Advertisement
E-Paper

রোগীর সঙ্গে আচরণের পাঠ চাই মেডিক্যালে

দ্রুত রোগ নিরাময়ে ঠিকঠাক ওষুধ-পথ্যের পাশাপাশি চাই রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের মমতাময় আচরণ।চিকিৎসাশাস্ত্রের এই গোড়ার কথাটা এখন কার্যত আড়ালে চলে গিয়েছে বলে রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়পরিজনের অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:০৯

দ্রুত রোগ নিরাময়ে ঠিকঠাক ওষুধ-পথ্যের পাশাপাশি চাই রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের মমতাময় আচরণ।

চিকিৎসাশাস্ত্রের এই গোড়ার কথাটা এখন কার্যত আড়ালে চলে গিয়েছে বলে রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়পরিজনের অভিযোগ। এবং অভিযোগটা অনেক চিকিৎসকেরও। তাই চিকিৎসকদের একাংশের মধ্য থেকেই দাবি উঠছে, শুধু চিকিৎসা-পদ্ধতি শেখালে হবে না। রোগী এবং তাঁদের পরিজনের সঙ্গে আলাপ আর আচরণের ধরনটাও শেখানো হোক মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের।

সহৃদয় আচরণ তো দূরের কথা। জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে হামেশাই। চিন্তার কথা হল, বীরভূম-পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার মহকুমা হাসপাতাল থেকে এসএসকেএমের মতো প্রথম সারির সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল— সর্বত্রই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলছেন রোগী আর তাঁদের আত্মীয়স্বজন। অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এমনই ঘোরালো হয়ে ওঠে যে, জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে রোগীর পরিজনদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হাসপাতালে হাজির হতে হয় স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে।

ডাক্তার বা হবু ডাক্তারদের এই আচরণগত অসঙ্গতির কারণ কী?

চিকিৎসকদের একটি অংশের মতে, রোগীর প্রশ্নের উত্তর দিতে অনীহা বা খারাপ আচরণের কারণ যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব। এর মোকাবিলায় তাঁদের পরামর্শ, যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়টিকে চিকিৎসা-পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হোক। রোগের কথাটা রোগী এবং তাঁর আত্মীয়দের এমন ভাবে জানানো দরকার, যাতে তাঁদের কোনও রকম আচমকা-আঘাত না-লাগে। অতএব কী ভাবে সন্তর্পণে রোগ সম্পর্কে জানানো হবে, সেটা শেখানোর উপরে জোর দেওয়া হোক এমবিবিএস ক্লাসেই। তাঁরা এই দাবি জানিয়েছেন মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা এমসিআইয়ের কাছেও।

চিকিৎসক-রোগী সম্পর্ক কী ভাবে উন্নত করা যায়, রবিবার ‘মেডিকন ইন্টারন্যাশনাল ২০১৬’ সম্মেলনে সেই প্রসঙ্গ উঠল অনেকের বক্তৃতায়। সম্মেলনের আয়োজক পিয়ারলেস হাসপাতাল, রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব এডিনবরা এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ানস অব ইন্ডিয়ার রাজ্য শাখা।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অসুখ সারাতে হলে চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি তো বটেই। কী ভাবে রোগীর সঙ্গে কথা বলতে হবে, সেই বিষয়েও দক্ষতা থাকা দরকার। কারণ, শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতার মতো সংবেদনশীল বিষয়ে কী ভাবে কথা বলতে হয়, সেটা জানা না-থাকলে অনেক সময়েই সমস্যা বেড়ে যায়। রোগ ও রোগীর অবস্থা জানাতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রূঢ় হয়ে যান। যার ধাক্কায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন রোগী।

পিয়ারলেস হাসপাতালের যুগ্ম ম্যানেজিং ডিরেক্টর, চিকিৎসক সুজিত কর পুরকায়স্থের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রোগী কেমন আছেন, তা জানার জন্য ডাক্তারের পিছনে দৌড়তে হয় আত্মীয়দের। কোনও প্রশ্ন করতে হলে অনুমতি নিয়ে ভয়ে ভয়ে কথাটা পাড়তে হয়। ডাক্তার ও রোগীর মধ্যে এই সম্পর্ক অনভিপ্রেত। কেউ যখন হাসপাতালে ভর্তি থাকেন, সেই রোগী এবং তাঁর পরিবারের মানসিক অবস্থা কেমন হয়, সেটা ডাক্তারদের বোঝা উচিত। ‘‘চিকিৎসাবিদ্যা যাঁদের জানা নেই, তাঁদের কী ভাবে অসুখ ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হবে, সেটা শেখা দরকার ডাক্তারদের। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে,’’ আশা প্রকাশ করেন সুজিতবাবু। চিকিৎসক অশোকানন্দ কোনারের কথায়, ডাক্তারি পড়ুয়াদের বেশি করে হাতেকলমে কাজ শেখা দরকার। কাজ করতে গিয়ে মানুষে-মানুষে যোগাযোগেও প্রশিক্ষিত হবে।

চিকিৎসকদের আচার-আচরণ, নৈতিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে চিকিৎসার ধরন নিয়েও আলোচনা হয় এ দিনের সম্মেলনে। শরীরে কোনও উৎকট উপসর্গ দেখা দিলে অধিকাংশ মানুষ এখন ইন্টারনেট ঘেঁটে স্পেশ্যালিস্ট বা বিশেষজ্ঞের খোঁজ করেন। বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলেই ছোটেন কার্ডিওলজিস্টের কাছে। হাতে-পায়ে কোনও রকম টান অনুভব করলেই শরণাপন্ন হন স্নায়ুবিশেষজ্ঞের। চিকিৎসকদের একাংশের অভিজ্ঞতা, জেনারেল মেডিসিনের চিকিৎসকদের কাছে না-গিয়ে রোগী বা তাঁদের স্বজনেরা বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই হিতে বিপরীত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে সময় ও অর্থ। অনভিজ্ঞ সাধারণ মানুষ সব উপসর্গ বুঝতে পারছেন না। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠিক স্পেশ্যালিস্টের কাছে যাচ্ছেন না।

এ দিনের সম্মেলনে চিকিৎসকেরা জানান, মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। জেনারেল মেডিসিনের চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়াটাই অসুখ সারানোর প্রথম ধাপ। যদি কোনও বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া দরকার মনে হয়, সেটা ঠিক করবেন সেই চিকিৎসক। ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব এডিনবরার সভাপতি, অধ্যাপক ডেরেক বেল জানান, চিকিৎসা ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা বিশ্ব জুড়ে একই রকম। ভারতের মতো বিলেতেও ইন্টারনেট ঘেঁটে ডাক্তারি করার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ডাক্তারি পড়ুয়ারা জেনারেল মেডিসিন পড়ার ইচ্ছে খোয়াচ্ছেন। ‘‘কিন্তু ব্যাকরণ না-জানলে সাহিত্য পড়া যায় না। একই ভাবে মেডিসিন সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না-থাকলে প্রতিষেধকের নিপুণ প্রয়োগে যথাযথ চিকিৎসা করা মুশকিল,’’ বলছেন ডাক্তার বেল।

Junior doctor Patients
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy