Advertisement
২০ মে ২০২৪
অসুস্থ ২০০ পড়ুয়া

বিতর্ক উস্কে সব স্কুলে বন্ধ কৃমির ওষুধ

বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল মাস পাঁচেক আগেও। তবে সে-বার কর্মসূচি বন্ধ হয়নি। বিতর্ক ফিরে এল। কিন্তু এ বার সব স্কুল-সহ সারা রাজ্যে বন্ধ করে দেওয়া হল শিশু-কিশোরদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর কর্মসূচি। জল ঢেলে দেওয়া হল লক্ষ লক্ষ টাকার আয়োজনে। প্রশিক্ষণে। আর প্রচারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৮
Share: Save:

বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল মাস পাঁচেক আগেও। তবে সে-বার কর্মসূচি বন্ধ হয়নি।

বিতর্ক ফিরে এল। কিন্তু এ বার সব স্কুল-সহ সারা রাজ্যে বন্ধ করে দেওয়া হল শিশু-কিশোরদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর কর্মসূচি। জল ঢেলে দেওয়া হল লক্ষ লক্ষ টাকার আয়োজনে। প্রশিক্ষণে। আর প্রচারে।

বৃহস্পতিবার ময়নাগুড়ি-সহ জলপাইগুড়ির বেশ কিছু স্কুলে কৃমির ওষুধ খেয়ে দুই শতাধিক শিশুর অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর আসার পরে রাজ্য সরকার ঝুঁকি নিতে চায়নি। বিকেলেই স্কুলশিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সব স্কুলে ওই কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। এক থেকে ১৯ বছরের ছেলেমেয়েদের ওই ওষুধ খাওয়ানোর কথা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত কৃমির ওষুধ খাওয়ানো বন্ধ থাকবে।

মার্চে একই ভাবে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা আর পূর্ব মেদিনীপুরের দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী কৃমির ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। সে-বার অবশ্য পুরো কর্মসূচি স্তব্ধ হয়নি। তবে অভিযোগ উঠেছিল, স্বাস্থ্য দফতর মেয়াদ-উত্তীর্ণ ওষুধ খাইয়েছে। যদিও পরে প্রমাণিত হয়, সেই ওষুধের মেয়াদ ছিল অগস্ট পর্যন্ত। অনেক স্কুলে চিকিৎসক বা কর্মীরা শিশুদের খালিপেটে ওষুধ খাওয়ানোতেই বিপত্তি ঘটে।

প্রশ্ন উঠছে, ওষুধ বন্ধ করে কৃমির মোকাবিলা করা যাবে কী ভাবে? আগের বারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দফতর ব্যবস্থা নেয়নি কেন? কৃমির ওষুধ বাচ্চাদের কখন, কী ভাবে খাওয়ানো উচিত, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সেটা শেখানোই বা হয়নি কেন? কেন যথেষ্ট সচেতন করা হয়নি অভিভাবকদেরও?

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রচার বা সচেতনতা বৃদ্ধির অভিযানে ত্রুটি ছিল না। দফায় দফায় বৈঠক ও ভিডিও-সম্মেলন হয়েছে। ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো, প্রচারপত্র বিলি, প্রচারমাধ্যমে বিজ্ঞাপন— বাদ পড়েনি কিছুই। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকা, আশা-কর্মী, এএনএম-দের। কিন্তু কৃমির ওষুধের নিয়মই হল, যারা সেটা খাবে, তাদের কারও কারও একটুআধটু পেটব্যথা, বমি-বমি ভাব হতে পারে। যাদের পেটে কৃমি বেশি, কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা হতে পারে তাদের। হয়েছেও।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘একটি স্কুলে ওষুধ খেয়ে দু’-এক জন পড়ুয়ার সমস্যা হলে তাদের দেখে আর-পাঁচটা ছেলেমেয়েরও মনে হতে পারে যে, শরীরে অস্বস্তি হচ্ছে। এটা মানসিক। গণ-হিস্টিরিয়ার মতো।’’

তা-ই যদি হবে, সব স্কুলে কর্মসূচি বন্ধ করা হল কেন? এটি জাতীয় কর্মসূচি। চিকিৎসকেরাই জানাচ্ছেন, অত্যন্ত জরুরি কর্মসূচি। সেটা বন্ধ করলে তো মানুষ ভাববেন, শিশুরা ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলেই সরকার জাতীয় কর্মসূচি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কী বলছে সরকার?

‘‘এত ভাল কর্মসূচি! একে সফল করতে আমরা এত পরিশ্রম করলাম! তার পরেও যদি মানুষের মনে সংশয় তৈরি হয়, কী আর করা যাবে। কর্মসূচি বন্ধই থাক,’’ বলছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ভাল করতে চাওয়া হচ্ছে। অথচ কিছু মানুষ তা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছেন! বিভ্রান্তি হলে চিকিৎসকদেরও সেটা দূর করা উচিত। অভিভাবকদের, বাচ্চাদের বোঝানো উচিত। এক শ্রেণির চিকিৎসক সেই দায়িত্বও নিতে চাইছেন না। ‘‘তাই এটা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি,’’ পার্থবাবুর গলায় ক্ষোভ। কর্মসূচি বন্ধের কারণ ব্যাখ্যার রাস্তায় যাননি স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। ‘‘সরকার কর্মসূচি বন্ধ করতে বলেছে। তাই বন্ধ করেছি। এর বাইরে কিছু বলব না,’’ বললেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।

কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়ায় জেলা স্তরের স্বাস্থ্যকর্তা ও কর্মীদের অনেকে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তাঁরা জানান, এই কর্মসূচির জন্য গত দু’মাস তাঁরা নাওয়াখাওয়া ভুলে খেটেছেন। এক দিনের কর্মসূচিকে বাড়িয়ে তিন দিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কী ভাবে এক কথায় প্রকল্প বন্ধ হয়, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে মানুষের বিশ্বাস কমবে। পরে অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মসূচি রূপায়ণেও সমস্যা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Deworm medicine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE