Advertisement
০৬ মে ২০২৪

মমতা ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীকে হাতে পেতে সক্রিয় দিল্লি পুলিশ

তাঁকে হেফাজতে পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানাবেন বলে দিল্লির দুই পুলিশ অফিসার রবিবার রাতে যখন নথি নিয়ে কলকাতায় পা রেখেছেন, তার ঘণ্টাকয়েক আগেই ব্যারাকপুর আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী শিবাজি পাঁজা। এই অবস্থায় আজ, মঙ্গলবার ব্যারাকপুর আদালতেই হাজির হয়ে শিবাজিকে ‘ট্রানজিট রিমান্ডে’ নেওয়ার আবেদন জানাতে পারে দিল্লি পুলিশ। গত বছর জুলাই মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিনান্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (আইএফসিআই)-র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জীবন সিংহ দিল্লির দক্ষিণ কালকাজি থানায় অভিযোগ করেন, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে তাঁদের সংস্থা থেকে ১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন শিবাজি।

কলকাতায় দিল্লি পুলিশের দুই কর্তা। সোমবার।  নিজস্ব চিত্র

কলকাতায় দিল্লি পুলিশের দুই কর্তা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩০
Share: Save:

তাঁকে হেফাজতে পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানাবেন বলে দিল্লির দুই পুলিশ অফিসার রবিবার রাতে যখন নথি নিয়ে কলকাতায় পা রেখেছেন, তার ঘণ্টাকয়েক আগেই ব্যারাকপুর আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী শিবাজি পাঁজা। এই অবস্থায় আজ, মঙ্গলবার ব্যারাকপুর আদালতেই হাজির হয়ে শিবাজিকে ‘ট্রানজিট রিমান্ডে’ নেওয়ার আবেদন জানাতে পারে দিল্লি পুলিশ।

গত বছর জুলাই মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিনান্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (আইএফসিআই)-র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জীবন সিংহ দিল্লির দক্ষিণ কালকাজি থানায় অভিযোগ করেন, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে তাঁদের সংস্থা থেকে ১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন শিবাজি। ঋণ নেওয়ার সময় তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর সংস্থা আর-পি গ্রুপ অব কোম্পানিজ ‘চিরাগ’ কম্পিউটার তৈরি করে। তাঁদের কাছে বড়মাপের বরাত রয়েছে। সেই কারণেই ঋণ দরকার। দাবির সপক্ষে নথিও জমা দেন শিবাজি। জীবন সিংহের অভিযোগ, পরে দেখা যায় শিবাজি যে সব নথি জমা দিয়েছেন, তার সবই জাল! ওই ধরনের কোনও বরাতই ছিল না আর-পি কোম্পানিজের কাছে! এর পরেই শিবাজির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও নথি জালের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা।

এবং এই অভিযোগেই শনিবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে অভিবাসন দফতরের অফিসারেরা শিবাজিকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে, গভীর রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দিল্লি পুলিশের দাবি, ঋণ নেওয়ার সময় যে সব ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে শিবাজি পাঁজাকে পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর নামে লুক আউট নোটিস জারি করা হয়। শনিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ সফর সেরে দমদম বিমানবন্দরে নামার পরেই তাঁকে আটক করেন অভিবাসন দফতরের অফিসারেরা। নিয়মমাফিক রবিবার তাঁকে ব্যারাকপুর অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পেশ করা হয়। কিন্তু দিল্লি পুলিশ সময় মতো তথ্য নিয়ে কলকাতায় পৌঁছতে না পারায় তাঁকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন বিচারক। তিনি নির্দেশ দেন, ১০ মার্চের মধ্যে দিল্লির আদালতে হাজিরা দিতে হবে শিবাজিকে।

শিবাজিকে গ্রেফতারের খবর পৌঁছনোর পরেও তাঁরা কেন সময় মতো আদালতের কাছে তথ্য পৌঁছে দিতে পারলেন না, সেই প্রশ্নের কোনও যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি দিল্লি পুলিশের কর্তারা। শিবাজিকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার জন্য ফিরতি বিমানের টিকিট কেটে দিল্লি পুলিশের আর্থিক অপরাধ শাখার দুই অফিসার সন্তোষ ঝা এবং হাবিব খান কলকাতায় পৌঁছেছেন রবিবার রাতে। কিন্তু তার আগেই শিবাজি জামিন পেয়ে যাওয়ায় এ বার সক্রিয় হয়েছে দিল্লি পুলিশ। সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবার ব্যারাকপুর আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তারা শিবাজিকে ট্রানজিট রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানাতে পারে। এ দিন দিল্লি পুলিসের যুগ্ম-কমিশনার সতীশ গোলচা বলেন, “আমরা সোমবার ব্যারাকপুর আদালত থেকে সব নথি সংগ্রহ করেছি। নথি যাচাই করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক হবে।”

কলকাতায় আসা দিল্লি পুলিশের দুই অফিসার সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ হাজির হন বিমানবন্দর থানায়। সেখানে বিমানবন্দর থানার অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। শিবাজি পাঁজার অ্যারেস্ট মেমো ও কোর্টের নথিও নেন। বিমানবন্দর থানা থেকে বেরিয়ে ওই দুই অফিসার রওনা দেন শিবাজির প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের বাড়ির দিকে। দিল্লি পুলিশের একাংশের দাবি, শিবাজির বাড়ি যাওয়ার সময়ই ওই দুই অফিসারের কাছে ফোন আসে দিল্লি থেকে। এবং তাঁরা মাঝপথ থেকেই ফিরে আসেন।

দিল্লি পুলিশের এক কর্তা জানান, আদালত জামিন দিলেও শিবাজির বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি থাকবে। তাঁর ব্যাখ্যা, শিবাজি দিল্লির বাসিন্দা নন। তিনি কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন তা তাঁদের জানা সম্ভব নয়। তাই শিবাজির বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি থাকবে। তদন্তকারীদের দাবি, শর্তসাপেক্ষের বদলে শিবাজির চূড়ান্ত জামিন হলে তখনই নোটিস তুলে নেওয়া হবে।

তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে শিবাজি মন্তব্য করতে না চাইলেও তাঁর প্রাক্তন অংশীদার এবং আর-পি গ্রুপের বর্তমান কর্ণধার কৌস্তুভ রায় সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁদের সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়নি। তিনি দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে কোর্টে নির্দেশ অমান্যের পাল্টা অভিযোগ তোলেন। কৌস্তুভের অভিযোগ, “আমরা যখন টাকা ফেরত দিয়ে ঘুুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি, তখন এমন অসত্য অভিযোগ করে আমাদের উপরে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। আমরা চাপের কাছে নতিস্বীকার করব না।” তাঁদের বিরুদ্ধে আইএফসিআই-এর কর্তাদের একাংশ ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করে ঘটনার সিবিআই এবং ইডি-র তদন্ত দাবি করেন কৌস্তুভ। আইএফসিআই-এর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করার হুমকি দেন তিনি। কৌস্তুভ বলেন, “প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাব।” তবে কি তিনি শিবাজি পাঁজার পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন? কৌস্তুভের জবাব, “আমরা কারও পাশে দাঁড়াচ্ছি না। এতে রাজনীতির লড়াই নেই। কিন্তু আমার গায়ে কেউ কাদা ছেটালে আমিও ছাড়ব না!”

কৌস্তুভের বক্তব্য নিয়ে দিল্লি পুলিশের কর্তারা প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁদের এক পদস্থ কর্তার কথায়, “অভিযুক্তের বক্তব্যের কোনও জবাব আমরা দেব না। যা বলার আদালতেই বলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE