মেডিক্যাল কলেজ স্তরের সর্বোচ্চ চিকিৎসা পরিকাঠামোয় যদি কোনও বিভাগে রোগী ভর্তি ও রোগীর জটিল অস্ত্রোপচারই করা না যায়, তা হলে সেই বিভাগ রাখার অর্থ কী?
রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতালের দন্ত বিভাগ নিয়ে এই প্রশ্ন তুলেছেন সেখানকার চিকিৎসকদেরই একাংশ।
খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার নির্দেশ দিয়েছেন, রোগীদের রেফার করে দায় এড়ানো চলবে না। সেখানে এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষ নির্লিপ্ত ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন, দাঁতের বিভাগে কোনও শয্যা বা অপারেশন থিয়েটারের ব্যবস্থা তাঁরা করবেন না। বিভাগীয় চিকিৎসকদের একমাত্র কাজ হবে শুধু আউটডোরে রোগী দেখা এবং অপারেশন কেস পেলে সোজা শিয়ালদহের আর আহমেদ ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে দিয়ে দায়মুক্ত হওয়া।
এসএসকেএমের মতো রাজ্যের অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও দাঁতের চিকিৎসার পরিকাঠামো এখনও উন্নত নয়। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তনে চলতি বছরই বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে দাঁতের জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য ১২ জন ম্যাক্সিলোফেশিয়াল সার্জন নিয়োগ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। নিয়োগ এখনও চলছে। অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো তৈরি করার নির্দেশও দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
তার পরেও এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ যে ভাবে সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিচ্ছেন, সার্জন পেয়েও তাঁরা শয্যা বা ওটি-র পরিকাঠামো তৈরি করবেন না, তেমন আর অন্য কোনও মেডিক্যাল কলেজে দেখা যায়নি। হাসপাতাল সূত্রেরই খবর, দাঁতের বিভাগে এক জন প্রোফেসর, এক জন ম্যাক্সিলোফেশিয়াল সার্জন ও চার জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনির আউটডোর করা এবং দাঁত তোলা ছাড়া কোনও কাজ নেই। বেলা দেড়টাতেই বিভাগের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। দাঁত ও মাড়ির আলসার, ক্যানসার, দুর্ঘটনা বা আঘাতের ফলে হওয়া ক্ষত বা বিকৃতি নিয়ে রোগীরা এলে রেফার হতে হয় আর আহমেদ হাসপাতালে।
আর আহমেদে এই ধরনের অস্ত্রোপচারের রোগীদের জন্য শয্যা মোটে ১০টি। ফলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীদের মতো এসএসকেএম থেকে রেফার হওয়া রোগীদের সেখানে অস্ত্রোপচার করাতে হেনস্থা হতে হয় বহু ক্ষেত্রেই। ভর্তির অপেক্ষায় থেকে কারও ক্যানসার আরও ছড়িয়ে পড়ে, দুর্ঘটনায় আহতের ক্ষত চিরস্থায়ী হয়ে যায়।
কোন্নগরের বাসিন্দা এমনই এক রোগী গোপাল দাসকে গত ১ অক্টোবর এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ থেকে রেফার করা হয়েছিল আর আহমেদে। রেফারাল কাগজটি কোনও ভাবে এসএসকেএমের দন্ত বিভাগের কিছু চিকিৎসকের হাতে পড়ে। সেই কাগজেই তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখে পাঠান—‘শুধু একটি অপারেশন থিয়েটার আর কিছু শয্যা থাকলে এ রকম অপারেশন তাঁরাই করতে পারেন।’
ওই চিকিৎসকদের কথায়, প্রতিদিন তাঁদের আউটডোরে ৫৫-৬৫ জন রোগী হয়। এঁদের মধ্যে অন্তত ১২-১৩ জনের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। এসএসকেএমে শয্যা এবং ওটি মিললে মাসে এমন অন্তত ১৮-২০টি অস্ত্রোপচার তাঁরা করতে পারতেন। তাঁদের প্রশ্ন, সরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী যেখানে কোনও ত্রুটি রাখছেন না, তা হলে এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষের কোথায় সমস্যা হচ্ছে?
বিভাগের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘মাঝে মধ্যে আমরাই উদ্যোগী অন্য বিভাগের ওটি ধার নিয়ে কিছু কিছু কেস করছি। আমাদের বিভাগে ওটি দূর অস্ত্, একমাত্র এক্স-রে মেশিনটিও দীর্ঘদিন খারাপ হয়ে পড়ে। আউটডোরে আসা রোগীদের বাইরে থেকে ৫০০-৬০০ টাকা দিয়ে এক্স রে করতে হয়। ৭ লক্ষ টাকার দু’টি ডেন্টাল চেয়ারও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পড়ে ধুলো মাখছে।’’
বিভাগীয় চিকিৎসদের একাংশেরই অভিযোগ, ‘‘প্রশাসনিক স্তরের কিছু লোকের সঙ্গে কিছু কর্পোরেট হাসপাতালের যোগসাজশ রয়েছে। তাঁরাই চাইছেন না, এসএসকেএমে দাঁতের এই জটিল অস্ত্রোপচার হোক। আসলে এসএসকেএম থেকে রোগীদের ওই সব হাসপাতালে রেফার করার একটা চক্র কাজ করছে।’’
সেই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন অধ্যক্ষ মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জবাব, ‘‘এসএসকেএমে দাঁতের চিকিৎসার পাঠ্যক্রম পড়ানো হয় না। ফলে এমসিআইয়ের নিয়মানুযায়ী, এখানে শয্যা রাখা বা বড় অস্ত্রোপচার করা বাধ্যতামূলক নয়। আমাদের সে রকম পরিকল্পনাও নেই। শিয়ালদহ বেশি দূরে নয়, যার দরকার সে আর আহমেদ হাসপাতালে চলে যাবে।’’
কিন্তু সেখানে যদি রোগী শয্যা না পান কিংবা বহুদিন বাদে ওটি-র ডেট মেলে? এ বার অধ্যক্ষের উত্তর, ‘‘সেটা আমাদের ভাবার বিষয় নয়। স্বাস্থ্য দফতর ভাবুক।’’ একই সুরে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এখনই মেডিক্যাল কলেজগুলিতে বড় অস্ত্রোপচার শুরু করা বা শয্যার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। পরে ভাবা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy