রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীটির জ্বর ও মাথা ব্যথা শুরু হয়েছিল শনিবার। সল্টলেকের হস্টেল থেকে তাঁর পরিবার তরুণীকে নিয়ে চলে যান জয়রামবাটির বাড়িতে। স্থানীয় ল্যাবোরেটরিতে প্রাথমিক রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। সোমবার ওই তরুণী সৃজা ঘোষের খিঁচুনি শুরু হয়। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। কলকাতায় নিয়ে আসার পথে মৃত্যু হয় স়়ৃজার।
বালিগঞ্জ স্টেশন রোডের বাসিন্দা সাত বছরের রাই সাহা-র জ্বর এসেছিল তিন-চার দিন আগে। পরে সেই জ্বর অল্প একটু কমেছিলও। বাড়ির লোক জানিয়েছেন, আচমকাই সোমবার তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ওই দিনই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ইএম বাইপাসের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভর্তির সময়েই দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রী ‘হেমারেজিক শক’ এ চলে গিয়েছিল। তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলেই রাই মারা যায়।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে উত্তর শহরতলি সিঁথি এলাকার এক আবাসনে ৫৯ বছরের এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা। এক দিনে জ্বরে আক্রান্ত এই তিনটি মৃত্যুর খবর এসেছে স্বাস্থ্য ভবনে। স্বাস্থ্য ভবন প্রবীণের মৃত্যুর কারণকে ডেঙ্গি বলে স্বীকার করলেও, সৃজা এবং রাইয়ের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে। বাইপাস সংলগ্ন যে হাসপাতালে রাইয়ের চিকিৎসা হয়েছে, তারা জানিয়েছে— শিশুটির রক্তের এনএস-১ এবং আইজিএম, দু’টি পরীক্ষাতেই ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। আবার স়ৃজার পরিবারের দাবি, এনএস-১ পরীক্ষায় ওই তরুণীর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। আইজিএম পরীক্ষার সুযোগই পাননি তরুণীর পরিবার।
জ্বর যে ভাবে সময় না-দিয়েই সৃজা এবং রাইয়ের জীবন কেড়ে নিয়েছে, তাতে বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছে, ডেঙ্গ-২ প্রজাতির ডেঙ্গি ভাইরাস-ই এই মৃত্যুর জন্য দায়ী। ওই ভাইরাস দ্রুত শরীরে জলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, নীরবে শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ শুরু করিয়ে দেয় এবং রোগী দ্রুত শক সিন্ড্রোমে চলে যায়।
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ১৪। রক্তে ডেঙ্গি পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে ১ হাজার ৭৪২ জনের। এর মধ্যে আজই ১৫৮ জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গি মিলেছে। এ বছরে এখনও পর্যন্ত কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২৬০। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়েছেন, কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ, ১৩৭ জনের ঠিকানার ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতর এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। এর মধ্যে বালিগঞ্জ এলাকার সাত বছরের রাই এবং সৃজাও রয়েছে।
কলকাতায় যে ভাবে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে মহানগরী থেকে রোগ অন্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে গত শনিবার থেকে তপন রায় নামে এক যুবক ভর্তি রয়েছেন। তিনি কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। কলকাতায় থাকাকালীন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর রক্তে ডেঙ্গির ভাইরাস পাওয়ার পর বাড়ির লোক তপনকে জলপাইগুড়ি নিয়ে যান। স্বাস্থ্য দফতর সূত্র জানাচ্ছে, সৃজাও কলকাতায় থাকাকালীনই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
রাইয়ের রক্ত পরীক্ষায় (এনএস-১ এবং আইজিএম) হেমারেজিক ডেঙ্গি পাওয়া গেলেও, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ কিন্তু ডেথ সার্টিফকেটে ডেঙ্গির কথা উল্লেখ করেননি। সেখানে লেখা হয়েছে ‘ভাইরাল হেমারেজিক ফিভার’। কেন ডেঙ্গি লেখা হয়নি তার কোনও সদুত্তরও দিতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনিও বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এখনও কোনও কাগজ আসেনি। সে সব না-দেখে মন্তব্য করব না।’’ তবে এই টানাপড়েনের মধ্যেও রাইয়ের চোখ দু’টি দান করেছেন তার পরিবার।
রাজ্যের এই ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে কিট সঙ্কট। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই কিটের অভাবে থমকে যাচ্ছে রক্তপরীক্ষা। শুধু তাই নয়, মেদিনীপুরে ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য যে তিনটি অ্যালাইজা যন্ত্র রয়েছে, তার একটি খারাপ। ইঁদুরে কেটে দিয়েছে ওই যন্ত্রের পাইপ। অগত্যা দু’টি যন্ত্র দিয়েই কাজ সারতে হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy