পণ্ডিতিয়া রোডে আক্রান্তের আবাসনে স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: সুদীপ ঘোষ
মুখ্যমন্ত্রীর হিসেব, করোনা সংক্রমণের আবহে বিদেশ থেকে কলকাতায় এসেছেন ৯৫ হাজার মানুষ। এঁদের অনেকেই এসেছেন ব্রিটেন, ইটালি, স্পেন, চিন বা পশ্চিম এশিয়া থেকে। গত এক মাস ধরে বিদেশ-ফেরত মানুষই নবান্নের চিন্তা অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, কলকাতার প্রথম দু’জন করোনা-আক্রান্ত বিলেত থেকে ফিরেছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বিদেশ-ফেরত নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘দায়িত্বশীল হোন। যাঁরা ফিরেছেন, তাঁরা ১৪ দিন বাড়িতে থাকুন। কয়েক দিন বাড়িতে থাকলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। নিজে বাঁচুন, পরিবারকে বাঁচান। তাতে রাজ্য বাঁচবে। রাজ্য বাঁচলে দেশ বাঁচবে।’’
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত পশ্চিম এশিয়া ঘুরে কলকাতায় নেমেছেন ৬২৮ জন যাত্রী। তাঁদের সকলকেই কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও ব্যাঙ্কক থেকে আসা ১০ জন এমন যাত্রী ছিলেন, যাঁরা গত ১৫ দিনের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া গিয়েছিলেন। তাঁদেরও কোয়রান্টিন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা নিয়ে এ বার চিন্তা তৃতীয় জনকে ঘিরে
অভিযোগ, বিদেশ-ফেরতদের একাংশ ঘরবন্দি থাকছেন না। শুক্রবারেই বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের একটি আবাসনের বিলেত-ফেরত দুই মহিলা বাড়ির বাইরে ঘোরাফেরা করছিলেন। আবাসিকদের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তাঁদের মহামারী রোগ প্রতিরোধ আইনে তুলে এনে পরীক্ষা করায়। তাঁদের ১৪ দিনের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বরাহনগরে পুরসভার পক্ষ থেকে জেলাশাসকের কাছে বিদেশ-ফেরত তিন নাগরিকের বিরুদ্ধে এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ জানানো হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘কেন্দ্র কার্যকর করেছে বলে আমরাও রাজ্যে মহামারী রোগ আইন কার্যকর করেছি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে ওই আইনের আওতায় যা করার করা হবে।’’ কোয়রান্টিন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এনবিসিসি-তে এটা সাত তারা হোটেলের মতো। চার হাজার শয্যা রয়েছে। বাড়ির মতো ব্যবস্থা।’’ স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত ক’দিনের মধ্যে যাঁরা ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়া থেকে এসেছেন, তাঁদের ১৪ দিনই স্বেচ্ছা-গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হবে। অমান্য করলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
১২ ফেব্রুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিদেশ থেকে আসা ৯৬ জনের তালিকা পেয়েছে বিধাননগর পুরসভা। যদিও তার বাইরেও আরও কয়েক জনের সন্ধান মিলেছে। পুরসভার বক্তব্য, অনেকে বিদেশ থেকে এসে দেশের অন্য শহরে নামছেন। তার পরে দেশীয় উড়ানে কলকাতায় আসছেন। ফলে তাঁদের নাম আন্তর্জাতিক যাত্রীদের তালিকায় মিলছে না। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে তালিকা বহির্ভূত ৭ জনের সন্ধান মিলেছে। বাসিন্দাদের সূত্রে খবর পেয়ে পুরসভা তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছে। তাঁরা বাড়িতেই স্বেচ্ছাবন্দি রয়েছেন। শুক্রবার ২ নম্বর সেক্টরের একটি আবাসনে একটি তরুণী বিদেশ থেকে এসেছেন বলে জানতে পেরে বাসিন্দারা পুরসভাকে খবর দেন। পুরসভা ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে বলে জানিয়েছে।
করোনা-আক্রান্ত দেশ বা রাজ্য থেকে কেউ ফিরলেই তাঁর নাম নথিভুক্ত তৈরি করতে এসডিও এবং বিডিওদের নির্দেশ দিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক নিখিল নির্মল। ব্যক্তির নাম, এলাকার নাম, কোন দেশ বা কোন রাজ্য থেকে আসা, মোবাইল নম্বর, কোনও উপসর্গ মিলছে কি না, মিললে পদক্ষেপ করা হয়েছে কি না— এই সব তথ্য তালিকাভুক্ত করতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy