Advertisement
২৮ মার্চ ২০২৩
Left

মিছিলে প্রৌঢ়, হাতে ৩৪ বছরের পুরনো পতাকা

চেনাজানা দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা জানালেন, উনি এমনই। দুর্দিনেও দল ছাড়েননি।

ব্রিগেডের আগে তারকেশ্বর থেকে আরামবাগ পর্যন্ত বামেদের মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।

ব্রিগেডের আগে তারকেশ্বর থেকে আরামবাগ পর্যন্ত বামেদের মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।

পীযূষ নন্দী ও গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
আরামবাগ শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ১৩:০৬
Share: Save:

একাধিক সেলাই করা লাল পতাকাটা উঁচু করে ধরে রাস্তার পাশে একাই বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রৌঢ়।

Advertisement

স্থান— আরামবাগের কাবলে মোড়। সময়— রবিবারের বিকেল।

একসময়ের ‘লাল দুর্গ’ আরামবাগ এখন পুরোদস্তুর সবুজ। এখনও বহু সিপিএম কর্মী-সমর্থককে দলীয় কার্যালয়ে থাকতে হয়। তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশের পরের দিন সেই আরামবাগেই এমন ‘অকুতোভয়’ সিপিএম কর্মী প্রকাশ্য রাস্তায়!

শুধু দাঁড়িয়েই থাকলেন না, বিকেলে সিপিএমের পদযাত্রা তারকেশ্বর থেকে আরামবাগের কাবলে মোড়ে পৌঁছলে সেই পতাকা নিয়েই তাতে সামিল হলেন মায়াপুরের বছর পঞ্চান্নর রবিন মালিক নামে ওই প্রৌঢ়। তাঁর চেনাজানা দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা জানালেন, উনি এমনই। দুর্দিনেও দল ছাড়েননি।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘ভাগ্যিস ঘুমোইনি, দাউদাউ করে জ্বলছিল, ন’মাসের বাচ্চা কোলে নিয়েই ছুটলাম’​

সিপিএমের আরামবাগ এরিয়া সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় জানালেন, গত ৩০ বছরের বেশি ওই দলীয় পতাকা রবিন নিজের কাছেই রাখেন। কোনও দলীয় কর্মসূচিতে গেলে নিজের বাড়ি থেকেই সেটি আনেন। রবিন বলেন, “৩৪ বছর ধরে এই পতাকা আমার কাছে আছে। অনেক জায়গা ফেঁসে গিয়েছে। তাই সেলাই করেছি।”

আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট। সেই সমাবেশের সমর্থনে এবং ফসলের লাভজনক দাম, বেকারের কাজ-সহ কয়েকটি দাবিতে রবিবার থেকে হুগলিতে দু’দিনের পদযাত্রায় নেমেছে সিপিএম। অনেকটা কয়েক মাস আগে ‘সিঙ্গুর থেকে রাজভবন’ পদযাত্রার মতোই। তারকেশ্বর থেকে এ দিন পদযাত্রার সূচনা করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। আজ, সোমবার তা কামারপুকুরে শেষ হবে। শেষ দিনের পদযাত্রায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর সামিল হওয়ার কথা।

বাম জমানায় দীর্ঘদিন আরামবাগে বিরোধীরা দাঁত ফোটাতে পারেনি। এই আরামবাগ থেকেই একসময়ে সাংসদ অনিল বসু দেশের মধ্যে রেকর্ড ভোটে জিতেছিলেন। এখনও যে এখানে বহু বাম কর্মী-সমর্থক রয়ে গিয়েছেন, তা বোঝা গেল তারকেশ্বর থেকে আরামবাগের দিকে মিছিল এগিয়ে আসতেই। মিছিলের বহর বেড়েছে ক্ষণে ক্ষণে। তারকেশ্বর-আরামবাগ রোডের বিভিন্ন মোড়ে মিছিলে ফুল ছুঁড়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

আরও পড়ুন: ব্রিগেড সমাবেশে কত খরচ হল? প্রশ্ন পৌঁছে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনে, ইঙ্গিত মুকুলের​

দুপুর ১২টা নাগাদ পদযাত্রা পুরশুড়ায় পৌঁছয়। সেখানে একটি হিমঘর চত্বরে পদযাত্রীদের জন্য সিপিএমের পক্ষ থেকে খিচুড়ি-চাটনির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে প্রায় ছ’হাজার পদযাত্রী খাবার খান বলে পুরশুড়ার সিপিএম নেতৃত্বের দাবি। পুরশুড়া থানা মোড় সংলগ্ন এলাকায় বামেদের পদযাত্রায় আটকে পড়েছিলেন জেলা সভাধিপতি মেহবুব রহমান। খানাকুলে একটি খেলার অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন তিনি। মিছিল দেখে তৎক্ষণাৎ গাড়ি ঘুরিয়ে বিকল্প রাস্তা ধরেন মেহবুব। রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ মিছিল পৌঁছয় আরামবাগের গৌরহাটি মোড়ে। এ দিনের মতো মিছিল শেষ হওয়ার আগেই অবশ্য বাম কর্মী-সমর্থকদের হাতে মশাল জ্বলে ওঠে।

সূর্যবাবু ছাড়াও এ দিন মিছিলে হাঁটেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ, শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়, সুদর্শন রায়চোধুরীর মতো বর্ষীয়ান নেতারা। একসঙ্গে তৃণমূল-বিজেপিকে বেঁধেন সূর্যবাবু। আর হাঁটার ফাঁকে সেই রবিনবাবু বলেন, ‘‘এটা ভীতুদের ভয় ভাঙানোর মিছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.