Advertisement
১৯ মে ২০২৪

অশোকের মমতা-বন্দনায় অস্বস্তি বামে

আলোচনার টেবিলে ফিশ ফ্রাই বা ঝালমুড়ি, কোনওটাই ছিল না। তবু ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবীণ নেতা অশোক ঘোষের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্য-সাক্ষাৎ ঘিরে ফের বাম শিবিরে ফিরে এল ফিশ ফ্রাই বা ঝালমুড়ি-তত্ত্ব! ঘরছাড়া বাম সমর্থকদের ফেরানোর দাবি জানাতে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আতিথেয়তার ফিশ ফ্রাই গ্রহণ করে বামফ্রন্টের মধ্যেই প্রশ্নের মুখে প়ড়েছিলেন বিমান বসুরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

আলোচনার টেবিলে ফিশ ফ্রাই বা ঝালমুড়ি, কোনওটাই ছিল না। তবু ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবীণ নেতা অশোক ঘোষের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্য-সাক্ষাৎ ঘিরে ফের বাম শিবিরে ফিরে এল ফিশ ফ্রাই বা ঝালমুড়ি-তত্ত্ব! ঘরছাড়া বাম সমর্থকদের ফেরানোর দাবি জানাতে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আতিথেয়তার ফিশ ফ্রাই গ্রহণ করে বামফ্রন্টের মধ্যেই প্রশ্নের মুখে প়ড়েছিলেন বিমান বসুরা। মমতার সঙ্গে ঝালমুড়ি খাওয়ার পরে তাঁর গুণগানে মুখর হয়ে বিজেপি-র মধ্যে বির্তকে পড়েছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। এ বার একই রকম প্রশ্ন উঠেছে বর্ষীয়ান অশোকবাবুর মমতা-বন্দনাকে ঘিরেও!

বিধানসভা নির্বাচনের আগে বামেদের সঙ্গে শাসক তৃণমূলের লড়াই যখন তীব্র হচ্ছে, সেই সময়েই মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকের উচ্ছ্বাস নিচু তলার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করবে বলেই আশঙ্কা বাম শরিক দলের নেতৃত্বের একাংশের। এবং এই প্রশ্নে ফ ব-র অন্দরেও বিভাজন তীব্র! দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদক এবং দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বৃহস্পতিবারের অশোক-মমতা সাক্ষাতের পরেই ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘নেতারাই পতনের পথ দেখান...। বয়স যত বেশি, খাদ তত গভীর’! কারও নাম না করলেও উদয়নবাবুর তির কার দিকে, তা বুঝতে বাম শিবিরে কারও কোনও অসুবিধা হচ্ছে না! তার পরেই আবার উদয়নবাবুর ফেসবুক পেজে ফ ব-রই যুব লিগের তরফে পাল্টা পোস্ট করা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দলের প্রবীণ নেতার সৌজন্য বিনিময়কে ঘিরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বাম ঐক্যে ফাটল ধরানোর যে চেষ্টা চলছে, তা ধিক্কারযোগ্য!

বাম ঐক্যের কথা মাথায় রেখেই কেউ অবশ্য বর্ষীয়ান অশোকবাবুকে সরাসরি আক্রমণে যাচ্ছেন না। তবে সিপিআই, আরএসপি এবং সিপিএমের একাধিক নেতা বামফ্রন্টের অন্দরে বলছেন, ‘‘জন্মদিনের শুভেচ্ছা এবং সৌজন্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু সেই সাক্ষাৎকে ঘিরে মুখ্যমন্ত্রীকে মহান নেত্রী, ছোট বোন এবং নেতাজির আদর্শে বিশ্বাসী বলে তুলে ধরলে নিচু তলার লড়াইয়ে ভুল বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বৈকি!’’ উদয়নবাবুর ফেসবুক পোস্টের উপরে অনেক বাম সমর্থকও মন্তব্য করেছেন, অশোকবাবুর বয়সে আবেগের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন। তাই বেসামাল হয়ে কিছু কথা বেরিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে। এই জন্যই ৭০ বছরের পরে রাজনীতিকদের অবসর নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এমতাবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামতে হয়েছে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবুকেই। প্রশ্ন ওঠায় তিনি শুক্রবার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, অশোকবাবু রাজ্য রাজনীতিতে প্রবীণতম নেতা। তাঁর জন্মদিনে কেউ শুভেচ্ছা জানাতেই পারেন। তা ছাড়া, আগেও যখন মুখ্যমন্ত্রী অশোকবাবুর কাছে গিয়েছিলেন, তখন তো প্রশ্ন ওঠেনি! কিন্তু এ বারের ঘটনায় কি ভুল বার্তা যাচ্ছে না? অশোকবাবুকে আড়াল করে বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় না। যিনি গিয়েছিলেন (মমতা), তাঁর অনেক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিছু মুখোশ পরে থাকতে পারেন। তিনি কেন গিয়েছিলেন, তাঁকেই জিজ্ঞাসা করতে হবে!’’ প্রসঙ্গত, অশোকবাবুর রবিবারের ইফতারের আমন্ত্রণের ফোন পাওয়ার পরে এ দিন আলিমুদ্দিনে ১৭ বাম দলের বৈঠকে মমতা-বিতর্ক আর তোলেননি কোনও শরিক নেতাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE