Advertisement
২০ মে ২০২৪
Coronavirus

কী করে কোভিড হল বাবার, বুঝছেন না পিতৃহারা কুন্তল

তেঘরিয়ার বাড়ি ছেড়ে কয়েক বছর আগে মার্কিন মুলুকে পাড়ি দিয়েছিলেন কুন্তল ও তাঁর স্ত্রী মিথিলা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৪:১৯
Share: Save:

নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখাতে বাবা-মাকে সাধ করে নিউ জার্সিতে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন ছেলে। নতুন বাড়ি দেখানোর ইচ্ছেও ছিল। কিন্তু করোনা-আতঙ্কের আবহে ঘরবন্দি হয়ে পড়ে পুরো পরিবার। সেই অবস্থাতেই সংক্রমণ ঘটে বৃদ্ধ বাবার। মারা গিয়েছেন তিনি। স্কাইপে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সাহায্য নিয়ে শ্রাদ্ধশান্তির কাজ সেরেছেন ছেলে কুন্তল রায়। আপাতত কুন্তলের পুরো পরিবার কোয়রান্টিনে।

তেঘরিয়ার বাড়ি ছেড়ে কয়েক বছর আগে মার্কিন মুলুকে পাড়ি দিয়েছিলেন কুন্তল ও তাঁর স্ত্রী মিথিলা। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন দম্পতি। বছরে একবার অন্তত ছেলের কাছে সস্ত্রীক যেতেন বছর চৌষট্টির স্বপন। এ বছর গিয়েছিলেন ফেব্রুয়ারি মাসে।

ইতিমধ্যে করোনার আতঙ্ক ঘনিয়ে আসে আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশে। কার্যত লকডাউন ঘোষণা হয় নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সিতে। কুন্তল জানান, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে তাঁদের বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দেয় অফিস। তাঁরা ক্যাম্পাসের মধ্যে একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। কুন্তল বলেন, “অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে টানা বন্দি থেকে সকলের দমবন্ধ লাগছিল। ২৬ মার্চ বাড়ি বদল করি। পর দিন একটি সংস্থা থেকে মালপত্র পৌঁছে দিয়ে যায়। সংস্থার কারও সঙ্গে আমাদের পরিবারের কারও দেখা হয়নি। পরে কিছু জিনিস স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আমি জীবাণুমুক্ত করে তবেই ঘরে ঢোকাই। তখন বাবা-মা এবং আমাদের ছোট্ট মেয়ে একটি ঘরে ছিল।”

কুন্তল জানান, এর দু’দিন পরে বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। চিকিৎসকের সঙ্গে ভিডিয়ো চ্যাটে কথা বলেন তাঁরা। জ্বর-কাশি বা অন্যান্য উপসর্গ না-থাকায় তিনি আশ্বস্ত করেন। এক দিন বাদে ফের শ্বাসকষ্টের উপসর্গ। কুন্তল বলেন, “৩০ মার্চ সকালের দিকে আমি আর স্ত্রী বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যাই। তত ক্ষণে শ্বাসকষ্ট আরও বেড়েছে। ভর্তি করানোর সময়ে বাবা জ্ঞান হারান। ঘণ্টা দু’য়েক পরে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, সব শেষ।”

পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, করোনা পজ়িটিভ ছিলেন স্বপন। ১৪ দিন হোম কোয়রান্টিনের নির্দেশ দেওয়া হয় কুন্তলদের।

এক দিকে পিতৃশোক, তার উপরে সৎকার কী ভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন কুন্তল। এই সময়ে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাঙালিরা। প্রশাসন থেকেই বাক্সবন্দি দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শ্রাদ্ধের জন্য পুরোহিত জিনিসপত্রের তালিকা করে দেন। সে সব জিনিস পাওয়া যায় ইন্ডিয়ান স্টোরে। কিন্তু সে তো বন্ধ। কুন্তল জানান, তাঁর বন্ধুরা দোকান খুলিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে জিনিসপত্র কিনে বাড়ির দরজার সামনে রেখে গিয়েছিলেন। শুক্রবার নিজের বাড়িতে বাবার শ্রাদ্ধ করেছেন কুন্তল। স্থানীয় ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সাহায্যে শ্রাদ্ধ হয়েছে স্কাইপে।

কী ভাবে সংক্রমিত হলেন বাবা, ভেবে কিনারা পাচ্ছেন না সদ্য পিতৃহারা কুন্তল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid-19 Covid-19 Death Tegharia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE