Advertisement
১৮ মে ২০২৪

দক্ষিণের দাপট কেন, ক্ষোভ বাংলায়

বাংলার লড়াই লড়তে হবে বাংলাকেই। অথচ দক্ষিণ বারেবারে পুবের উপরে ছড়ি ঘোরাচ্ছে! দলের অন্দরে এমন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এ বার সুর চড়াতে শুরু করেছে সিপিএমের বঙ্গ ব্রিগেড। তৃণমূলকে রুখতে বিধানসভা ভোটে বৃহত্তর জোট চাইছে আলিমুদ্দিন। কিন্তু কংগ্রেস-সঙ্গ চলবে না বলে ফের বাদ সাধছেন কেরলের কমরেডরা! দিল্লিতে আগামী সপ্তাহে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগে সিপিএমের বাংলার নেতারা ফুটছেন এই দক্ষিণী চাপের বিরুদ্ধে। সোমবার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে দক্ষিণবঙ্গের ৯টি জেলাকে নিয়ে নির্বাচনী কর্মশালায় রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্যেই তার ইঙ্গিত ধরা পড়েছিল। সেই ক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজ্য সিপিএমের নানা স্তরে।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:১৫
Share: Save:

বাংলার লড়াই লড়তে হবে বাংলাকেই। অথচ দক্ষিণ বারেবারে পুবের উপরে ছড়ি ঘোরাচ্ছে! দলের অন্দরে এমন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এ বার সুর চড়াতে শুরু করেছে সিপিএমের বঙ্গ ব্রিগেড।

তৃণমূলকে রুখতে বিধানসভা ভোটে বৃহত্তর জোট চাইছে আলিমুদ্দিন। কিন্তু কংগ্রেস-সঙ্গ চলবে না বলে ফের বাদ সাধছেন কেরলের কমরেডরা! দিল্লিতে আগামী সপ্তাহে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগে সিপিএমের বাংলার নেতারা ফুটছেন এই দক্ষিণী চাপের বিরুদ্ধে। সোমবার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে দক্ষিণবঙ্গের ৯টি জেলাকে নিয়ে নির্বাচনী কর্মশালায় রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্যেই তার ইঙ্গিত ধরা পড়েছিল। সেই ক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজ্য সিপিএমের নানা স্তরে।

কেরলে কংগ্রেসের ইউডিএফ সরকারের মূল প্রতিপক্ষ বাম জোট এলডিএফ। সে রাজ্যে উম্মেন চান্ডি সরকারের ক্ষমতা হারানোর সম্ভাবনা প্রবল বলেও মনে করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় বঙ্গোপসাগরের তীরে কংগ্রেস-বাম সমঝোতা হলে মালাবার উপকূলে তাঁদের লড়াইয়ে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় আছেন পিনারাই বিজয়নেরা। তাঁদের আপত্তি পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাংলার চাহিদার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে আঁচ করেই সোমবার সূর্যবাবু বলেছেন, বাংলায় দল বাঁচতে না পারলে গোটা দেশে বামেদের উপরে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। কেরলে ২০টি লোকসভা আসন, আর পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি। বাইশের চেয়ে কি বিয়াল্লিশ বেশি নয়? প্রশ্ন সূর্যবাবুর। এ রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যও প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘কেরলে কংগ্রেস সম্পর্কে সুর নরম না গরম করতে হবে, তা নিয়ে আমরা কি কখনও মত দিতে যাই? তা হলে কেরলের বাধ্যবাধকতার দায় বারবার আমাদের উপর চাপবে কেন?’’ বঙ্গ ব্রিগেডের বড় অংশের উষ্মা, এ রাজ্যের পরিস্থিতি মাথায় না-রেখেই ইউপিএ-১ সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেন প্রকাশ কারাটরা। তার জেরে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের পথ প্রশস্ত হয়ে বামফ্রন্টের পতন ত্বরান্বিত হয়। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের মন্তব্য, ‘‘নো কংগ্রেস, অনলি পার্টি কংগ্রেস— এই মত আঁকড়ে থাকলে আবার বিপর্যয় ডেকে আনা হবে!’’ কেরলের মতের পাল্টা যুক্তি দিতে অসুস্থ শরীরেও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে থাকবেন গৌতম দেব।

আলিমুদ্দিনের কর্ণধারেরা বুঝতে পারছেন তৃণমূলের স্বার্থরক্ষার কথা মাথায় রেখেই নানা মহল থেকে বাম-কংগ্রেসের জোটের পথে কাঁটা ছড়ানোর চেষ্টা চলছে! সেই সূত্রেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘রাজ্যের স্বার্থে তৃণমূলকে হারাতে হবে। তার জন্য কী চাই, আমরা জানি। এখানে বিভ্রান্তির কোনও অবকাশ নেই!’’

রাজ্যের বাম সমর্থকদের কেউ কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়াকে বেছে নিয়েছেন ক্ষোভ উগরে দেওয়ার জন্য। কারাটের নাম না-করে সেখানে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে, ‘কিছু স্বার্থপর নেতার জন্য যদি বামপন্থী ভাবাবেগে আঘাত লাগে, তা হলে ওই সব নেতা বাংলার মাটিতে পা রাখলে অবরোধের সম্মুখীন হবেন’! যা নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের মনোভাবের প্রকাশ বলেই মনে করছে বঙ্গ ব্রিগেড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPIM Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE