Advertisement
E-Paper

আমডাঙায় সুভাষিণীকে পেয়ে নালিশ মহিলাদের

এখনও পাকেনি মাঠের পেঁয়াজ। তবুও সেই পেঁয়াজ খেতের মাঝখানে তৈরি হয়েছে তাঁবু। সেখান থেকে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিচ্ছে বড়গাছিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্র আমির হোসেন। তাঁবু থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে আজহার মণ্ডল। আর বাড়ি ছেড়ে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে সেরিনা খাতুন।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০৩:০৫
আমডাঙার গ্রামে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সুভাষিণী আলি।  ছবি: সুদীপ ঘোষ

আমডাঙার গ্রামে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সুভাষিণী আলি। ছবি: সুদীপ ঘোষ

এখনও পাকেনি মাঠের পেঁয়াজ। তবুও সেই পেঁয়াজ খেতের মাঝখানে তৈরি হয়েছে তাঁবু। সেখান থেকে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিচ্ছে বড়গাছিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্র আমির হোসেন। তাঁবু থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে আজহার মণ্ডল। আর বাড়ি ছেড়ে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে সেরিনা খাতুন।

উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা থানার টেঙাটেঙি, বেলু, বইচগাছার গ্রামে গিয়ে এমনই ছবি দেখলেন সুভাষিণী আলি। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী গিয়ে দাঁড়াতেই গ্রামের কয়েকশো মহিলা তাঁকে ঘিরে অভিযোগ করেন, তাঁদের উপর লাগাতার পুলিশি সন্ত্রাস চলছে। সিপিএমের স্থানীয় নেতা-কর্মীদেরও অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের নির্দেশেই ভোটের আগে তাঁদের দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও সন্ত্রাস চালাচ্ছে পুলিশ। তাতেই ঘরছাড়া এলাকার পুরুষরা। খেতের কাঁচা ফসল কেটে তাই তাঁবু বানিয়ে থাকতে হচ্ছে পুরুষদের। তৃণমূলের বক্তব্য, ভোটের আগে নিজেদের কাজ করছে পুলিশ। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশের দাবি, এ কেবল নিয়মমাফিক তল্লাশি। তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন সুভাষিণী।

২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ, বোমাবাজি, আগুন, খুনোখুনিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আমডাঙার এই গ্রামগুলি। ভোটের ঠিক আগের দিন বইচগাছা এলাকায় সংঘর্ষে জখম হন প্রায় ৫০ জন। পুলিশও জখম হয়। শ’দুয়েক বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ির চাল-ডাল থেকে শুরু করে মোটরবাইক পর্যন্ত টেনে ফেলে দেওয়া হয় পুকুরের জলে। পঞ্চায়েত ভোটের দিন দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে বইচগাছার পাশের গ্রাম টেঙাটেঙিতে। বোমা ছুড়ে, গুলি করে খুন করা হয় সিপিএম সমর্থক মাদারবক্স মল্লিককে। ব্যাপক ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় প্রচুর বাড়িতে। পুলিশ ও নির্বাচনী পর্যবেক্ষককে লক্ষ করেও বোমা ছোড়া হয়। আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান মহিলা ও শিশুরা।

দিন দশেক আগে ওই এলাকাতেই রাতে হানা দিয়েছে আমডাঙা থানার পুলিশ। গ্রামবাসীর অভিযোগ, সেখান থেকেই নতুন করে অশান্তির সূত্রপাত। সিপিএম কর্মী আকবর আলি মণ্ডল, শুকুর আলিদের অভিযোগ, “পুলিশ বেছে-বেছে আমাদের সমর্থকদের বাড়ি হানা দেয়। বাড়ি ভাঙচুর করে মহিলাদের উপরে অত্যাচার চালায়।” এর পরেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে স্থানীয় মানুষের। বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী জখম হন। অভিযোগ, তার পর থেকেই ওই এলাকায় দফায়-দফায় হানা দিতে থাকে বিশাল পুলিশবাহিনী। চলে ধরপাকড়ও। পুরুষেরা বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেন শিবিরে।

বুধবার সুভাষিণী আলির সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন জমিরুল

বিবি, আজিমুল বিবিরা। অভিযোগ করেন, সিপিএম কর্মী খুনে যে তৃণমূল কর্মীরা অভিযুক্ত, তাদের ছেড়ে উল্টে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতেই রাতে হানা দিয়ে অত্যাচার করছে পুলিশ। সুভাষিণীর অভিযোগ, “তৃণমূলের নির্দেশেই পুলিশ এ সব করছে। সবটাই নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরা হবে।’’

রাস্তার উল্টো দিকেই তৃণমূলের শিবির। সেখানে বসে থাকা তৃণমূল কর্মীরা আবার দাবি করেন, তাঁদের দলের সঙ্গে এ সবের সম্পর্ক নেই। অপরাধীকে ধরতে এসে পুলিশ যদি উল্টে মার খায়, তাদের উর্দি টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়, তা হলে তারা ছেড়ে দেবে কেন? রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “দুষ্কৃতীর কোনও রং থাকে না। সে যে দলেরই হোক প্রশাসন তাকে ধরবেই। আর ভোটের আগে পুলিশ কারও নয়, পুলিশ নির্বাচন কমিশনের।” উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ভোটের আগে নিয়মমাফিক বিভিন্ন মামলায় ধরপাকড় চলছে।’’ পঞ্চায়েত ভোটে ওই গ্রামগুলিতে সংঘর্ষের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘তাই ভোটের আগে পুলিশ তল্লাশি চালাতে যায়। উল্টে কয়েক জন পুলিশের উপরে চড়াও হয়। তাই তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে।”

এর পরে হালিশহরের প্রসাদনগরে যান সুভাষিণী। সেখানে এ দিন সিপিএমের শাখা অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। এ দিনই তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীর সভা ছিল প্রসাদনগরে। তার পরে এই ভাঙচুর চলে বলে অভিযোগ। সুভাষিণী শাসকদলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছেন।

amdanga subhasini ali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy