Advertisement
০২ জুন ২০২৪
সতর্কতা জরুরি বয়স্কদের নিয়ে

অন্য রোগে কাহিল হলে বেশি মারাত্মক ডেঙ্গি

যাঁরা আগে থেকেই লিভার ও কিডনির রোগে ভুগছেন কিংবা ডেঙ্গি, ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার মতো রোগে যাঁদের দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে, তাঁদের বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০০
Share: Save:

যাঁরা আগে থেকেই লিভার ও কিডনির রোগে ভুগছেন কিংবা ডেঙ্গি, ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার মতো রোগে যাঁদের দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে, তাঁদের বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বিশেষ করে সাবধান হওয়া দরকার বয়স্কদের ক্ষেত্রে। কারণ এমনিতেই তাঁদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তার উপরে ডেঙ্গি বা ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ হলে প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক সময় ঝপ করে কমে যায়। হঠাৎ করে সেই ধাক্কা শরীর নিতে পারে না।

রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গিতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। তাঁদের মধ্যে এক জন ৬৫ বছরের বৃদ্ধা। তিনি আগে থেকেই ক্যানসারে ভুগছিলেন। দ্বিতীয় জন ৪০ বছরের মহিলা। ডেঙ্গির শক সিনড্রোমে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তমলুক জেলা হাসপাতালে ৭২ বছরের এক বৃদ্ধ মারা গিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। টাইফয়েড-আক্রান্ত ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে তাঁর রক্তে ডেঙ্গি মিলেছিল বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। ডেঙ্গি সংক্রমণের কথা অবশ্য হাসপাতাল সুপার এবং জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা মানতে চাননি।

স্বাস্থ্য দফতরের ডেঙ্গিতে মৃত্যুর রেকর্ডে এই তিন জনের কারও নামই নেই। ঠিক যেমন শ্রীরামপুরের অমিত দাসের নামও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ডেঙ্গিতে মৃতের তালিকায় নেই। অমিতের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল। তবু কেন তাঁর মৃত্যুকে ডেঙ্গি-মৃত্যু বলতে চাইছে না রাজ্য? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথি বলেন, ‘‘অমিতের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিললেও তাঁর মৃত্যু হয়েছে সিরোসিস অব লিভারে।’’

রবিবার রাজ্যে নতুন করে আরও ২৩৯ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছুঁই ছুঁই। সরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ২০।

সরকারি সূত্রের খবর, দাসপুরের খেপুত গ্রামের বাসিন্দা সন্ধ্যা নাগ (৬৫) ব্যারাকপুরে তাঁর বড় মেয়ের বাড়িতে গিয়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। জ্বর ও অন্য উপসর্গ দেখা দেওয়ায় গত ১৫ অগস্ট সন্ধ্যাদেবীকে ব্যারাকপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, রক্ত পরীক্ষায় তাঁর ডেঙ্গি ধরা পড়ে। হাসপাতালেই তাঁর প্লেটলেট দ্রুত নামতে থাকে। শুক্রবার সন্ধ্যাদেবীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। শনিবার তিনি মারা যান। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “ব্যারাকপুরের হাসপাতালে সন্ধ্যাদেবীর চিকিৎসা চলছিল। ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। ফলে তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কমে গিয়েছিল। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার পর প্লেটলেটও কমে যাওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।”

হাওড়ার মধুসূদন দাস বাই লেনের বাসিন্দা বীণা মাঝি (৪০) ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার একটি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন বলে সরকারি সূত্রের খবর। মহিলার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার জ্বর নিয়ে বীণাদেবীকে দক্ষিণ হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রবিবার রাতে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পথেই মারা যান বীণাদেবী। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গি শক সিনড্রোমে মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার।

জ্বরে আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যুর কারণ নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। মৃতের নাম বিনোদ পড়ুয়া (৭২)। তাঁর বাড়ি ভগবানপুর থানার তেঠিবাড়ি গ্রামে। গত বুধবার জ্বর নিয়ে তমলুকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন বিনোদবাবু। হাসপাতালে ভর্তির পর পরীক্ষা করে তাঁর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে প্রথমে বলা হয়েছিল। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই বৃদ্ধ টাইফয়েডে ভুগছিলেন বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের খবর।

স্বাস্থ্য ভবন জানাচ্ছে, ডেঙ্গি ম্যালেরিয়ায় কারও মৃত্যুর খবর এলেই ওই রোগীর বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে তাঁর বাড়িতে মেডিক্যাল টিম পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিটি জেলাকে। সংশ্লিষ্ট পুরসভা বা পঞ্চায়েতকে ওই এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার লার্ভা খুঁজে দেখতে বলা হয়েছে। নতুন কোনও মশার প্রজাতি ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে সেই খবর পাঠাতে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE