দেশের শীর্ষ আদালত তাঁদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ স্বীকৃতি দিয়েছিল প্রায় এক বছর আগে। বিচারপতিরা বলেছিলেন, এই মানুষদের আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া হিসেবে গণ্য করে তাঁদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।
সুপ্রিম কোর্টের ওই আদেশের পর তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পর্ষদ গঠন করেছিল তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্র সরকার।
বুধবার তাঁদের জন্য উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের কথা ঘোষণা করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রূপান্তরকামীদের পাশাপাশি হিজড়ে বা বৃহন্নলাদেরও এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘রূপান্তরকামী উন্নয়ন পর্ষদ’ (ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) গঠনের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।
বৈঠকের পর রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্র সরকার পর্ষদের নামের সঙ্গে ‘ওয়েলফেয়ার’ বা ‘কল্যাণমূলক’ শব্দটি রেখেছে। আমরা তা করিনি। আমরা ওঁদের সাহায্য করতে চাই না, অধিকার দিতে চাই।” সরকারের এই সিদ্ধান্তে রূপান্তরকামীরা মোটের উপর সন্তুষ্ট হলেও তাঁদের দাবি পর্ষদ নয়, সরকার তাঁদের জন্য পৃথক একটি দফতর তৈরি করুক।
‘অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রান্সজেন্ডর-হিজড়া ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর অধিকর্তা রঞ্জিতার প্রশ্ন, তফসিলি জাতি-উপজাতি, মহিলা-শিশুদের জন্য যদি পৃথক দফতর থাকতে পারে, তা হলে রূপান্তরকামীদের জন্য থাকবে না কেন?”
তাঁর কথায়, “এমনিতেই বেশিরভাগ মানুষ আমাদের সমস্যাগুলি নিয়ে ঠাট্টা করেন। এখন অন্য দফতরের আওতায় (নারী ও শিশুকল্যাণ) উন্নয়ন পর্ষদকে রেখে দিলে আসল সমস্যাগুলি অমীমাংসিতই থেকে যাবে।” ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউন্যাকস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’-র সচিব অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, “রূপান্তরকামী-হিজড়েদের প্রতিভার খামতি নেই। তাঁরাও অন্য মানুষের মতো। আমরা চাই নারী-পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সর্বক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় নামতে এবং নিজেদের অধিকার অর্জন করতে। আশাকরি, পর্ষদ সেই কাজে আমাদের সাহায্য করবে।”
চেয়ারম্যান-সহ ১২ জনের উন্নয়ন পর্ষদে রূপান্তরকামী এবং তাঁদের নিয়ে কাজ করছে এমন সংস্থার প্রতিনিধিদের রাখার কথা ভাবা হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। পর্ষদ রূপান্তরকামীদের চিহ্নিত করে তাঁদের পরিচয়পত্র দেবে। এর পাশাপাশি ন্যূনতম পরিষেবা হিসেবে তাঁদের স্বাস্থ্য-শিক্ষা-বাসস্থান দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন তাঁরা। উন্নয়ন পর্ষদের মেয়াদ হবে তিন বছর। তার পরে ফের নতুন পর্ষদ গঠিত হবে। প্রথম বছরে উন্নয়ন পর্ষদের পরিকাঠামো তৈরি করে কাজ শুরু করতে ৭৫ লক্ষ টাকা দেবে সরকার। পরের দু’বছরে বরাদ্দ থাকবে ৪৫ লক্ষ টাকা করে।
পর্ষদের সঙ্গে সরকারের সমন্বয় তৈরি করতে একটি ‘কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। এর চেয়ারপার্সন হবেন মন্ত্রী নিজে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, অনগ্রসর কল্যাণ, স্কুলশিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা এবং আইন দফতরের প্রতিনিধিদের রাখা হবে এই কমিটিতে। থাকবেন রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ, স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি, মহিলা কমিশন ও শিশুরক্ষা কমিটির প্রতিনিধিরাও।
২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পরেও রাজ্য সরকার উদ্যোগী না হওয়ায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ছিলেন এ রাজ্যের রূপান্তরকামী ও হিজড়েদের একটা বড় অংশ। শেষ পর্যন্ত সরকার নড়ে বসার পর কোর্টের নির্দেশের যথার্থ বাস্তবায়ন কী ভাবে হয়, সেটাই এখন দেখতে চান তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy