Advertisement
E-Paper

ভুয়ো শিবিরের আড়ালে ত্রাণ উধাও, নালিশ

প্রশাসনের তালিকায় নাম রয়েছে ত্রাণশিবির হিসেবে। বাস্তবে সে শিবিরের অস্তিত্ব নেই। দুর্যোগের পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিঙে এমনই বেশ কিছু ভুয়ো শিবির খুলে শাসক দলের লোকজন ত্রাণের মাল সরিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব সে অভিযোগ মানতে নারাজ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৯

প্রশাসনের তালিকায় নাম রয়েছে ত্রাণশিবির হিসেবে। বাস্তবে সে শিবিরের অস্তিত্ব নেই। দুর্যোগের পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিঙে এমনই বেশ কিছু ভুয়ো শিবির খুলে শাসক দলের লোকজন ত্রাণের মাল সরিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব সে অভিযোগ মানতে নারাজ।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, ক্যানিং-১ ব্লকে দু’টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। ক্যানিং-২ ব্লকে ৮২টি ত্রাণশিবির চলছে। তাদের মধ্যে বাসন্তী বিধানসভা কেন্দ্রের আঠারোবাঁকি পঞ্চায়েতের হেদিয়া প্রাইমারি স্কুলে একটি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে বলে সরকারি নথিতে উল্লেখ রয়েছে। সে শিবিরে ৮০ জন মহিলা, ১০০টি শিশু, ১২০ জন পুরুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলেও জানাচ্ছে সরকারি নথি।

কিন্তু হেদিয়া গ্রামের ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, অন্য ছবি। সেখানে স্কুলের শিক্ষকেরা এসেছেন, পড়ুয়ারা গরহাজির। প্রধানশিক্ষক সুকুমার মাহাতো জানান, দুর্যোগের জন্য ৩১ জুলাই থেকে ৩ অগস্ট, সোমবার পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল। স্কুল খুলেছে মঙ্গলবার। কিন্তু গ্রামের রাস্তায় এখনও জল রয়েছে বলে পড়ুয়ারা আসছে না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্কুলে ত্রাণশিবির খোলা হলে নিশ্চয় জানতাম। প্রশাসন জানাত। কিন্তু তেমন কিছু জানি না।’’

হেদিয়া গ্রামের রাস্তায় এখনও এক হাঁটু জল। অনেকের ঘরেও জল ঢুকেছে। কোলে বাচ্চা, মাথায় সব্জির ঝুড়ি চাপিয়ে চলাচল করছেন গ্রামবাসী। তাঁদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, গত শুক্র-শনিবার দুর্যোগের প্রাথমিক ঝাপটার পরে গ্রামের রাস্তায় প্রায় এক কোমর জল দাঁড়িয়েছিল। তার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রশাসনিক কোনও সাহায্য পাননি গ্রামবাসী। ত্রাণশিবির তো দূরের কথা। যদিও সংশ্লিষ্ট আঠারোবাঁকি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের জালাল সর্দারের দাবি, ওই স্কুলে ত্রাণশিবির খোলা হয়েছিল। জল কমে যাওয়ায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এই সুবাদেই বাসন্তীর আরএসপি বিধায়ক সুভাষ নস্করের অভিযোগ, ‘‘ক্যানিং-২ ব্লকে অনেক ত্রাণশিবিরের বাস্তব অস্তিত্ব নেই। দুর্গতদের নাম করে প্রশাসন যে ত্রাণ বরাদ্দ করছে, তা অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে শাসক দলের লোকজন।’’ আরএসপি-র স্থানীয় নেতাদের দাবি, সরকারি ভাবে প্রতিটি ত্রাণশিবিরের দায়িত্বে থাকার কথা এক জন ‘নোডাল’ অফিসারের। প্রশাসন সূত্রে হেদিয়া গ্রামের ওই শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যে আধিকারিক রয়েছেন, তাঁর মোবাইল নম্বর জোগাড় করে একাধিক বার ফোন করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সে ফোন কেউ ধরেনি। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে আনন্দবাজারেরও। প্রশাসনের কাছে আরএসপি-র দাবি, বিষয়টি বিশদে তদন্ত করে দেখা হোক।

মহকুমাশাসক (ক্যানিং) প্রদীপ আচার্য বলেন, ‘‘ভুয়ো ত্রাণশিবির চলছে বলে জানা নেই। খোঁজ নিতে হবে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের ক্যানিং ২ ব্লক সভাপতি সওকত মোল্লা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘হেদিয়া গ্রামের দুর্গতেরা বাড়ি ফিরে যাওয়ায় শিবির বন্ধ করা হয়েছে। হতে পারে, সে কথা সরকারি খাতায় তোলা হয়নি। তৃণমূল দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের জন্য বরাদ্দ ত্রাণ সরায়নি। বিরোধীরা রাজনীতি করছেন।’’

ত্রাণবণ্টন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে রাজনীতি-গন্ধী কোনও প্রশ্নই যে শাসক দলের পছন্দ নয়, বুধবার সে ইঙ্গিত মিলেছে হুগলির সিঙ্গুরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যাওয়া রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেও। সিঙ্গুরের তুলনায় জল জমে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আরামবাগ মহকুমার খানাকুল, গোঘাট, পুরশুড়ার মতো ব্লকগুলির। সে সব জায়গায় না গিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব সিঙ্গুরে গেলেন কি বিশেষ বার্তা দিতে? পার্থবাবুর জবাব, ‘‘সিঙ্গুর গেলাম, না নদিয়ায়, সেটা বড় কথা নয়। মুখ্যমন্ত্রী সামনে দাঁড়িয়ে বন্যার মোকাবিলা করছেন। মানুষ দেখছেন, কী ভাবে এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি সামলাচ্ছি আমরা।’’

তবে মন্ত্রীরা জেলায় ঘুরলেও কাজের কাজ কত দূর হচ্ছে সে প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। এ দিনই দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায় গিয়েছিলেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী—অরূপ বিশ্বাস, গিয়াসউদ্দিন মোল্লা ও মন্টুরাম পাখিরা। অথচ, অতিবৃষ্টির জেরে বাঁধ ভেঙে যে এলাকায় কয়েকশো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, সেই মৌসুনি দ্বীপে তাঁরা না যাওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। মৌসুনি পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান শেখ ইলিয়াস বলেন, ‘‘এলাকাবাসী ভেবেছিলেন, মন্ত্রীরা এলে তাঁদের দেখাবেন কী ভাবে নদীবাঁধ ভেঙে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কেউ এলেন না!’’ অরূপবাবু পরে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে মৌসুনি দ্বীপের সমস্যার দিকে নজর দিতে বলেছি।’’ মৌসুনি সিপিএম-প্রভাবিত এলাকা বলে সেখানে ত্রাণ বিলিতে রাজনীতির রং দেখার অভিযোগও উঠেছে। তবে অরূপবাবুর দাবি, ‘‘ওই অভিযোগ সংবাদমাধ্যমের তৈরি।’’

বন্যার জলে ডুবে এ দিন হুগলির জাঙ্গিপাড়ায় কালীপদ দাস (১৮) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে জলে ভেসে নিখোঁজ এক ছাত্র-সহ দু’জন।

Corruption RSP Subhas Naskar teacher Arup Biswas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy