পালাবদলের পরে কার্যত কল্পতরু হয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ইমাম-মোয়াজ্জেম ভাতা। যা দেখে বিরোধীরা কটাক্ষ করেছিল— এ সবই ভোটের কথা মাথায় রেখে নিছক ‘ফাঁকা প্রতিশ্রুতি’।
ভাতা অবশ্য চালু হয়েছিল। ইসলাম ধর্ম চর্চার সঙ্গে যুক্ত ইমাম-মোয়াজ্জেমদের অনেকেই তা পেয়েও ছিলেন। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল তা। প্রাপ্তি নিয়ে ভ্রূ কুঁচকে ছিল তাঁদের। জেলার আনাচ কানাচ থেকে খবর আসতে শুরু করেছিল শুরু হয়েও থমকে গিয়েছে ‘ইমাম- ভাতা’।
সম্প্রতি, সেই ক্ষোভ ফের এক বার উস্কে উঠেছে বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে। দিন কয়েক আগে, যার জেরে সরকারি অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন রামপুরহাট-সহ জেলার বিভিন্ন মহকুমার ইমাম মোয়াজ্জেম কল্যাণ সমিতির সদস্যেরা। তাঁদের দাবি, কাগজে-তলমে ভাতা দেওয়ার দাবি করলেও সরকারি সেই অনুদান ইমামদের হাতে পৌঁছচ্ছে না। তাঁদের অভিযোগ, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ‘সরকারি ভাষণে’ই সীমাবদ্ধ। তা নিয়ে নিয়মিত সেমিনার হচ্ছে বটে, কিন্তু ইমাম ভাতা কিংবা সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে সংখ্যালঘুদের ‘প্রাপ্তি যোগ’ শূন্যই রয়ে গিয়েছে।
রামপুরহাট মহকুমা ইমাম-মোয়াজ্জেম কল্যাণ সমিতির সম্পাদক শফিকুল আলমের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যালঘু উন্নয়নে একশো শতাংশ কাজ হয়েছে বলে বিভিন্ন সভায় দাবি রাখছেন বটে। তাঁর কথা শুনে আমলারাও দাবি করছেন, সংখ্যালঘু উন্নয়নে একশো শতাংশ কাজ হয়েছে। কিন্তু আদপে আমাদের মাথা কুটে মরতে হচ্ছে সরকারি দফতরে।’’ শনিবার, তার জেরেই রামপুরহাট রক্তকরবী মঞ্চে আয়োজিত সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে সচেতনতা শিবির বয়কট করলেন মহকুমার অধিকাংশ ইমাম মোয়াজ্জেম।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর বিশ্ব নবি দিবসের প্রস্তুতি নিয়ে রামপুরহাট থানা সংলগ্ন বড় মসজিদে রবিবার একটি আলোচনা সভা ছিল। সেখানেও ইমামদের মুখে শোনা গিয়েছে একই অভিযোগ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রামপুরহাট মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তের ইমামেরা। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘ওয়াকফ বোর্ড থেকে ইমাম, মোয়াজ্জেমদের যে সাম্মানিক দেওয়া হয়, সেই ভাতা জেলার অধিকাংশ ইমাম, মোয়াজ্জেমই পাচ্ছেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে মসজিদ কমিটির দোহাই দিয়ে ইমাম, মোয়াজ্জেমদের সাম্মানিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবং অভিযোগ জানাতে গেলে ছুটতে হচ্ছে মুর্শিদাবাদ। কারণ, ওই দায়িত্বে যিনি রয়েছেন, তিনি বীরভূমের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও নিবাস তাঁর মুর্শিদাবাদ।’’ অভিযোগ, তিনি নিজেও ইমাম নন, নিছকই মুর্শিদাবাদের উমরপুরের একটি বেসরকারি মাদ্রাসার শিক্ষক।
রামপুরহাট-২ ব্লকের ইমাম মোয়াজ্জেম কল্যাণ সমিতির ব্লক প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘‘জেলার দায়িত্ব দেওয়ার সময় কোনও ইমাম-মোয়াজ্জেমের মতামত নেওয়া হয়নি। যিনি দায়িত্বে আছেন, তিনি সব সময় বাইরে থাকলে জেলার ইমাম-মোয়াজ্জেমদের উন্নয়ন হবে কী করে? ওঁর কাছ থেকে কোনও রকম সহযোগিতা জেলার ইমাম-মোয়াজ্জেমরা পাচ্ছেন না। এটা কি এক অর্থে আমাদের অপমান করা নয়!’’
এ ব্যাপারে, বীরভূম জেলার প্রতিনিধি আতিকুর রহমান অবশ্য বলছেন, ‘‘এখন আমি হয়দরাবাদে। পরে কথা বলব।’’ জেলা সংখ্যালঘু উন্নয়ন আধিকারিক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ইমাম-মোয়াজ্জেমরা সচেতনতা শিবির বয়কট করেছেন, এমন খবর আমার জানা নেই।’’ সমস্যা হলে জেলার ওয়াকফ বোর্ড প্রতিনিধির সঙ্গেই দেখা করার পরামর্শ তিনি দিচ্ছেন।
তবে কি বিরোধীদের সেই কটাক্ষ যথার্থ? জেলার এক ইমামের কথায়, ‘‘ভোট আসতে দিন, ফের কল্পতরু হয়ে উঠবে সরকার!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy