সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ধৃত পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের তরফে চলতি মাসের শুরুতে আদালতে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, তদন্তের শেষ কবে? সোমবার কলকাতা নগর ও দায়রা আদালতও প্রশ্ন তুলল, সারদা-কাণ্ডের তদন্ত শেষ করতে আর কত সময় লাগবে সিবিআইয়ের?
সিবিআইয়ের আইনজীবীকে এই প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে নগর ও দায়রা আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র মন্তব্য করেন, চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দেওয়ার জন্য তদন্তকারী সংস্থাকে অনন্ত সময় দেওয়া সম্ভব নয়।
এই মামলায় প্রাক্তন পুলিশকর্তা-সহ অনেক অভিযুক্ত জামিন পেয়ে গেলেও নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টে মন্ত্রী মদনবাবুর জামিনের আবেদন বারবার খারিজ হয়ে গিয়েছে। তাই তাঁর কৌঁসুলি তদন্তের সময়সীমা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন।
সারদা-প্রধান সুদীপ্ত সেন, অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষকে এ দিন আদালতে হাজির করানো হলেও তাঁদের পক্ষে কোনও আইনজীবী হাজির ছিলেন না। অন্যতম অভিযুক্ত, রাজ্যসভার সদস্য কুণাল নিজেই সওয়াল করেন। সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ফের দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আলিপুর আদালতে সারদা রিয়েলটি এবং কলকাতা নগর ও দায়রা আদালতে সারদা ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের মামলায় সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিট হুবহু এক। তা সত্ত্বেও একই অভিযোগে তাঁকে আলাদা ভাবে সাজা ভোগ করতে হচ্ছে। অথচ অন্যান্য অভিযুক্তের ব্যাপারে কোনও তদন্তই হচ্ছে না। উল্টে ধৃত প্রভাবশালীদের জামিন পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে সিবিআই। আলিপুরের মামলায় ধৃত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কেন এই মামলায় যুক্ত করা হচ্ছে না, এ দিন ফের সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এর পরেই ১৮ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন জানান কুণাল। সিবিআইয়ের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। কুণাল বিচারকের কাছে জানতে চান, সিবিআই চূড়ান্ত চার্জশিট পেশ না-করে আর কত দিন তাঁর জামিনের বিরোধিতা করবে? বিচারক সিবিআইয়ের কৌঁসুলির কাছে জানতে চান, চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দিতে আর কত দিন সময় লাগবে?
সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তদন্ত করতে সময় লাগবে। সারদা তদন্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কিছু অংশ পড়ে শোনান সিবিআইয়ের আইনজীবী। তার পরেই সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে আদালতকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ তোলেন দেবযানী। তিনি বলেন, সিবিআই বিভিন্ন আদালতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বাছাই করা অংশ পেশ করছে। যে-অংশ বিচারকদের দেখানো হচ্ছে, তাতে রায়ের অর্থ বদলে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিধাননগর আদালতেও একই ভাবে বিচারককে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী না-থাকলে আদালত যাতে সিবিআইয়ের দেওয়া এই ধরনের নথি গ্রহণ না-করে, সেই আবেদন জানান দেবযানী।
সিবিআইয়ের আইনজীবীর কোনও যুক্তিই বিচারককে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ৫ অক্টোবর, পরবর্তী শুনানির দিন তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সিবিআইয়ের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন তিনি।
কমিশনের নথি
৫ অক্টোবরের মধ্যেই সারদা-কাণ্ডে গঠিত শ্যামল সেন কমিশনের যাবতীয় নথি আদালতে পেশ করতে হবে বলে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুল্লা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন নির্দেশ দিয়েছে।
সারদা কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরে, ২০১৩ সালের এপ্রিলে রাজ্য সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিশন গড়ে। ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা মেটাতে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। কমিশন অনেক ক্ষতিগ্রস্তকে কিছু টাকা দিলেও ৩৫৩ কোটি টাকা খরচ করতে পারেনি।
সুবীর দে নামে এক ব্যক্তি হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করে বলেন, সারদার মতো অন্যান্য অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে যাঁরা তা ফেরত পাচ্ছেন না, সেন কমিশন তাঁদেরও ওই খাত থেকে টাকা দিক। কমিশন কাদের টাকা মিটিয়েছে এবং বাকি টাকা কোথায় রয়েছে, রাজ্য সরকার সেটা পরিষ্কার করে জানাক।
আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও শুভাশিস চক্রবর্তী জানান, এই বিষয়ে রাজ্য সরকারকে গত এপ্রিলে হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু তা জমা পড়েনি। সরকারি কৌঁসুলি তালে মাসুদ সিদ্দিকি জানান, সরকার হলফনামা দেবে। ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে জানিয়ে দেয়, হলফনামা নয়, তাদের ওই কমিশনের যাবতীয় নথি পেশ করতে হবে আদালতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy