Advertisement
E-Paper

কংগ্রেসের মিছিলে বেনজির ঐক্য, হাজির সিপিএমের তন্ময়ও

বিধানসভায় আসন সংখ্যার ভিত্তিতে খাতাকলমে তাঁরাই এখন রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু শুধু সেই সংখ্যাতেই থেমে থাকতে চান না অধীর চৌধুরীরা। বরং জোটের ণত্বষত্ব নিয়ে বাম নেতৃত্ব যখন কেন্দ্রীয় কমিটি ও ফ্রন্টের মধ্যে আকচাআকচিতে ব্যস্ত, তখন বিরোধী রাজনীতিতে নিজেদের পরিসর বাড়াতে নেমে পড়ল কংগ্রেস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৮:৫১
মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কলকাতার পথে কংগ্রেস। রয়েছেন (বাঁ দিক থেকে) মৌসম বেনজির নুর, দীপা দাশমুন্সি, আব্দুল মান্নান, অধীর চৌধুরী, সোমেন মিত্র এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য। শনিবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কলকাতার পথে কংগ্রেস। রয়েছেন (বাঁ দিক থেকে) মৌসম বেনজির নুর, দীপা দাশমুন্সি, আব্দুল মান্নান, অধীর চৌধুরী, সোমেন মিত্র এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য। শনিবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

বিধানসভায় আসন সংখ্যার ভিত্তিতে খাতাকলমে তাঁরাই এখন রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু শুধু সেই সংখ্যাতেই থেমে থাকতে চান না অধীর চৌধুরীরা। বরং জোটের ণত্বষত্ব নিয়ে বাম নেতৃত্ব যখন কেন্দ্রীয় কমিটি ও ফ্রন্টের মধ্যে আকচাআকচিতে ব্যস্ত, তখন বিরোধী রাজনীতিতে নিজেদের পরিসর বাড়াতে নেমে পড়ল কংগ্রেস। এবং তা করতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব শনিবার এক দিকে যেমন বিরল ঐক্যের ছবি তুলে ধরলেন, তেমনই বারবার বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন জোটের প্রশ্নে তাঁদের কোনও জড়তা নেই। যা নিঃসন্দেহে চাপ বাড়াল সিপিএমের উপরে। যার জেরে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দলীয় ফরমান সত্ত্বেও কংগ্রেসের মিছিলে পা মেলালেন সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য।

মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ দিন মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিল কংগ্রেস। তাতে যোগ দেওয়ার জন্য সিপিএম নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীকে এ জন্য চিঠিও দিয়েছিলেন অধীরবাবু। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সমালোচনা ও ফ্রন্ট শরিকদের আপত্তির মুখে পড়ে মিছিলে না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সূর্যবাবুরা।

সূর্যবাবুদের এই ইতস্তত আচরণই বিরোধী রাজনীতিতে পায়ের তলার জমি শক্ত করার পথ খুলে দিয়েছে কংগ্রেসের সামনে। বামেদের সঙ্গে জোট বজায় রেখেও আলাদা আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিলেন অধীরবাবু। কংগ্রেস সূত্রের মতে, যার লক্ষ্যই হল বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করা। এ দিনের মিছিলে আব্দুল মান্নান, মানস ভুইঞাঁ, প্রদীপ ভট্টাচার্য, দীপা দাশমুন্সি, মৌসম বেনজির নুর, সোমেন মিত্র-সহ যাবতীয় তাবড় নেতার উপস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ ছবি তুলে ধরে কংগ্রেস তার গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি, জোট নিয়ে সিপিএমের মতো তাঁদের যে কোনও ধন্দ নেই, বারবার তা বুঝিয়ে দিয়ে বিধান ভবনের নেতারা এ দিন বার্তা দিয়েছেন বাম-কংগ্রেস দু’পক্ষেরই নিচুতলার কর্মীদের। এ দিন গাঁধী মূর্তির পাদদেশে দাঁড়িয়ে অধীরবাবু বলেন, ‘‘নেতাদের কথায় জোট হয়নি। কর্মীদের ইচ্ছায় জোট হয়েছিল। তাই কর্মীদের বলছি, নেতাদের কথায় প্রভাবিত হবেন না। তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইতে মানুষের জোট ছিল। জোট থাকবে।’’

পর্যবেক্ষকদের মতে, এই মন্তব্যের লক্ষ্য বাম কর্মীদের কাছে টানা। কারণ কংগ্রেস নেতারা জানেন, সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি যে ভাবে জোটের সমালোচনা করেছে তাতে দলের নীচুতলার কর্মীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। যদিও এ ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নিজস্ব সংগঠন বিস্তারের পাশাপাশিই বামেদের সঙ্গে জোট রক্ষাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ, জোটের সঙ্গে তৃণমূলের ভোটের ফারাক মাত্র ৫ শতাংশ। তাই তৃণমূল জোট ভাঙতে চায়।’’

এখন প্রশ্ন হল, দমদম উত্তর কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক এ দিন কংগ্রেসের মিছিলে উপস্থিত হলেন কেন? জবাবে তন্ময়বাবু বলেন, ‘‘যারা জোট ভাঙার চক্রান্ত করছে, মিছিলে হেঁটে তাদের কাছে বার্তা দিতে চেয়েছি।’’ কারা জোট ভাঙার চক্রান্ত করছে, তার কোনও স্পষ্ট জবাব অবশ্য তিনি দেননি। কিন্তু এ-ও বলেন, ‘‘দু’মাস আগে যখন জোট করে মানুষের কাছে ভোট চেয়েছিলাম, তখন কংগ্রেসের সঙ্গে চলার কথা বলেছিলাম। মানুষের সেই রায় অস্বীকার করার অধিকার আমার নেই। কারও নেই। তাই মানুষের দাবিতে মিছিলে এসেছি।’’

তবে সিপিএম সূত্রের খবর, দলীয় নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত নিয়েই মিছিলে হেঁটেছেন তন্ময়বাবু। কারণ, সূর্যবাবুরাও জানেন জোটবদ্ধ আন্দোলন থেকে সিপিএম একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে আখেরে মানুষের থেকেই তাঁদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জোট বিপন্ন হলে সিপিএমের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাও মুশকিল হবে। তাই কৌশলেই এ দিন তন্ময়বাবুকে কংগ্রেসের মিছিলে পাঠানো হয়েছিল। সেই জল্পনাই ইন্ধন জুগিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেবের মন্তব্য। তিনি বলেন, ‘‘তন্ময় অনুশাসন ভেঙেছে কিনা জানি না। কথা বলব। তবে, রাজ্যের মানুষ কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে চলারই পক্ষে। এ বিষয়ে কোনও সংশয় নেই।’’

অবশ্য গৌতমবাবু এ কথা বললেও কংগ্রেসের মিছিলে তন্ময়ের উপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেননি শরিক নেতারা। আরএসপি-র বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী এ ঘটনার সমালোচনা কড়া করে বলেন, ‘‘তন্ময়বাবু পরিষদীয় দলের সিদ্ধান্ত কেন মানলেন না, কৈফিয়ত চাওয়া হবে।’’

price hike protest cpim congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy