সিউড়ির তিলপাড়া ব্যারাজ। —ফাইল চিত্র।
একেই বোধহয় বলে শাঁখের করাত।
উত্তরে বৃষ্টি নেই। দক্ষিণবঙ্গ ভেসে যাচ্ছে, বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি। দুই জায়গাতেই মার খাচ্ছে চাষ। উত্তরে জলের অভাবে, দক্ষিণে খেত ডুবে গিয়ে।
বৃষ্টিহীন উত্তরে দাবদাহ এতটাই বেশি যে মাটি ফেটে যাচ্ছে। সব্জির ফুল ঝরে গিয়ে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমন ধানের চারা শুকিয়ে যাচ্ছে। ঝলসে যাচ্ছে চা পাতা। খরা পরিস্থিতি ঘোষণার দাবি উঠেছে কোচবিহারে। মাঠে পটল, ঝিঙে, করলা, বেগুন, লঙ্কা, ডাঁটা, লাল শাক, কুমড়ো, টম্যাটো রয়েছে। রোদে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে, ফুলও ঝরছে। একই ছবি আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা ও ধূপগুড়িতেও। চাষের জমি ফেটে গিয়েছে শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া ফাঁসিদেওয়ায়।
ডুয়ার্সের বহু এলাকায় ধান গাছ হলুদ হয়ে যাচ্ছে। গত পাঁচ দিনে এক ফোঁটা বৃষ্টি হয়নি উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে। আমন চাষিরা কপাল চাপড়াচ্ছেন। কৃষিকর্তাদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, মাটিতে রস থাকায় ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। কিন্তু উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অশোক সাহার মতে, সাত দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে আমনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
গরমে ঝলসে যাচ্ছে ডুয়ার্সের চা-বাগানও। পাতা তামাটে হয়ে যাচ্ছে। ওদলাবাড়ি ও ডামডিমের মাঝে থাকা রানিচেরা চা বাগানের ম্যানেজার তথা টি অ্যাসোসিয়েশেন অব ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা অনির্বাণ মজুমদারের কথায়, ‘‘তীব্র গরমে চা গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। নতুন পাতা আসাও একরকম বন্ধ।’’
বড়দিঘি চা বাগানের ম্যানেজার তথা ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের চালসা শাখার চেয়ারম্যান ইন্দ্রজিৎ সিংহ চহ্বান বলেন, ‘‘এমন চললে চায়ের গুণগত মান বজায় রাখা খুবই শক্ত।’’ তবে আশার কথা, দু’এক দিনের মধ্যে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
দক্ষিণবঙ্গে আবার বৃষ্টি ধরছেই না। চাষিরা আকাশ কালো করে আসতে দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। রাজ্যের ‘শস্যগোলা’ বর্ধমানে ৭০ শতাংশের বেশি জমি জলের তলায়। কয়েক হাজার বিঘে জমিতে ধানের চারা পচে গিয়েছে। নতুন বীজতলা তৈরি করাও প্রায় অসম্ভব। সব্জির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে পূর্বস্থলীতে। রাজ্যের যে সব বাজারে সেখান থেকে নিয়মিত সব্জি যেত, সেই সরবরাহ আপাতত বন্ধ।
ভেসে গিয়েছে বর্ধমান লাগোয়া হুগলিও। নদীর জল ঢুকে হরিপাল, তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়া ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার সব্জি নষ্ট হয়েছে। কোথাও আমনের বীজতলা তিন থেকে পাঁচ ফুট জলের তলায়। নতুন করে জমি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
হাওড়াতেও জলের নীচে চলে গিয়েছে উদয়নারায়ণপুর, শ্যামপুর, আমতা, ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুরের প্রচুর জমি। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল, ভগবানপুর, পটাশপুর ও এগরাতেও বেশির ভাগ জমি জলমগ্ন। আমনের বীজতলা, আউশ ধানের জন্য রোয়া জমি, সব্জি, ফুল, পান, মাছ চাষের পুকুর— সবই ডুবেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় সব ব্লকেই বর্ষায় পটল, ঝিঙে, বেগুন, কুঁদরি, কুমড়োর চাষ হয়। সেগুলির ক্ষতির আশঙ্কা তো আছেই। ক্ষতির হতে পারে বর্ষাকালীন পেঁয়াজেরও।
দু’দিন আগেই পরিস্থিতি খুব বেশি খারাপ ছিল মুর্শিদাবাদের বড়ঞা এবং বীরভূমের লাভপুরে। বড়ঞায় ধান-পাট-সব্জির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি দফতর। বীরভূমে বহু জায়গায় জল নামলেও অন্তত ১১টি ব্লকে সব্জি খেতের অর্ধেকেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটেও ১০টি ব্লকে বীজ ধান ও সব্জির ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে সুন্দরবন লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জ ও সন্দেশখালি।
ক’দিনের মধ্যে বৃষ্টি পেলে উত্তরে চাষের হয়তো অনেকটা ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। কিন্তু দক্ষিণে ইতিমধ্যেই এতটা জমির চাষ ভেসে গিয়েছে যে বড়সড় ক্ষতি এড়ানো কার্যত অসম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy