রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাজ্যের পাঁচ অন্তর্বর্তী উপাচার্য দেখা করেছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে এক্স হ্যান্ডলে তাঁদের যে ক্রীতদাস বলে উল্লেখ করেছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, তার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ধর্মেন্দ্র।
প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ওই উপাচার্যদের মধ্যে কয়েক জনও। প্রতিক্রিয়া এসেছে শিক্ষামহল থেকেও। যদিও শুক্রবার ব্রাত্যের বক্তব্য, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নয়, এক জন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন। তিনি ওই মন্তব্য থেকে সরে আসছেন না। কেউ যদি বিতর্ক তৈরি করতে চায়, করবে।
ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ধর্মেন্দ্র এ দিন বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পড়াশোনা-জানা ব্যক্তি বলেই জানি। শিক্ষামন্ত্রীর এই ধরনের শব্দ প্রয়োগ শোভা পায় না। এই ধরনের ভাষা ব্যবহার মানে রাজ্যের অপমান, বাংলার সভ্যতার অপমান।”
যে পাঁচ জন অন্তর্বর্তী উপাচার্য বৃহস্পতিবার ধর্মেন্দ্রের বৈঠকে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তা দত্ত দে, বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়, সংস্কৃত এবং বারাসত রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজকুমার কোঠারী, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশান্ত চক্রবর্তী। এ দিন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়ে শান্তা বলেন, ‘‘উনি একদম সঠিক কথা বলেছেন। এ আমারও মত! আমরা আজ পর্যন্ত কোনও দিন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে খারাপ ভাবে আক্রমণ করিনি! ওঁর অনুসারী উপাচার্যেরা অনেকেই প্রফেসর না হয়েও উপাচার্য হয়েছিলেন। আর এখন রাস্তায় নেমে রাজ্যপালের কালো হাত ভেঙে
দাও গুঁড়িয়ে দাও করছেন! এঁদের বিবেক নেই?’’
শান্তার আরও অভিযোগ, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্যেরা চূড়ান্ত নক্কারজনক ভাষায় মহিলা উপাচার্যদের আক্রমণ করছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কী রুচির পরিচয় এটা?’’ রাজকুমার বলেন, ‘‘ব্রাত্য বসু পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী। ওঁকে আমি সম্মান করি। এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ সোমার মন্তব্য, ‘‘আমি নিরুত্তর।’’ সুশান্ত বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রথীনের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। জবাব মেলেনি মেসেজের।
রাজ্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘শিক্ষকদের প্রতি এই ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত খারাপ রুচি ও মনোভাবের পরিচয়। শিক্ষামন্ত্রী নিজে শিক্ষক ছিলেন। তাই এমন এক জন এ রকম কথা বললে বিষয়টির অভিঘাত আরও বেশি হয়।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে যুক্ত মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী যদি উপাচার্য, যাঁরা আবার শিক্ষকও বটে, তাঁদের সম্বন্ধে এই রকম অসম্মানজনক মন্তব্য করেন, সেটি আসলে শিক্ষক সমাজকেই অপমান করা হয়।’’
এ দিন ব্রাত্য বলেন, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী, আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে ভাষায় আক্রমণ করা হয়, এ সেই তুলনায় কোনও কথাই নয়। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমরা বলতেই পারি। আমার যা মনে হয়েছে, লিখেছি। এ বার কেউ বিতর্ক করলে করবে! আমার আশ্চর্য লাগছে, অন্তর্বর্তী উপাচার্যেরা চলে যাচ্ছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে।’’
এক্স হ্যান্ডলে তাঁরই বক্তব্যের উল্লেখ করে ব্রাত্য বলেন, ‘‘ওখানেই শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। দেখুক কী ভাবে এখানে উচ্চ শিক্ষা ধ্বংস করা হচ্ছে। কী ভাবে বিজেপির দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। যে কেউ এখানে আসতেই পারেন। ধর্মেন্দ্র, জিতেন্দ্র, বীরেন্দ্র। আমাদের কিছু যায় আসে না। এ সবের কোনও প্রভাব পড়বে না।’’ তিনি জানিয়ে দেন, তাঁর বক্তব্য থেকে তিনি সরে আসবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy