Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গি ভয়ে গ্রাম-ছাড়া মানুষ, সৎকারেও লোক নেই দেগঙ্গায়

এক মাসও হয়নি, দেগঙ্গার কে এম চাঁদপুর আলি আকবরের মৃত্যু হয় জ্বরে। তাঁকে কবর দিতে জড়ো হয়েছিলেন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

শোকার্ত: ডেঙ্গিতে ছোট্ট রিয়ার মৃত্যু হওয়ার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার। বৃহস্পতিবার দেগঙ্গার হাদিপুরে। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: ডেঙ্গিতে ছোট্ট রিয়ার মৃত্যু হওয়ার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার। বৃহস্পতিবার দেগঙ্গার হাদিপুরে। নিজস্ব চিত্র

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১০
Share: Save:

শোক প্রকাশেরও লোক কমছে!

জ্বর-ডেঙ্গির আতঙ্কে দেগঙ্গা ছেড়ে ইতিমধ্যেই আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি পালিয়েছেন বহু মানুষ। এখন কেউ মারা গেলেও শ্মশানে বা কবরস্থানে যাওয়ার লোক তেমন নেই! মশার আতঙ্ক এতটাই।

এক মাসও হয়নি, দেগঙ্গার কে এম চাঁদপুর আলি আকবরের মৃত্যু হয় জ্বরে। তাঁকে কবর দিতে জড়ো হয়েছিলেন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু এখন মৃত্যু-মিছিল বেড়েই চলেছে। আতঙ্কে শোক প্রকাশ করতে বেরোতেও ভয় পাচ্ছেন গ্রামবাসী। বেশির ভাগ বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত। মশা তাড়াতে শ্মশানে বা কবরে মৃতদেহের পাশে ডিমের খোসা জ্বালিয়েও লাভ হচ্ছে না।

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত জ্বরে আরও চার জন মারা গেলেন দেগঙ্গায়। এর মধ্যে তিন জনকে বারাসত হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল আর জি কর হাসপাতালে। বেসরকারি ক্লিনিকে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির উল্লেখ থাকলেও হাসপাতাল তিন জনেরই মৃত্যুর কারণ অন্য লেখায় ক্ষোভ বেড়েছে। অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসায় গাফিলতি নিয়েও।

আরও পড়ুন: নতজানু ডেঙ্গি, লড়াইয়ে জয়ী মা ও মেয়ে

জ্বরে আক্রান্ত স্বামী রহিম মণ্ডলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজেই জ্বরে পড়েন বেড়াচাঁপা-২ পঞ্চায়েতের যাদবপুরের রাবেয়া বিবি (৩২)। পরিবার সূত্রে খবর, জ্বরে প্লেটলেট এতটাই কমে গিয়েছিল যে বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসকেরা রক্ত জোগাড় করতে বলেন। কিন্তু রক্ত মেলেনি। এর পরে রাবেয়ার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। তাঁকে আর জি করে স্থানান্তরিত করানো হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। রহিমের অভিযোগ, ‘‘সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত না থাকার জন্যই আমার স্ত্রী মারা গেলেন।’’

হাদিপুরের ঝিকরা-২ পঞ্চায়েতের দাসপাড়ার রিয়া দাসের (৮) মৃত্যুতেও একই অভিযোগ তার পরিবারের। রিয়ার বাবা রতন দাস জানান, বারাসত হাসপাতালে মেয়ের স্যালাইন শেষ হয়ে পাইপের মধ্যে রক্ত চলে যাচ্ছিল। চিকিৎসকেরা গুরুত্ব দেননি। রতনবাবু বলেন, ‘‘মেয়েটার নাক-মুখ দিয়ে যখন রক্ত বেরোলে ওঁরা কলকাতায় নিয়ে যেতে বলেন। মেয়েটা চিকিৎসাই পেল না।’’ বেড়াচাঁপা-১ পঞ্চায়েতের মির্জানগরের আমিন আলি মণ্ডলও (৫৩) জ্বরে মারা গিয়েছেন। ছেলে আরশাদুল হক বলেন, ‘‘রক্তের রিপোর্টে ডেঙ্গি থাকলেও আর জি করের চিকিৎসক আমাদের কথা শোনেননি। মৃত্যুর শংসাপত্রে লিখেছে বাবার সেপ্টিসেমিয়া হয়েছিল।’’ বেড়াচাঁপার সর্দারপাড়ায় ভাড়া থাকতেন আনাজ বিক্রেতা হাসান আলি (৩২)। শনিবার তাঁর জ্বর হয়। তাঁকে আর জি করে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই তিনি মারা যান।

মৃত্যু-মিছিল এবং জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এ ভাবে বেড়ে চলায় গ্রামবাসীদের ক্ষোভও তুঙ্গে। তাঁরা মনে করছেন, রাজ্য সরকারের আরও তৎপর হওয়া উচিত ছিল। তবে বৃহস্পতিবার দেগঙ্গার বেশ কিছু এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্য শিবির চলেছে বলে জানিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। দেগঙ্গা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ দিন ডেঙ্গি পরীক্ষার যন্ত্র বসাতে যান বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Deganga Death Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE