Advertisement
১৮ মে ২০২৪

কর্ড ব্লাডের ব্যাঙ্ক হচ্ছে না এখনই

লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছে রাজ্য। কাজ চলছে অনেক দিন ধরে। তবু স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে চালু হয়নি কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক। সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব রাজেন্দ্র শুক্লকে কার্যত তিরস্কার করে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ০৫:১৮
Share: Save:

এথিক্যাল কমিটির অনুমোদনই মেলেনি, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন কর্ড ব্লাডের ব্যাঙ্ক চালু করে দিতে হবে যে ভাবে হোক। সে দিন সর্বসমক্ষে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কিছুই বলতে পারেননি স্বাস্থ্য সচিব। কিন্তু বুধবার তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, অনুমোদন ছাড়া কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু করা সম্ভবই নয় ।

লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছে রাজ্য। কাজ চলছে অনেক দিন ধরে। তবু স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে চালু হয়নি কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক। সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব রাজেন্দ্র শুক্লকে কার্যত তিরস্কার করে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ‘‘আপনারা আমাকে দিয়ে এক বছর আগে ট্রপিক্যালে কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক-এর উদ্বোধন করিয়েছেন, অথচ এখনও কেন বলতে পারছেন না, ওটা পুরোপুরি চালু হয়েছে?’’ তখনও স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছিলেন একই সমস্যার কথা। তাঁকে মাঝপথে থামিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমি কিছু শুনতে চাই না। সাত দিনের মধ্যে সব ক্লিয়ার করুন।’’

সাত দিনের সময়সীমা পেরিয়েছে গত ২ জুন। কিন্তু বুধবার স্বাস্থ্য সচিব জানিয়ে দিলেন, আপাতত ওই ব্যাঙ্ক পুরোপুরি চালু করার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ, ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর) এবং ‘ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া’র প্রয়োজনীয় অনুমোদনই মেলেনি। তাই ওই ব্যাঙ্কে এখন কর্ড ব্লাড থেকে স্টেম সেল তৈরি করে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। কিন্তু রোগীর শরীরে তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

২০১২ সালের এপ্রিল মাসে ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এ ঘটা করে চালু হয়েছিল ‘রিজেনারেটিভ মেডিসিন ও ট্রান্সলেশনাল সায়েন্সেস’ বিভাগ। ঘোষণা হয়েছিল, এর আওতাতেই চালু হবে কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক। এর জন্য দু’দফায় সাড়ে বারো লক্ষ টাকা ও পঁচিশ লক্ষ টাকা অনুমোদন করে রাজ্য।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এত বছরেও কেন প্রয়োজনীয় অনুমোদন জোগাড় করা গেল না? ব্যবহারই যদি না করা যায় তবে এত টাকাই বা খরচ হল কেন? স্বাস্থ্য সচিবের জবাব, ‘‘ও সব স্বাস্থ্য দফতর বুঝে নেবে।’’

রিজেনারেটিভ মেডিসিন বিভাগ তথা এই ব্যাঙ্কের প্রধান নিরঞ্জন ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর এই দায়িত্বে থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে অবসরের পরে তাঁর পুনর্নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি পাঠিয়েছেন বেহালা বিদ্যাসাগর হাসপাতালের সুপার উত্তম মজুমদার। তিনি জানান, খাতায়-কলমে নিরঞ্জনবাবু ছিলেন বেহালা হাসপাতালের সার্জন। বেতনও পেতেন সেখান থেকে। অথচ তাঁর পুনর্নিয়োগ হয়েছে ট্রপিক্যালের রিজেনারেটিভ মেডিসিনের প্রফেসার ও হেড হিসেবে। এটা বেআইনি। এই চিঠির কোনও উত্তর আসেনি। কিন্তু এর পরে খাতায়-কলমে এখনও কাজে যোগ দিতে পারেননি নিরঞ্জনবাবু। বেতনও পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে জট পাকিয়ে রয়েছে রিজেনারেটিভ মেডিসিন ও কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কের কাজকর্মে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE