Advertisement
E-Paper

মধ্যবিত্তের মন পেতে ধারা বদলানোর ভাবনা

এক কালে কম্পিউটারের প্রচলন রুখতে প্রবল বাধা দেওয়া হয়েছিল। মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ না ভেবেই! এক সময়ে জঙ্গি আন্দোলনের দাপটে বন্ধ হয়েছিল একের পর এক কল-কারখানা। মধ্যবিত্ত বা শ্রমিকের ভবিষ্যৎ খেয়াল না রেখেই!

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৭
.

.

এক কালে কম্পিউটারের প্রচলন রুখতে প্রবল বাধা দেওয়া হয়েছিল। মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ না ভেবেই!

এক সময়ে জঙ্গি আন্দোলনের দাপটে বন্ধ হয়েছিল একের পর এক কল-কারখানা। মধ্যবিত্ত বা শ্রমিকের ভবিষ্যৎ খেয়াল না রেখেই!

এখন যুগের ফেরে এবং পরিস্থিতির চাপে মনোভাব বদলাতে চাইছে সিপিএম। মধ্যবিত্ত এবং শ্রমিক-কৃষক সমাজের মধ্যে যে পরিবর্তন এসে পড়েছে, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংগঠনের নতুন ধারা গড়ে তুলতে চাইছে তারা। সর্বত্র ঝান্ডা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার পুরনো রেওয়াজও ছাড়ার কথা আলোচনা হচ্ছে।

রাজ্যে লাগাতার নির্বাচনী বিপর্যয় এবং দলে ভাঙনের ধাক্কায় পর্যুদস্ত সংগঠনকে নতুন করে সাজানোর লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরের শেষে কলকাতায় রাজ্য প্লেনাম করতে চলেছে সিপিএম। প্লেনামকে সামনে রেখেই গণসংগঠন এবং আন্দোলনের প্রচলিত ছক থেকে বেরিয়ে আসার চর্চা শুরু হয়েছে দলে। শ্রমিক, কৃষক ও মধ্যবিত্তের আশা-আকাঙ্খার সঙ্গে তাল রেখে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে আলিমুদ্দিন। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব মানছেন, এই উপলব্ধিতে পৌঁছতে দেরি হয়েছে যথেষ্ট! তবু চেষ্টা করে দেখতে চাইছেন তাঁরা যে, পুরনো তত্ত্বের নিগড়ে বাঁধা না থেকে অপ্রচলিত পথে হেঁটে শেষমেশ সাধারণ মানুষের মন পাওয়া যায় কি না।

আসন্ন প্লেনামের খসড়া রিপোর্টে বলা হয়েছে: ‘নয়া উদারনীতির যুগে মধ্যবিত্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। মধ্যবিত্তদের মধ্যে নিম্ন ও মধ্য স্তর— এদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করা দরকার। এদের কাছে পৌঁছনো ও এদের আমাদের দিকে আকৃষ্ট করতে সংগঠনের নতুন রূপ, নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে’। শহরাঞ্চলের বস্তি ও কলোনি এলাকায় এক সময়ে অখণ্ড প্রভাব ছিল সিপিএমেরই। কিন্তু ওই অংশের ভাবনা-চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে চলতে না পেরে সেখানেও এখন জমি হারিয়ে ছে তারা। চেষ্টা হচ্ছে, হারানো সংযোগ পুনরুদ্ধারের পাশাপাশিই নতুন নতুন অংশের কাছে পৌঁছনোর।

প্লেনামের খসড়া রিপোর্টই মেনে নিচ্ছে, প্রথমে যে কৃষক এবং পরে শ্রমিক শ্রেণিকে ভিত্তি করে কমিউনিস্ট পার্টি মাথা তুলেছিল, ঠিক সেই রকম কৃষক-শ্রমিক আর নেই। গ্রামে অকৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক বেড়েছে, বাড়ছে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার ভূমি সংস্কারের কর্মসূচি নেওয়ার পরে রাজ্যে খেতমজুর সংগঠন করার কথা ভাবেইনি সিপিএম। যদিও অন্য রাজ্যে সেই সংগঠন হয়েছিল। এখন এ রাজ্যেও নতুন খেতমজুর সংগঠন গড়ে সেখানে বেশি বেশি মজুরকে টেনে আনার কথা বলতে হচ্ছে সিপিএমকে। আবার তথ্যপ্রযুক্তি বা পরিষেবা ক্ষেত্রে কর্মরত অসংখ্য তরুণ-তরুণীর কাছে পৌঁছনোর পথও ভাবা হচ্ছে।

শহরাঞ্চলে আবাসিকদের নানা অ্যাসোসিয়েশন, নাগরিক ফোরাম, সাংস্কৃতিক মঞ্চ, পরিবেশ রক্ষার কমিটি, দুর্নীতি বা দূষণ-বিরোধী মঞ্চ, ক্রীড়া সংগঠন— এমন নানা মঞ্চ কাজ করে স্থানীয় ভিত্তিতে। মধ্যবিত্ত মানুষের দৈনন্দিন ভাবনাচিন্তা ও কার্যকলাপের হদিশ রাখতে এই ধরনের সংগঠনের সঙ্গে নিজেদের জুড়ে নিতে বলা হয়েছে প্লেনামের রিপোর্টে। এবং অবশ্যই তা দলের ছাতায় তলায় এদের সকলকে নিয়ে আসার জন্য নয়! পাড়ায় পাড়ায় ভাড়াটে-বাড়িওয়ালা বিবাদ থেকে পারিবারিক কলহ, সর্বত্র নাক গলিয়ে দাদগিরি ফলানোর পুরনো অভ্যাসের কতটা দাম তাঁদের দিতে হয়েছে, সিপিএম নেতৃত্ব এখন অনেকটাই বুঝছেন! তাই নিজেদের মতাদর্শগত ক্ষেত্রকে ঠিক রেখে শহর ও শহরতলি এলাকায় মধ্যবিত্তদের মধ্যে কী ভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্য কমিটি স্তরে কর্মশালার আয়োজন হচ্ছে।

কৃষক, শ্রমিক ও মধ্যবিত্ত অংশের মানুষের মানসিকতা, অগ্রাধিকারে কী ভাবে পরিবর্তন এসেছে, তার আঁচ পেতে ইতিমধ্যেই বিশদে সমীক্ষা করিয়েছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘সমাজ তো দাঁড়িয়ে নেই। তার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতি, আন্দোলন, সংগঠন— সব কিছুরই ধরন বদলাচ্ছে। সেই অনুযায়ীই সংগঠনকে সময়োপযোগী করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ সিপিএম নেতারা উদাহরণ দিচ্ছেন, বরাবর তাঁরা ছাত্র আন্দোলনের জন্য প্রতিষ্ঠিত (ট্র্যাডিশনাল) কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েই ভেবে এসেছেন। এখন শ’য়ে শ’য়ে ছেলেমেয়ে বেসরকারি কলেজে পড়ে। অথচ তারা ছাত্র সংগঠনের ভাবনার বাইরে! ঠেকায় পড়ে এখন চেষ্টা হচ্ছে বৃত্তটা বড় করার।

কেউ কেউ অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, এত দেরিতে দাওয়াই কি কাজ করবে মুমূর্ষু রোগীর শরীরে?

CPM Plenum Communist Party Of India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy