Advertisement
E-Paper

প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বে লন্ডনের কর্পোরেট বস্‌, চমকে যাচ্ছে দিল্লিও

রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক করতে গত সপ্তাহেই দিল্লি গিয়েছিলেন সোমেন মিত্র। ২০ ডিসেম্বর বৈঠক করবেন বলে ১৯ তারিখই দিল্লি পৌঁছেছিলেন সোমেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:২০
মিতা চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র।

মিতা চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র।

দল ক্ষমতার বাইরে ৪২ বছর। পিছু হঠতে হঠতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকার দশা নয়, দেওয়াল ফুঁড়ে বাইরে ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কা। ২০ বছর পরে সেই পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিত্ব ফিরে পেয়ে সোমেন মিত্র ঘরটা নিজের মতো করে গোছানোর চেষ্টা করতেই ঘরোয়া কোন্দল তিক্ততার শিখরে। তার মধ্যেই হঠাৎ উজ্জ্বল প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেল। ফেসবুক-টুইটারে প্রতিপক্ষকে টক্কর দিতে লন্ডন থেকে যাঁকে প্রায় উড়িয়ে এনেছেন সোমেন, সেই আইটি শিল্পপতি মিতা চক্রবর্তী বদলে দিচ্ছেন সেলের খোলনলচে।

চলতি মাসের ৪ তারিখ প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের দায়িত্ব পেয়েছেন মিতা। তাঁর আগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন, সেই অনুপম ঘোষ দল ছেড়ে এখন বিজেপি-তে। শূন্যস্থান পূরণের জন্য উপযুক্ত লোক খুঁজতে গিয়েই দলের আর এক শাখা সংগঠন প্রফেশনালস’ কংগ্রেসে নজর পড়ে সোমেন মিত্রের। প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের নতুন ইনচার্জ হিসেবে মিতা চক্রবর্তীর নাম প্রস্তাব করে তাঁর বিশদ প্রোফাইল দিল্লিতে পাঠিয়ে দেন সোমেন। জাতীয় কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া ইনচার্জ দিব্যা স্পন্দনাও সে প্রোফাইল দেখে আর দ্বিরুক্তি করেননি। সিলমোহর দিয়ে দিয়েছেন সোমেন মিত্রের প্রস্তাবেই।

রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক করতে গত সপ্তাহেই দিল্লি গিয়েছিলেন সোমেন মিত্র। ২০ ডিসেম্বর বৈঠক করবেন বলে ১৯ তারিখই দিল্লি পৌঁছেছিলেন সোমেন। কিন্তু রাহুল শিমলায় থাকায় বৈঠকের জন্য ২২ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় সোমেন মিত্রকে। মিতা চক্রবর্তীকে কিন্তু ততটা অপেক্ষা করতে হয়নি জাতীয় কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া ইনচার্জের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য। ২১ ডিসেম্বর সকালেই মিতার সঙ্গে বৈঠক সেরে নেন দিব্যা স্পন্দনা। পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেল গত কয়েক সপ্তাহে ঠিক কী ভাবে এগিয়েছে, তার রিপোর্ট নিয়ে দিব্যা বেশ খুশি বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। অতএব খুশি মিতাও।

মিতা চক্রবর্তীর নিয়োগ এক রকম অপ্রত্যাশিতই।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: বড়সড় ফিদায়েঁ হামলার ছক বানচাল, ১০ জনকে গ্রেফতার করল এনআইএ, উদ্ধার বিস্ফোরক​

২০১৪ সালে বিজেপির বিপুল বিজয়ের পর থেকে দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই কংগ্রেসের সংগঠনে শোচনীয় ক্ষয় হয়েছে। যে রাজ্যগুলিতে কংগ্রেস এখনও উল্লেখযোগ্য ভাবে শক্তিশালী, পশ্চিমবঙ্গ সে তালিকার ধারেকাছেও আসে না। এ হেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের দায়িত্ব নেবেন লন্ডনে নিজের সংস্থা গড়ে তোলা কর্পোরেট, এমনটা বেশ অপ্রত্যাশিতই ছিল দিব্যা স্পন্দনাদের কাছেও। স্বাভাবিক ভাবেই মিতা চক্রবর্তীকে নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে উৎসাহ এখন উল্লেখযোগ্য।

কিন্তু কেন এলেন মিতা? নিজের সংস্থার কাজে বছরভর লন্ডন-কলকাতা করতে থাকা মিতা এত ব্যস্ততার মাঝে কেন পশ্চিমবঙ্গের ভগ্নপ্রায় কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের দায়িত্ব নিলেন? মিতা জানালেন, বরাবর কংগ্রেসের সঙ্গেই ছিলেন, তাই কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেল সামলানোর প্রস্তাব পেয়ে প্রত্যাখ্যান করার কোনও কারণই ছিল না।

তা হলে কি রাজনীতির সঙ্গে অনেক দিনের যোগ মিতার? প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া ইনচার্জ বললেন, ‘‘না, সরাসরি কোনও যোগ ছিল না রাজনীতির সঙ্গে। প্রথমে পড়াশোনা, তার পরে কর্মসূত্রে বিদেশে চলে যাওয়া, অবশেষে বিদেশেই নিজের সংস্থা তৈরি করা। বুঝতেই পারছেন, প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে থাকার সুযোগ হয়নি। কিন্তু পারিবারিক ভাবেই তো আমি কংগ্রেসের সঙ্গে। আমার বাবা পেশায় আইনজীবী ছিলেন। আইনজীবী সংগঠনের নেতা ছিলেন এবং এআইসিসি সদস্য ছিলেন। সুতরাং প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে থাকি বা না থাকি, কংগ্রেসেই ছিলাম। সেই দীর্ঘ যোগসূত্র থেকেই সাগ্রহে দায়িত্ব নিয়েছি।’’

আরও পড়ুন: একমাত্র বাংলাতেই গণতন্ত্র নেই, মমতা এখন কিম জঙ-উন, তোপ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর​

চলতি বছরেই শশী তারুরকে মাথায় বসিয়ে প্রফেশনালস’ কংগ্রেস তৈরি করেছেন রাহুল গাঁধী। বিভিন্ন ক্ষেত্রের উজ্জ্বল পেশাদারদের সেই সংগঠনে সামিল করার চেষ্টা করেছেন। কংগ্রেসের সেই প্রয়াসই অন্য অনেক সফল পেশাদারের মতো মিতা চক্রবর্তীকেও সরাসরি নিয়ে যায় কংগ্রেসের ছাতার তলায়। তখন অবশ্য অধীর চৌধুরী ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। সোমেন জমানা শুরুর পরে আরও বড় দায়িত্ব পেয়ে গেলেন মিতা।

দায়িত্ব নিয়েই পেশাদারিত্বের ছাপ স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলেছেন সংগঠনে। প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া টিমকে দু’ভাগে ভেঙে দিয়েছেন তিনি— কনটেন্ট টিম এবং টেকনিক্যাল টিম। ফেসবুক-টুইটারে কী পোস্ট হবে, কখন হবে, পোস্ট বা টুইটের বয়ান কী হবে, কোন বিষয়কে বেশি করে তুলে ধরতে হবে, প্রতিপক্ষের কোন প্রশ্নের জবাব কতটা জোরদার ভঙ্গিতে দেওয়া হবে— সে সব দেখভাল করছে কনটেন্ট টিম। তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত খুঁটিনাটি সামলাচ্ছে টেকনিক্যাল টিম।

রাজ্যকে চারটি জোনে ভাগ করে জোনাল কোঅর্ডিনেটর নিয়োগ করেছে প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেল। জোনাল কোঅর্ডিনেটরদের অধীনে কাজ করছে জেলা কোঅর্ডিনেটররা। তাঁদের উপরে আবার দায়িত্ব থাকছে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে সোশ্যাল মিডিয়া টিম গড়ে দেওয়ার। প্রত্যেক কোঅর্ডিনেটরের সঙ্গে আবার থাকছে তাঁর নিজস্ব একটি করে টিমও।

‘‘রাজনৈতিক কথা সাদামাটা ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরে খুব বেশি ছাপ ফেলা যায় না। ছাপ ফেলার জন্য একটু ধারালো কনটেন্টের দরকার হয়। আমরা সেই চেষ্টাটাই করছি। কনটেন্টের মধ্যে একটু হিউমার বা একটু স্যাটায়ার আনার চেষ্টা করছি,’’—বললেন মিতা। সেই ধারালো প্রচার ছাপ ফেলতে শুরু করেছে বলেও বিধান ভবনের দাবি। গত দু’সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের ফেসবুক এবং টুইটার হ্যান্ডলের ফলোয়ারের সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে, বেড়েছে এনগেজমেন্টও— বলছে কংগ্রেস। ধারে এবং ভারে মিতা চক্রবর্তী বেশ বেগ দেবেন বাংলার অন্য দলগুলির সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের, আশা বিধান ভবনের।

Indian Politics West Bengal Congres Rahul Gandhi Somendranath Mitra Mita Chakraborty Social Media
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy