E-Paper

বাড়ন্ত যক্ষ্মার ওষুধ, কেন্দ্রকে দুষছে রাজ্য

স্বাস্থ্যকর্তাদের অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা যক্ষ্মা রোগীদের অধিকাংশের ওষুধ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর টিবি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ০৯:০১
tuberculosis

—প্রতীকী ছবি।

রাজ্য জুড়ে যক্ষ্মা রোগের ওষুধের আকালের জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের গাফিলতি ও উদাসীনতার দিকে আঙুল তুলেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

স্বাস্থ্যকর্তাদের অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা যক্ষ্মা রোগীদের অধিকাংশের ওষুধ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর টিবি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের কথায়, ‘‘অতীব সমস্যাদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে একাধিক বার আমাদের কথা হয়েছে। আমরা স্থানীয় ভাবে ওষুধ কিনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে দরপত্র ডাকা হয়েছে।’’

যক্ষ্মার মতো সংক্রামক রোগের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ বলে দাবি করে আন্দোলনে নেমেছে চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার’। তাদের রাজ্য কমিটির নেতা চিকিৎসক বিপ্লব চন্দ্রের কথায়, ‘‘যক্ষ্মার ওষুধের সঙ্কটে এবং তা নিয়ে সরকারের উদাসীনতার কারণে শুধু জনস্বাস্থ্য নয়, মানবাধিকারেরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্র যে যক্ষ্মার ওষুধ সরবরাহ করতে পারবে না, তার আগাম কোনও বার্তা রাজ্যকে দেওয়া হয়নি। ওষুধের ভাঁড়ার যখন একেবারে তলানিতে তখনই স্বাস্থ্যমন্ত্রক তাদের ‘অপারগতা’র বিষয়টি খোলসা করে। ফলে চরম আতান্তরে পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, ১৮ মার্চ দিল্লি আচমকাই চিঠি দিয়ে জানায়, ‘অবাঞ্ছিত এবং বাহ্যিক’ কিছু কারণে যক্ষ্মার ওষুধ আপাতত সরবরাহ করা যাচ্ছে না। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর যেন স্থানীয় খোলা বাজার থেকে ‘লোকাল পারচেজ়’ করে নেয়। সরকার কিনতে না পারলে আপাতত রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনে নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয় ওই কেন্দ্রীয়-বার্তায়। সঙ্গে সান্ত্বনা ছিল— প্রেসক্রিপশন দেখালে সরকার ওই ওষুধ কেনার খরচ মিটিয়ে দেবে।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই চিঠি পেয়ে আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।’’

যক্ষ্মার চিকিৎসায় এখন ২ ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হয়। প্রথম দু’মাস খাওয়ানো হয় ‘৪ এফডিসি’। দ্বিতীয় পর্যায়ে চার মাস ধরে খাওয়ানো হয়, ‘৩ এফডিসি’। স্বাস্থ্য কর্তাদের অভিযোগ, মার্চে কেন্দ্র জানিয়েছিল, তারা ‘৩ এফডিসি’ আর সরবরাহ করতে পারবে না। আবার এপ্রিলের শেষে ভার্চুয়াল বৈঠকে তারা স্পষ্ট করে দেয়, ‘৪ এফডিসি’ ওষুধও আর দিতে পারবে না তারা। কেন্দ্র ওষুধ কিনতে প্রথমে ২ লক্ষ এবং পরে ৭ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা রাজ্যকে দিয়েছিল। অভিযোগ, তার পরেই হাত গুটিয়ে নেয়।

এমন বিপুল পরিমাণে যক্ষ্মার ওষুধ সরবরাহকারী কোনও সংস্থা খুঁজে পাওয়া রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের পক্ষে দুষ্কর হয়ে উঠেছে। খোলা বাজারেও ওষুধ মেলে নামমাত্র। তার উপর বেশি টাকার কেনাকাটা করতে হলে কোটেশন ও দরপত্র ডাকতে হয়। অভিযোগ, এই ডামাডোলে অসংখ্য রোগী ওষুধ পাচ্ছেন না।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি জরুরি ভিত্তিতে দরপত্র ডেকে আপাতত একটি সংস্থাকে ২৮ লক্ষ ‘৩ এফডিসি’ ওষুধ কেনার বরাত দেওয়া হয়েছে। যা ১০ জুনের আগে আসার সম্ভাবনা নেই। পাশাপাশি ২৩ লক্ষ ‘৪ এফডিসি’ ওষুধের জন্য অন্য একটি দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tuberculosis medicines Health West Bengal Central Government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy