প্রতীকী ছবি।
কয়েক দিন ধরে জ্বর চলছিল। এক দিন সকালে হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে দেখা গেল, মাটিতে পা ফেলা যাচ্ছে না। কিছুতেই নাড়ানো যাচ্ছে না দু’টি পা। গায়ে জ্বর। রয়েছে গাঁটে গাঁটে ব্যথাও। বাড়ির অভিজ্ঞ চিকিৎসক উপসর্গ দেখে জানালেন চিকনগুনিয়া। রক্ত পরীক্ষা করে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
রক্ত পরীক্ষায় রিপোর্ট দেখে হতবাক চিকিৎসক। চিকনগুনিয়া নয়। এলাইজা পরীক্ষায় যে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে! চিকনগুনিয়ার ক্ষেত্রেও প্রাথমিক ভাবে রোগী হাঁটাচলা করতে অক্ষম হলেও, তাতে মৃত্যুর ভয় নেই। কিন্তু ডেঙ্গি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাচ্ছে। ওই রোগীর রক্তের প্লেটলেট প্রতি দিন মাপার নিদান দিলেন চিকিৎসক।
ডেঙ্গির যে সব উপসর্গ চিকিৎসা বিজ্ঞানের বইয়ে দেওয়া রয়েছে, তার বাইরে আরও অনেক উপসর্গ দেখা দিচ্ছে ইদানীং। যা অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের চোখেও ধোঁয়া দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই উপসর্গ ইনফ্লুয়েঞ্জার দেখে চিকিৎসক সেইমতো চিকিৎসা করছেন। কিন্তু রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওায় পরবর্তী রক্ত পরীক্ষায় পাওয়া যাচ্ছে ডেঙ্গির জীবাণু। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যাচ্ছে, উপসর্গ সব ডেঙ্গির। কিন্তু বারবার রক্ত পরীক্ষার পরেও ডেঙ্গি ধরা পড়ছে না। তাতে বিভ্রান্তি আরও বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
জ্বর আসছে হঠাৎ করে। উঠে যাচ্ছে ১০৩-১০৪ ডিগ্রিতে। থাকছে চার-পাঁচ দিন। জ্বর কমার পরেও গায়ে দেখা যাচ্ছে লাল লাল ছোপ।
ওই লাল লাল ছোপ যে ডেঙ্গির অন্যতম উপসর্গ, তা এখন আর আম বাঙালির জানতে বাকি নেই। গায়ে লাল ছোপ দেখেই রক্ত পরীক্ষা করাতে ছুটছেন শহরবাসী। কেউ কেউ ভয়ে রোগীকে ভর্তিও করিয়ে দিচ্ছেন হাসপাতালে।
প্রাথমিক রক্ত পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আর এটাও যে ডেঙ্গিরই একটা উপসর্গ, তা-ও সকলের জানা। তাই ভয়টা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার গায়ে লাল চাকা দাগ দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু গাঁটে গাঁটে ব্যথা হচ্ছে। ডেঙ্গি বা চিকনগুনিয়ার ক্ষেত্রে যেমন হয়। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট এলে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গিও নয়, চিকুনগুনিয়াও নয়, ম্যালেরিয়াও নয় আবার ইনফ্লুয়েঞ্জাও নয়। বিভ্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক, ভোগান্তি বাড়ছে রোগীর।
ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়াদের মতো পরজীবীদের নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁরাও বর্তমান জ্বরের
চরিত্র ও তার কারণ নিয়ে ধন্দে রয়েছেন। পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর ব্যাখ্যা, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় সব রোগ জীবাণু প্রতিনিয়ত নিজেদের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়েই চলেছে। এমনও হতে পারে ডেঙ্গি আর চিকনগুনিয়ার জিন নিয়ে নতুন এমন এক প্রজাতির জীবাণু তৈরি হয়েছে যার উপসর্গ চিকনগুনিয়ার, অথচ সেটি আসলে ডেঙ্গি। রক্ত পরীক্ষায় যে সব ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট রোগ ধরা প়ড়ছে না, সেগুলির ক্ষেত্রেও কোনও সঙ্কর প্রজাতির জীবাণুর সংক্রমণ ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এমতাবস্থায় নিজেদের মতো করে চিকিৎসকদের অনেকেই একটি চিকিৎসা পদ্ধতি (ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল) তৈরি করে ফেলেছেন। ওই সব চিকিৎসকের অধিকাংশই বলছেন, প্যারাসিটামলই হল অজানা প্রকৃতির ওই জ্বরের আসল চিকিৎসা। যদি রোগী অধিক দুর্বল হয়ে পড়েন কিংবা গায়ে লাল লাল ছোপ দেখা যায়, তা হলে হাসপাতালে ভর্তি করে কিংবা বাড়িতেই স্যালাইনের ব্যবস্থা করলে সুস্থ করা যাবে ওই রোগীকে।
বিভিন্ন জীবাণুর দ্রুত তবে জিনগত পরিবর্তনের ফলে টিকাকরণ কর্মসূচি ব্যাহত হবে কি না, তা নিয়ে কিন্তু চিকিৎসক-গবেষকদের অনেকেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘সোয়াইন ফ্লুর যে টিকাটি গত বছর এ দেশে দেওয়া হয়েছিল, সেটিও কাজ না করার কারণ ওই একই।
যে প্রজাতির সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের নিরিখে টিকাটি তৈরি হয়েছে, সেটি ভারতবর্ষে ২০১৩ সালে সক্রিয় ছিল। ২০১৪ আর ২০১৫ সালে যে প্রজাতির সোয়াইন ফ্লু-র সংক্রমণ হয়েছিল, সেগুলি আলাদা। তাই টিকা দিয়েও রোগ ঠেকানো যায়নি।’’ সে জন্যই ডেঙ্গির টিকাকরণ পদ্ধতি এখনও চালু করা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন ওই অভিজ্ঞ চিকিৎসক-গবেষক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy