Advertisement
১৫ মে ২০২৪
মেডিক্যাল-কাউন্সেলিং

ভর্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ, ক্ষোভ অভিভাবক-ছাত্রদের

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ দিয়ে বেসরকারি কলেজগুলির কাউন্সেলিং শুরু হল শনিবার সকাল থেকে। আর সেই সঙ্গেই প্রকাশ্যে এল দুর্নীতির অভিযোগ ও বিক্ষোভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০৬
Share: Save:

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ দিয়ে বেসরকারি কলেজগুলির কাউন্সেলিং শুরু হল শনিবার সকাল থেকে। আর সেই সঙ্গেই প্রকাশ্যে এল দুর্নীতির অভিযোগ ও বিক্ষোভ।

কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের তরফে শুক্রবার সন্ধেয় এ বছর সুযোগ পাওয়া পড়ুয়াদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয় অনলাইনে। কথামতো কাউন্সেলিং এবং ভর্তির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছিল শনিবার সকাল থেকে। কিন্তু ভর্তি পদ্ধতিতে গরমিল এবং টাকার খেলার অভিযোগ তুলে সেখানে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বহু পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকেরা। কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। অভিভাবকেরা ‘কেপিসি ফাইটারস’ নামে একটি গোষ্ঠীও তৈরি করে ফেলেন।

অভিযোগ, ভর্তির ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশিকা মানছে না এই কলেজ। ইচ্ছা মতো ‘ফার্স্ট কাম ফার্স্ট সার্ভ’ পদ্ধতিতে ভর্তি করাচ্ছে। তার উপর আগে আসা সত্ত্বেও তালিকায় নাম ওঠেনি, এমন ঘটনাও ঘটছে। মেধা-তালিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে ভর্তি করা হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকেরা।

তাঁদের তরফে পরশুরামন জয়শঙ্কর জানান, তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কারণ, তাঁদের ছেলেমেয়েরা মেধা-তালিকায় অনেক ওপরের দিকে থেকেও ওই কলেজে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না ‘আগে এলে আগে ভর্তি’-র বিচিত্র নিয়মে। আর এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘বাংলায় প্রবাদ আছে ‘আগে গেলে বাঘে খায়’। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে ‘আগে গেলে সিট পায়’।’’

যদিও এই ‘আগে এলে আগে ভর্তি’-ও কতটা নিয়ম মেনে হচ্ছে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। যেমন বিপ্লব মৈত্র নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমার মেয়ের নিট-এ র‌্যাঙ্ক ২৮০০০। তবুও পায়নি। ২৭ তারিখ বেলা ১১টায় ওয়েবসাইটে নোটিসটা পড়ে। ১২টার মধ্যে পৌঁছে যাই। আমার আগে মাত্র তিন জন ছিলেন। তিন হাজার টাকা দিয়ে ফর্ম ফিল আপ করি। কিন্তু শুক্রবার তালিকা বেরোনোর পরে অবাক হয়ে যাই। তালিকায় ওর নাম নেই।’’

রাজ্যের মেডিক্যাল শিক্ষার এই প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য দফতর কি দর্শক হয়েই থেকে যাবে? রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ব্যাপারটা শুনেছি। মামলা হলে আদালতেই যা বলার বলব।’’

এ দিন সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট থেকে কলেজে কাউন্সেলিং শুরু হয়। তার অনেক আগেই বিক্ষুব্ধ পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা হাসপাতালের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি, কাউন্সেলিং ও ভর্তির প্রক্রিয়া বন্ধ হোক। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, সেটা সম্ভব নয়। অভিভাবকেরা মানতে না চাইলে তাঁদের ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কলেজ চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, বচসা, হাতাহাতি চলছে। এক জন অভিভাবকের মাথা থেকে রক্ত পড়ছে। চার দিকে ছড়িয়ে রয়েছে কাগজপত্র। কড়া পুলিশ প্রহরায় ঘেরা চত্বর। কেপিসি-র পড়ুয়াদেরও পরিচয়পত্র দেখিয়ে ঢুকতে হচ্ছিল।

ভর্তির সুযোগ পাওয়া পড়ুয়াদের তালিকায় দেখা যায়, সব শেষে ৭৭ নম্বরে যে পড়ুয়া রয়েছেন, নিট-এ তাঁর র‌্যাঙ্ক ১,৭৪,৪৬৮। আর পয়লা নম্বরে যাঁর নাম, তাঁর র‌্যাঙ্ক ৪,৩৯৬। শুক্রবারেই ৫৮ জনের একটি ‘ওয়েটিং লিস্ট’-ও প্রকাশিত হয়। সেখানে সব শেষে যিনি রয়েছেন তাঁর র‌্যাঙ্ক ৪১২৯৪। এ ছাড়াও চার থেকে সাত হাজারের মধ্যে র‌্যাঙ্ক এমন অনেকেই রয়েছেন এই ওয়েটিং লিস্টে।

দুপুরে অভিভাবকদের কয়েক জন প্রতিনিধি অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করতে যান। পরে তাঁদের তরফে জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আগে এলে আগে সিট’-এর এই সিদ্ধান্ত থেকে তাঁরা সরবেন না। তা হলে যাঁরা কলকাতার বাসিন্দা নন, দূরে থাকেন, তাঁরা কি ভর্তির সুযোগ পাবেন না?’’ প্রশ্ন উঠেছে, যে কলেজের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা, সেখানেই নিজেদের সন্তানকে ভর্তির জন্য এমন মরিয়া হয়ে উঠেছেন কেন? স্পষ্ট ব্যাখ্যা অভিভাবকরা দিতে পারেননি।

কেপিসি-র অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থবাবু বলেন, ‘‘যাঁরা সুযোগ পাননি তাঁদের অনেকে এসে ভাঙচুর করেছেন হাসপাতালে। আমাদের কিছু কর্মী আহত হয়েছেন। কিন্তু সব কিছুর মধ্যেও আমাদের কাজ চলছে।’’

প্রশ্ন ছিল, কোন যুক্তিতে মেধা-তালিকায় নীচের দিকে থাকা ছেলেমেয়েরা, তালিকার ওপরের দিকের ছেলেমেয়েদের টপকে তাঁদের কলেজের তালিকায় স্থান পেয়েছেন? উত্তরে তিনি ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন কেটে দেন।

এ দিন দুই আইপিএস অফিসারকেও কলেজ চত্বরে দেখা যায়। এঁরা অবশ্য উর্দিতে ছিলেন না। এঁদের সন্তানেরা এ বছর কেপিসি-তে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। ভর্তির ক্ষেত্রে এমন ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ কি তাঁরা জানেন?

এঁদের এক জন, আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) অজেয় রাণাডে বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে ভর্তি করিয়েছি। নিট-এ ওর র‌্যাঙ্ক ৪৬,৭২৩। ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে কী অভিযোগ উঠছে আমার জানা নেই। আমি পদ্ধতি মেনেই ফর্ম ফিল আপ করেছিলাম। শুক্রবার তালিকা প্রকাশিত হতে দেখলাম, ২৭ নম্বরে নাম আছে।’’ অন্য জন, আইজি আইবি (সীমান্ত) নীরজ সিংহ তাঁর মেয়েকে ভর্তি করাতে এসেছিলেন। তিনি অবশ্য ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

medical college
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE