Advertisement
২১ মে ২০২৪
Cyclone Amphan

হঠাৎ শান্ত, ফের ধেয়ে এল ঝড়

লোকজন ইতিউতি পথে নামতে শুরু করেছে সবে। কোথায় কী ক্ষতি হল, তা নিয়ে চলছে জল্পনা।

ঘূর্ণিঝড় আমপানের প্রভাবে তছনছ বাংলা।

ঘূর্ণিঝড় আমপানের প্রভাবে তছনছ বাংলা।

সতীনাথ পাত্র
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২০ ০৩:৪২
Share: Save:

ঘণ্টা দেড়েক ধরে তুমুল তাণ্ডব চালিয়ে যখন থামল ঝড়, তখন বিকেল প্রায় ৪টে। চারিদিক হঠাৎ অদ্ভুত শান্ত। গোটা কাকদ্বীপে যেন একটা গাছের পাতা নড়ছে না! সকলে ধরে নিয়েছিলাম, যা হওয়ার বুঝি মিটে গেল। এ যাত্রায় নিস্তার পেলাম। কিন্তু মনটা খচখচ করছিল। সব এত চুপচাপ কেন!

লোকজন ইতিউতি পথে নামতে শুরু করেছে সবে। কোথায় কী ক্ষতি হল, তা নিয়ে চলছে জল্পনা। ফোনে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ইন্টারনেট নেই।

এরই মধ্যে ফের মেঘের গর্জন। শোঁ-শোঁ আওয়াজটা শুরু হয়ে গেল। যে যার বাড়ি ঢুকে পড়লাম এক দৌড়ে। আর এক দফা শুরু হল ঝড়ের দাপট। তবে আগের বার হাওয়ার গতি যে দিক থেকে আসছিল, এ বার তার উল্টো দিক থেকে শুরু হল ঝাপটা। আবার চলল দেড় ঘণ্টা ধরে। বুঝলাম, এরই নাম ঘূর্ণিঝড়। কেমন পেঁচিয়ে-পেঁচিয়ে আছড়ে পড়ে সে!

ঝড়ের ডায়েরি


• বেলা ১টা ৩০: সাগরদ্বীপ থেকে ৯০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত আমপান
• বেলা ২টো ৩০: স্থলভূমিতে ঢুকতে শুরু করল আমপান (ল্যান্ডফল)
• বেলা ৩টে ৩০: সাগরদ্বীপে তাণ্ডব চরমে, কলকাতায় ঝড় শুরু।
• বিকেল ৪টে ৩০: ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র (অক্ষি বা আই) প্রবেশ করেছে স্থলভূমিতে।
• বিকেল ৫টা ৩০: কলকাতায় ঝড়ের তাণ্ডব শুরু। সঙ্গে অতিপ্রবল বৃষ্টি।
• সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা: কলকাতা, দমদম, হাওড়া, হুগলি, উত্তর শহরতলিতে তাণ্ডব চরমে। লন্ডভন্ড বিভিন্ন এলাকা। প্রবল বৃষ্টি।
• রাত ৮টা: ঝড়ের অভিমুখ নদিয়ার দিকে

ঝড়ের সতর্কতা জারি হওয়া ইস্তক মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নজর রাখছিলাম। ঝড়ের ল্যান্ডফল অর্থাৎ সমুদ্র থেকে কোন এলাকার মাটি ছোঁবে, তা নিয়ে প্রথম দিকে সন্দেহ ছিল। তবে পরে পরিষ্কার হয়ে যায়, সাগরদ্বীপের আশপাশেই হবে ল্যান্ডফল। সেই মতো সব প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। মহকুমা প্রশাসনের নির্দেশ মতো সতর্কতার কথা মৎস্যজীবী সদস্যদের জানিয়ে দিয়েছিলাম। আমার নিজেরও ট্রলার রয়েছে। সেগুলিকে মঙ্গলবারই নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে এনেছি। তাতেই ভেবেছিলাম নিরাপদে রয়েছি।

কিন্তু এ বারের ঝড়ের মাত্রাটা একেবারে আলাদা। প্রবল তার শক্তি। বিকেল ৫টার পর থেকে ফের শুরু হল তাণ্ডব। এমন শব্দ জীবনে শুনিনি। সঙ্গে মেঘের গর্জন আর বিদ্যুতের ঝলকানি। এক বার ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। ঝড়ের দাপটে দরজাটাই খুলতে পারলাম না। ঘর থেকে দেখলাম, টিনের চাল উড়ে যাচ্ছে। গাছ ভেঙে পড়তে দেখলাম। হঠাৎ দেখি, গাছের একটা ভারী ডাল উড়তে উড়তে বেরিয়ে গেল। চারদিক থেকে শুধু মানুষের আর্তচিৎকার। কেউ কেউ শাঁখ-ঘণ্টা বাজাচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না পরিবেশ। এই পরিস্থিতি চলল আরও ঘণ্টা দেড়েক।

আমার বাড়ির পাশের গাছে মৌমাছির একটা মস্ত চাক ছিল। প্রথমবার ঝড়ে সেটা আলগা হয়ে পড়েছিল। পরের দফায় যখন ঝড় এল, মৌচাকটাকে ঝটকা টানে উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল!

(লেখক সুন্দরবন মৎস্যজীবী সংগঠনের সম্পাদক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE