Advertisement
E-Paper

অম্বিকেশদের ক্ষতিপূরণ দিতে বলল হাইকোর্ট, জরিমানাও

ব্যঙ্গচিত্র কাণ্ডেও কলকাতা হাইকোর্টে এ বার বড়সড় ধাক্কা খেয়ে মুখ পোড়াল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ না-মানায় রাজ্যকে জরিমানাও করেছে হাইকোর্ট। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র ও তাঁর প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্তকে গ্রেফতারের ঘটনায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ মানেনি রাজ্য। সেই সুপারিশ মেনে নিতে রাজ্যকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত মঙ্গলবার রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী অম্বিকেশ মহাপাত্র ও সুব্রত সেনগুপ্তকে এক মাসের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫১

ব্যঙ্গচিত্র কাণ্ডেও কলকাতা হাইকোর্টে এ বার বড়সড় ধাক্কা খেয়ে মুখ পোড়াল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ না-মানায় রাজ্যকে জরিমানাও করেছে হাইকোর্ট।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র ও তাঁর প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্তকে গ্রেফতারের ঘটনায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ মানেনি রাজ্য। সেই সুপারিশ মেনে নিতে রাজ্যকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত মঙ্গলবার রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী অম্বিকেশ মহাপাত্র ও সুব্রত সেনগুপ্তকে এক মাসের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ না-মানায় রাজ্যকে আরও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত। একই সঙ্গে পূর্ব যাদবপুর থানার অতিরিক্ত ওসি মিলন দাস এবং তদন্তকারী অফিসার সঞ্জয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার যে সুপারিশ মানবাধিকার কমিশন করেছিল, তা-ও বহাল রেখেছে হাইকোর্ট।

মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণ না-পেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বেলপাহাড়ির শিলাদিত্য চৌধুরীও। হাইকোর্টের এই রায়ের পর সে মামলাতেও রাজ্য সরকার হারের মুখ দেখতে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।

জরিমানা হওয়ার পরে রাজ্য সরকার কি হাইকোর্টের এই রায় মেনে নেবে? নবান্ন সূত্রের খবর, ভাঙলেও মচকাবো না রাজ্য সরকার এখনও এই নীতিতেই অনড় রয়েছে। নবান্নের এক কর্তা বলেন, “রায়ের কপি হাতে পেলে আমরা তা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। এর পর তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উনি চাইলে এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করা হতে পারে।”

২০১২ সালের ১২ এপ্রিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক অম্বিকেশবাবু নিজেদের সমবায় আবাসনের ‘ই-মেল’ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনেশ ত্রিবেদী এবং মুকুল রায়কে নিয়ে তৈরি একটি ব্যঙ্গচিত্র অনেককে ফরোয়ার্ড করেছিলেন। এর পর মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানহানি করার অভিযোগ তুলে ওই রাতেই এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একাংশ অম্বিকেশবাবুর উপরে হামলা চালায়। অম্বিকেশবাবুর অভিযোগ অনুযায়ী, হামলাকারীরা তাঁকে মারধর করে। এর মধ্যেই ঘটনাস্থলে পূর্ব যাদবপুর থানার পুলিশ আসে। অম্বিকেশবাবুর অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে রক্ষা করার বদলে তৃণমূল কর্মীদের কথা শুনে তাঁকে এবং ওই সমবায় আবাসনের সভাপতি বৃদ্ধ সুব্রতবাবুকে পূর্ব যাদবপুর থানায় নিয়ে যায়। সেখানে দীর্ঘ ক্ষণ তাঁদের বসিয়ে রাখা হয়। পরে তৃণমূলের চকবেড়িয়া ছিটনয়াবাদ আঞ্চলিক কমিটির সদস্য অমিত সর্দার ওই দু’জনের নামেও থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রাত ১২টার পরে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হলেও তাঁদের সারা রাত থানার লক আপে রেখে পর দিন পুলিশ তাঁদের আদালতে তোলে। সেখান থেকে জামিন পান অম্বিকেশবাবু ও সুব্রতবাবু।

এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। পরে পুলিশ দাবি করে, এলাকার মানুষ অম্বিকেশবাবুদের আক্রমণ করেছে এই খবর পেয়ে তারা অম্বিকেশবাবুদের উদ্ধার করতে গিয়েছিল। কিন্তু কেন তাঁদের দু’জনকে রাতে লক আপে আটকে রাখা হল, তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা পুলিশ দিতে পারেনি। এর পরেই ঘটনাটি নিয়ে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করে। ওই বছরের ১৩ অগস্ট কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায় অম্বিকেশবাবু ও সুব্রতবাবুকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করে। একই সঙ্গে ওই রাতের ঘটনায় যুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ পাঠায় কমিশন। কমিশনের সুপারিশে বলা হয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র করাটা দোষের নয়। মুখ্যমন্ত্রী যদিও এই ব্যঙ্গচিত্র পাঠানোর ঘটনাটিকে অপরাধ বলেই মনে করেছিলেন। বিভিন্ন সময়ে এই ব্যঙ্গচিত্রটিকে ‘ডিকম্পোজড’ অ্যাখ্যা দিয়ে এমনকী এটি তাঁকে খুনের চক্রান্ত বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের রেশ ধরেই মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে অম্বিকেশবাবুদের বিরুদ্ধে পূর্ব যাদবপুর থানায় দায়ের করা মামলাও চালিয়ে যাওয়া হয়। ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর কমিশনের সুপারিশ না-মানার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন অম্বিকেশবাবুরা।

এ দিন কলকাতা হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরে অম্বিকেশবাবু বলেন, “সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার ও মানবধিকার রক্ষার পক্ষেই রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে আমার শঙ্কা, রাজ্য সরকার এই রায় মানবে না। সাধারণ মানুষের টাকা খরচ করে রাজ্য সরকার জেদের বশে এ ধরনের অনেক মামলাই চালিয়ে যাচ্ছে। এ বারও হয়তো তারা সে পথেই চলবে।”

এর আগে বেলপাহাড়ির কৃষক শিলাদিত্য চৌধুরীকেও ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। এক জনসভায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে সারের দাম বাড়া নিয়ে প্রশ্ন করায় ‘মাওবাদী’ সন্দেহে পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে বেশ কিছু দিন আটকে রাখে। কিন্তু প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যান শিলাদিত্য। সেই ক্ষতিপূরণের নির্দেশও রাজ্য সরকার মানেনি। হাইকোর্ট অম্বিকেশবাবুদের পক্ষে রায় দেওয়ায় শিলাদিত্যও এ বার ক্ষতিপূরণ-মামলায় ইতিবাচক সাড়া পেতে পারেন বলে আইনজীবীদের ধারণা।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “আদালতের রায়ে প্রমাণিত হল, মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ ঠিকই ছিল। শিলাদিত্য চৌধুরীকে রাজ্য যাতে ক্ষতিপূরণ দেয়, তার জন্য আমরা হাইকোর্টে মামলা লড়ছি। অম্বিকেশবাবুর ক্ষেত্রে আদালতের রায়ে আমরা শিলাদিত্যর ব্যাপারেও আশাবাদী হলাম।”

ambikesh mahapatro cartoon controversy subrata sengupta dipankar dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy