লক-আপ চত্বরে ঢুকলেই বিকট দুর্গন্ধে বমি হওয়ার উপক্রম। সকালে ডিউটিতে গেলে আগে নাকে রুমাল জড়িয়ে এক গাদা জল আর ফিনাইল ঢালতে হয় পুলিশকর্মীদের। তাতেও দুর্গন্ধ যায় না। রুম ফ্রেশনার থেকে নিমপাতা— কোনও কিছুই বাদ রাখেন না কর্মীরা। এইভাবেই দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে বেহাল শিলিগুড়ি আদালতের লক-আপের একটি সেলের শৌচাগার। এতদিন তাও কোনওভাবে সামলে নেওয়া যেত, এখন একেবারেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। ফলে কাজের কয়েক ঘণ্টাতেই জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে তাঁদের। সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কোর্টে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মী থেকে মামলার জন্য মক্কেলের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া উকিল ও মুহুরিদের। তাঁদের দাবি, একাধিকবার ক্ষোভের কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। আদৌ কবে হবে? বা হবে কি না তা নিয়েও সদুত্তর মেলেনি। বন্দিদের এমন পরিবেশে রাখা অমানবিক বলে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের সদস্যরাও।
শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবীদের পক্ষে বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সম্পাদক চন্দন দে এর আগেও বহুবার অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান। তাঁর মতে সকালের দিকে কোনও মক্কেলের সঙ্গে দেখা করতে ঢোকাই যায় না লক-আপে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের বিচারক, শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সকলকে জানিয়েছি। কিন্তু কারও পক্ষ থেকেই কোনও রকম সদুত্তর পাইনি।’’ সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ল-ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় সরকারও। তিনিও কোর্ট লক-আপের শৌচাগার নিয়ে তিতিবিরক্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমরা উকিলদের, কোর্ট ইন্সপেক্টরদের বলি। আমাদের তো সরকারিভাবে কিছু বলার এক্তিয়ার নেই। যাঁদের বলি তাঁরা বলেন কি না আমাদের জানা নেই।’’ দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকারও শৌচাগারের মত অত্যাবশ্যকীয় জিনিস নিয়ে গড়িমসির নিন্দা করেন। তিনি জানান, মানবাধিকার কমিশনের ‘গাইডলাইন’ অনুযায়ী পুলিশ কমিশনারের উচিত নিয়মিত পরিদর্শন করা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে দু’একদিনের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সুরাহা করার জন্য পদক্ষেপ করার অনুরোধ জানাব।’’
যদিও এ বিষয়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। তবে কেন এতদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে শৌচাগার তার কোনও জবাব দেননি তিনি। তবে যে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় বন্দিদের রাখা হচ্ছে, তা অমানবিক বলে মনে করছে এপিডিআরও। সংগঠনের সদস্য বিবেক সরকার মঙ্গলবারই আদালত লক-আপে যাবেন বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা লক-আপে যাব। তা খতিয়ে দেখে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করব।’’
কোর্ট লক-আপের কর্মীরা জানিয়েছেন, লক-আপে দুটি সেল রয়েছে। ঢুকতে বাঁ দিকে প্রায় তিনশো বর্গমিটারের একটি ও ডান দিকে একটু ছোট আরও একটি সেল রয়েছে। বাঁদিকের সেলটিতে শৌচাগার দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। বিভিন্ন জিনিসে দীর্ঘদিন ধরে পাইপ আটকে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এমনকী সোপ ট্যাঙ্কের জল উঠে আসে ওই পাইপ দিয়েই। সব সময় নোংরা, অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকে। ফলে তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে রয়েছে। ফলে শৌচকর্ম করতে পাশের সেলে নিয়ে যেতে হয়। বারবার ঢোকানো-বার করাতে ঝুঁকি রয়েছে। এমন করেই শৌচকর্মের অজুহাতে বছর খানেক আগে এক বন্দি পালিয়ে গিয়েছিল বলে জানানো হয়েছে। আপাতত লক আপে মোট ৯ জন নিয়মিত ডিউটি করেন। এর মধ্যে ৩ জন এএসআই ও ৬ জন কনস্টেবল। এঁদেরই প্রাথমিক থেকে প্রায় সমস্ত ধাক্কাই সামলাতে হয়। ফলে কোর্ট লক আপ থেকে বদলি হওয়ার জন্যও আর্জি জানিয়েছেন এক কর্মী। এক কনস্টেবল বলেন, ‘‘পরিস্থিতি না বদলালে বদলির আবেদনের সংখ্যাটা যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy