।

মৌসম ভবন এবং সেচ দফতর বড়িশা গ্রামে ৫২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের তথ্য দিলেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে বুধবার রাত পর্যন্ত এই বিষয়ে তেমন তথ্য ছিল না। পিংলার বড়িশার বাসিন্দা সুবল দাস বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে আমাদের এলাকায় জমি, ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পিচ রাস্তার উপর দিয়ে জল বইছে। বাড়ি থেকে বেরোনোর রাস্তা ডুবে গিয়েছে। তবে ঘর-বাড়ির খুব বেশি ক্ষতি হয়নি।’’ পিংলার বিডিও সুকান্ত গোস্বামী বলেন, ‘‘বড়িশার বিষয়ে আলাদা করে কোনও তথ্য নেই। কৃষি দফতরের একটি হিসাব অনুযায়ী আমাদের ব্লকে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত ১৮৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার মতো বড়িশাতেও জলমগ্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই ব্লকে প্রায় ২০০টি বাড়ির ক্ষতি হয়েছে।’’

হাওয়া অফিসের খবর, আগামী দু’দিন ধরে নিম্নচাপটি ক্রমশ উত্তর-পূর্ব দিকে সরবে এবং সে যত বাংলা থেকে দূরে যাবে ততই বৃষ্টির দাপট কমবে। প্রসঙ্গত, আর দিন দশেক পরেই মহালয়া। দেবীপক্ষের সূচনার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের ঢাকেও কাঠি পড়বে। তার আগে বর্ষা বিদায় নেবে কি না, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে। আবহবিদেরা জানান, আর দিন তিনেকের মধ্যে সমগ্র উত্তরপ্রদেশ-সহ আরও কিছু এলাকা থেকে বর্ষা বিদায় নেবে। তার পরে যদি এ রাজ্যে নতুন কোনও বাধা তৈরি না হয় তা হলে পুজোর আগেই বর্ষা বিদায়ের সুখবর শোনা যেতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rain in West Bengal Weather

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy