Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বিতর্ক তুঙ্গে, আলিমুদ্দিনে তৈরি জোট-রিপোর্ট

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, বামেদের সঙ্গে জোট থাকবে। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বও একই পথের পথিক। কিন্তু দলের রাজ্য কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগে সিপিএমের নিচু তলায় জোট-প্রশ্নে এখনও পেকে রয়েছে বিতর্ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০৩:১৩
Share: Save:

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, বামেদের সঙ্গে জোট থাকবে। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বও একই পথের পথিক। কিন্তু দলের রাজ্য কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগে সিপিএমের নিচু তলায় জোট-প্রশ্নে এখনও পেকে রয়েছে বিতর্ক। জেলা কমিটির একাংশ দলের অন্দরে জোটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বামফ্রন্টের শরিক দলগুলো আলিমুদ্দিনের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র আবার জোটের সিদ্ধান্তের পক্ষে জোরালো যুক্তি দিয়ে চলেছেন। তার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে জোটের পক্ষে ও বিপক্ষে বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের মত-যুদ্ধ। সপ্তাহান্তে সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, মানিক সরকারদের উপস্থিতিতে রাজ্য কমিটির বৈঠক বসার আগে বাম শিবির এখন এই বিতর্কেই সরগরম!

ভোটে সাফল্য না পাওয়ার পরে সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠকে জোটের বিষয়টি নিয়ে এক প্রস্ত কাটাছেঁড়া হয়েছে। প্রকাশ কারাট শিবিরের প্রবল চাপের মুখে পলিটব্যুরো বলেছে, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গৃহীত প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। একই সঙ্গে পলিটব্যুরো অবশ্য মেনে নিয়েছে যে, ভোটের পরে বাংলায় যে ভাবে শাসক দলের হামলা চলছে, সব গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট হয়েই তার মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু পলিটব্যুরোর বিবৃতির প্রথম অংশকে হাতিয়ার করে সূর্যবাবুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানোর প্রয়াসও জারি আছে। বলা হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে সর্বহারার মতবাদীদের জোট কী ভাবে মানা যেতে পারে? আর এই অসম্ভব সমঝোতাকে ন্যায্য বলে প্রতিষ্ঠা করতে সূর্যবাবুদের ব্যগ্রতাই বা কেন?

এই উত্তপ্ত আবহেই বুধবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে গোটা পরিস্থতির পর্যালোচনা হয়েছে। আগামী শনি ও রবিবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে পেশ করার জন্য রিপোর্টও চূড়ান্ত হয়েছে। ভোটের ফলাফলের প্রাথমিক বিশ্লেষণ করে সেখানে দেখানো হচ্ছে, বাম ও কংগ্রেস জোট ছিল বলেই বিরোধীরা এ বার ৭৭টি আসন পেয়েছে। জোট না থাকলে বিজেপি-র বিপদ আরও বাড়ত, তারাই দ্বিতীয় শক্তি হিসাবে উঠে আসত। তবে জোটের পক্ষে সওয়াল থাকলেও দলের সাংগঠনিক বিচ্যুতিও মেনে নিচ্ছেন রাজ্য নেতৃত্ব। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, ভোটে তুলনামূলক ভাবে অনুকূল পরিস্থিতি থাকলেও নিজেদের ভোট বুথ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাংগঠনিক ঘাটতি বহু ক্ষেত্রেই বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে বলে আলিমুদ্দিনের মত। জোট ঠিক না ভুল, এই নিয়ে বিতর্ক চালিয়ে সংগঠনকে আলগা ছেড়ে রাখলে চলবে না— এই মর্মে রাজ্য কমিটিতে হুঁশিয়ারি দিতে চান রাজ্য নেতৃত্ব।

তবে সূর্যবাবুদের জন্য স্বস্তির খবর, রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে জোট-বিরোধিতার সুর এখন আরও ক্ষীণ হয়ে এসেছে। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘ভোটের আগে যাঁরা আদর্শগত বা অন্য প্রশ্ন তুলে জোটের বিরুদ্ধে ছিলেন, তাঁদের অনেকেও এখন পক্ষে এসেছেন। তৃণমূল এবং বিজেপি-র মোকাবিলায় এটা ছাড়া যে পথ নেই, এই বাস্তবতা ধীরে ধীরে সকলেই বুঝছেন।’’ রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু অবশ্য শরিকদের সঙ্গে আলোচনার নির্যাস রিপোর্ট করেছেন। শরিক নেতৃত্বের বড় অংশ মনে করছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তাঁদের কোনও লাভ হয়নি। সিপিএম এখন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট রেখেই পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত চলবে কি না, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছে শরিকেরা। সেইমতো তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করবে।

রাজ্য কমিটির আগে বিভিন্ন জেলা কমিটির যা বৈঠক বা সাধারণ সভা হয়েছে, তাতে ছোট একাংশ জোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে রাজ্য পার্টি কেন্দ্রের কর্মিসভায় এক প্রবীণ সদস্য যেমন সূর্যবাবুকে প্রশ্ন করেছিলেন। প্রতি জেলাতেই সূর্যবাবু জোরালো ভাষায় ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, বাস্তবের প্রয়োজনে জোটের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। কেন্দ্রীয় কমিটি তার জন্য শাস্তি দিলে মাথা পেতে নেওয়ার কথাও বলছেন। জেলায় জেলায় একাংশের প্রশ্ন, রাজ্য কমিটির আগেই তা হলে কি নিজেদের মত দলের উপরে চাপিয়ে দিতে চাইছেন রাজ্য সম্পাদক? এমনকী, বাংলার বাইরে দিল্লি রাজ্য কমিটির এক সদস্য পর্যন্ত সোশ্যাল সাইটে জোট নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র পোস্ট করেছেন! যদিও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের জবাব, ‘‘চাপিয়ে দেওয়ার তো কোনও প্রশ্ন নেই! কোনও মতই কি ১০০% মানুষ মেনে নেয়? দলের কিছু কর্মীর প্রশ্ন আছে, থাকবেও। জেলার বৈঠকে তাঁদের প্রশ্ন শোনার পরে রাজ্য সম্পাদক জবাব দিচ্ছেন।’’ রাজ্য কমিটির বৈঠকেও জেলার প্রতিনিধিরা খোলাখুলি মতামত দেবেন বলে তিনি জানাচ্ছেন।

এর আগে ১৯৯৬ সালে জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রশ্ন, ২০০৪ সালে ইউপিএ-১ সরকারে যোগ বা সেই সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার নিয়েও সিপিএমের মধ্যে জোরদার বিতর্ক হয়েছিল। বিতর্ক হওয়া মানেই যে দল ভেঙে যাওয়া নয়, মনে করিয়ে দিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM alliance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE