Advertisement
E-Paper

Cyclone yaas: ‘ভিটে গিয়েছে, পড়ে থেকে কী হবে’

বুধবারের ঝড়ে মাতলার বাঁধ ভেঙে কুলতলির উত্তর ও পশ্চিম দেবীপুরের প্রায় ৬টা গ্রাম ভেসেছে।

সমীরণ দাস 

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২১ ০৫:৪৭
জলে ডোবা এলাকায় এ ভাবেই পানীয় জল আনতে হচ্ছে। কুলতলির সানকিজাহানে।

জলে ডোবা এলাকায় এ ভাবেই পানীয় জল আনতে হচ্ছে। কুলতলির সানকিজাহানে। নিজস্ব চিত্র।

মাটির কাঁচাবাড়ির অর্ধেকটাই জলের তলায়। পাশের বড় আমগাছের গুঁড়িটারও অনেকটা ডুবে। জল ডিঙিয়ে সেই গাছে উঠেই বৃহস্পতিবার আম পাড়ছিলেন এক যুবক। ক’টা আম পেড়ে নেমে এসে বললেন, “ঘর-রান্নাঘর সব তো জলের তলায়। কাল রাত থেকে খাবার জোটেনি। এই বেলা এই আম ক’টাই সম্বল।”

বুধবারের ঝড়ে মাতলার বাঁধ ভেঙে কুলতলির উত্তর ও পশ্চিম দেবীপুরের প্রায় ৬টা গ্রাম ভেসেছে। ওই যুবক তেমনই এক প্লাবিত গ্রামের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ফের হু হু করে জোয়ারের জল ঢুকছে। ঘরবাড়ি তো গিয়েছেই, খেতের আনাজ, পুকুরের মাছ— সব জলের তলায়। নদী লাগোয়া দু’একটি গ্রামের বাসিন্দারা আগেই উঠে গিয়েছিলেন ত্রাণ শিবিরে। কিন্তু নদী থেকে একটু দূরে যাঁরা থাকেন, তাঁরা ঘরেই ছিলেন। ভাবতে পারেননি, বাঁধ ভেঙে প্রায় এক কিলোমিটার এগিয়ে আসবে নদী। জলে ডোবা বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে সঞ্জয় সর্দার বলছিলেন, “নদীবাঁধ এখান থেকে অনেকটাই দূরে। এত দূর জল চলে আসবে ভাবতেই পারিনি। আমপানেও বাঁধ ভেঙেছিল। কিন্তু গ্রামে জল ঢোকেনি।”

জলে ডোবা গ্রামের কোনও বাড়িতেই এ দিন রান্না চাপেনি। শুকনো খাবার যে যতটা বাঁচাতে পেরেছিলেন, খেয়ে রাত কাটিয়েছেন। দিনভর কী জুটবে, জানেন না কেউই। দুপুর পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে শুকনো খাবার বা জলের পাউচও আসেনি বলে অভিযোগ।

সরস্বতী জানা নামে এক গ্রামবাসী বলেন, “ঘরটা ডুবেছে। জিনিসপত্র কিছুই বাঁচাতে পারিনি। কাল রাত থেকেই খাওয়া নেই। বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়ে আর গরু দুটোকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। আমরা কোনও রকমে ভিটে আগলে পড়ে রয়েছি। জানি না কতক্ষণ পারব।”

এ দিন জল বাড়তে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে উঁচু জায়গায় উঠে যান। কেউ যান আত্মীয়ের বাড়িতে। কেউ গিয়ে ওঠেন ত্রাণ শিবিরে। বছর আশির হরিপদ জানা বলেন, “ঝড়ের সময়েও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতেই ছিলাম। আর থাকা যাবে না। আজ সবে প্রতিপদ। সকালে ভাসিয়েছে। ফের ভাসাবে। কাল, একাদশীর দিনও সকাল-সন্ধে জল ঢুকবে। ভিটে-মাটি, জমি-পুকুর সব গিয়েছে। আর পড়ে থেকে কী হবে!”

জল এগিয়ে আসতে বুধবার রাতেই মাটি কেটে একদফা বাঁধ দিয়েছিলেন স্থানীয় যুবকেরা। এ দিন সকালে সেই বাঁধ টপকে জল এসেছে। গ্রামের মাঝখান দিয়ে যাওয়া চওড়া কংক্রিটের রাস্তাটা প্রায় হাঁটু জলের নীচে চলে গিয়েছে। সকালে হাতে হাত লাগিয়ে ওই রাস্তার ধারে আবার
মাটি ফেলে জল আটকানো হয়েছে। কিন্তু সেই মাটি কতক্ষণ থাকবে জানেন না কেউই।

স্থানীয় যুবক পিন্টু মণ্ডল বলেন, “রাত থেকে সকলে মিলে জল আটকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। জলের যা গতি, রাতের মধ্যেই হয়তো আরও কিছু এলাকা ভাসবে।”

দেবীপুর ছাড়াও, কুলতলির দেউলবাড়ি, শ্যামনগর-সহ বহু এলাকায় জল ঢুকেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আনাজ চাষে। শ্যামনগরের বাসিন্দা মুতালেব লস্কর, ফরিদ আলি জমাদাররা জানান, বিঘের পর বিঘে জমিতে উচ্ছে, ঢেঁড়শের চাষ হয়েছিল। সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ দিন শ্যামনগরে গিয়ে দেখা গেল, ফ্লাড শেল্টারের অনেকটা জলের নীচে। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া অনেকেই জানান, সকাল থেকে খাবারের ব্যবস্থা হয়নি। মেলেনি শুকনো খাবারও। শিবিরে খাবার না পেয়ে জলে ডোবা বাড়িতেই ফিরে যান অনেকে। বছর পঞ্চাশের জরিনা বিবি বলেন, “বাচ্চাগুলো না খেতে পেয়ে কাঁদছিল। বাধ্য হয়ে বাড়ি নিয়ে এসে কোনওরকমে দু’টো ভাত ফুটিয়ে খাওয়ালাম।”

স্থানীয় বিধায়ক গণেশ মণ্ডল, সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল এ দিন কয়েকটি বানভাসি এলাকা ঘুরে দেখেন। সাংসদ বলেন, “প্রচুর শুকনো খাবার, জলের পাউচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু দুর্গম ও জলে ডোবা এলাকাগুলিতে পৌঁছতে একটু সমস্যা হচ্ছে। দ্রুতই সব জায়গায় খাবার পৌঁছে যাবে।”

Matla River Cyclone Yaas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy