Advertisement
১৮ মে ২০২৪
সমবায়

আইন সংশোধনের যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন শাসক দলেই

কিছু কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও বিরোধীরা সমবায় আইনের সংশোধনী মোটামুটি সমর্থন করেছেন। কিন্তু ওই সংশোধনী ঘিরে বিধানসভায় বিরোধিতার সুর শোনা গেল শাসক দলের অন্দরেই। এবং সেই বিরোধিতাটা এল খোদ সমবায়মন্ত্রীর জেলার এক তৃণমূল বিধায়কের কাছে থেকেই। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় ২০০৬ সালের সমবায় আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় সংশোধনী আনা হয়। ওই সংশোধনীতে যে-সব প্রসঙ্গ আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে সমবায় আইনের আওতায় আনা, সমবায় সমিতির বার্ষিক অডিট রিপোর্ট পেশের জন্য ছ’মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া, অডিটের জন্য সমবায় সমিতির উপরে অডিট অফিসারের কর্তৃত্ব বহাল করা, সমবায় সমিতির হাত থেকে কর্মী নিয়োগের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া ইত্যাদি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৫ ০৩:৪০
Share: Save:

কিছু কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও বিরোধীরা সমবায় আইনের সংশোধনী মোটামুটি সমর্থন করেছেন। কিন্তু ওই সংশোধনী ঘিরে বিধানসভায় বিরোধিতার সুর শোনা গেল শাসক দলের অন্দরেই। এবং সেই বিরোধিতাটা এল খোদ সমবায়মন্ত্রীর জেলার এক তৃণমূল বিধায়কের কাছে থেকেই।

বৃহস্পতিবার বিধানসভায় ২০০৬ সালের সমবায় আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় সংশোধনী আনা হয়। ওই সংশোধনীতে যে-সব প্রসঙ্গ আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে সমবায় আইনের আওতায় আনা, সমবায় সমিতির বার্ষিক অডিট রিপোর্ট পেশের জন্য ছ’মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া, অডিটের জন্য সমবায় সমিতির উপরে অডিট অফিসারের কর্তৃত্ব বহাল করা, সমবায় সমিতির হাত থেকে কর্মী নিয়োগের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া ইত্যাদি।

বাম বিধায়ক প্রবোধচন্দ্র সিংহ ওই সব সংশোধনী কার্যত সমর্থনই করেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে সমবায় সমিতির মর্যাদা দেওয়ার প্রশংসা করেন কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা। তবে কিছু সমবায় সমিতির দুর্নীতি নিয়ে সরব হন তিনি। তাঁর বক্তব্য, সরকার সমবায় সমিতিগুলির উপরে ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণ রাখতে না-পারায় নানা দুর্নীতি বাসা বাঁধছে।

বাম এবং অ-বাম বিরোধীরা এ ভাবে সংশোধনী সমর্থন করলেও সমবায়মন্ত্রী জ্যোতির্ময় করের নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমরেশ দাসের গলাতেই বিরোধিতার সুর শোনা যায়। বলাগেড়িয়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান তথা এগরার বিধায়ক সমরেশবাবু বলেন, ‘‘শাসক দলে আছি, তাই এই বিল সমর্থন করতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে নানা প্রশ্ন রয়েছে আমার। কেন্দ্রীয় সরকার এবং নাবার্ডের সঙ্গে চুক্তি করে সমবায় আইন চালু হয়েছিল। এখন তা একতরফা ভাবে সংশোধন করা যায় কি না, মন্ত্রীমশাই সেটা যেন যাচাই করেন।’’ কর্মী নিয়োগ এবং অডিট প্রসঙ্গে সংশোধনীগুলির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

জবাবি ভাষণে মন্ত্রী অবশ্য বলেন, ‘‘সমবায় সমিতির গণতান্ত্রিক অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু কোনও ভাবেই ব্যভিচার করতে দেব না। সেই লক্ষ্যেই নানান সংশোধনী আনা হচ্ছে।’’ মন্ত্রীর বক্তব্য, সমবায় সমিতিগুলিকে স্বাধীনতার নামে সীমাহীন স্বেচ্ছাচারের অধিকার দিতে চায় না সরকার। সেই কারণেই অডিট, নিয়োগ ও গচ্ছিত আমানত বিনিয়োগের ব্যাপারে কিছু নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। সমবায়ে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যেই এটা করা হচ্ছে।

মন্ত্রী যা-ই বলুন, বিরোধিতার সুর শুধু শাসক দলের অন্দরেই সীমাবদ্ধ নেই। এ রাজ্যে সমবায় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এই সংশোধনী বেআইনি বলে অভিযোগ করেছেন। রাজ্য কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকার এই সংশোধনী এনে সমবায় ক্ষেত্রে যে-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল, তা ধ্বংস করে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছে। আশা করব, রাজ্যপাল এই বিল অনুমোদন করবেন না।’’

তাঁরা এমনটা মনে করছেন কেন?

অশোকবাবু জানান, ২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার, নাবার্ড এবং রাজ্য সরকার চুক্তি (মউ) করে মডেল সমবায় আইন পাশ করতে সম্মত হয়েছিল। তাতে একটি বিশেষ ধারায় (১৩৪সি) সমবায় সমিতিকে বেশ কিছু ক্ষমতা এবং আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। সমবায় ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্দেশ্যে বৈদ্যনাথন কমিটির সুপারিশ মেনেই এই আইন তৈরি হয়। ফলে চুক্তি অনুযায়ী এই আইনে কোনও রকম সংশোধন করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকার এবং নাবার্ডের সম্মতি প্রয়োজন। সেই নিয়মের তোয়াক্কা না-করে যে-ভাবে সমবায় সমিতিগুলির ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, তা বেআইনি।

সমবায়মন্ত্রী অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘মউয়ের শর্ত অনুযায়ী সমবায় সমিতির উন্নয়নে কেন্দ্রের ১৯৪ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এক টাকাও মেলেনি। অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাডু, কর্নাটক ইতিমধ্যেই আইন সংশোধন করেছে। ফলে এই সংশোধনী নিয়ে আইনি জটিলতার অবকাশ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE