Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Kolkata Municpal Corporation

পুরসভার বিজ্ঞপ্তি ঘিরে বিপাকে শহরের কলোনির বাসিন্দারা

পুরসভার ৬৬ এবং ৯৫ থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ অংশ ছাড়াও সংযুক্ত এলাকার একাংশ কলোনি এলাকা। বিভিন্ন কলোনির বাসিন্দারা বহু বছর ধরেই বিল্ডিং বিভাগের কোনও রকম অনুমতি ছাড়াই বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন।

কলকাতা পুরসভা।

কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ ০৮:০৭
Share: Save:

কলকাতা পুরসভার একটি বিজ্ঞপ্তি ঘিরে বিপাকে শহরের কলোনি এলাকার বাসিন্দারা। গার্ডেনরিচে বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে পুর কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় একাধিক বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। পুর কমিশনার মার্চের শেষ দিকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলেন। তাতে অনুমোদনহীন নকশা অনুযায়ী চলা নির্মাণকাজ রুখতে পুরসভার কর-রাজস্ব, বিল্ডিং এবং লাইসেন্স বিভাগকে একযোগে নজরদারি চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, যে সমস্ত বাড়ির (বৈধ বা অবৈধ) ইতিমধ্যেই মিউটেশন হয়ে গিয়েছে, সেগুলি অপরিবর্তিত অবস্থায় হাতবদল হলে নতুন ক্রেতার মিউটেশন পেতে কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে কর-রাজস্ব বিভাগ, লাইসেন্স বিভাগ ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ নজরদারি চালাবে। ওই সমস্ত ক্ষেত্রে মিউটেশন দেওয়ার আগে যাচাই করা হবে। পুর কমিশনার বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিলেন, অনুমোদিত নকশার বাইরে বাড়ির কোনও অংশ তৈরি হলে সেই অংশটিকে ‘দখলদারি’ হিসাবে মিউটেশনে নথিভুক্ত করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে কর-রাজস্ব বিভাগ তৎক্ষণাৎ বিল্ডিং দফতরকে তা জানাবে। আর পুর কমিশনারের এই বিজ্ঞপ্তিতেই মহা ফাঁপরে পড়েছেন কলোনি এলাকাভুক্ত কর-রাজস্ব বিভাগের আধিকারিক-কর্মীরা।

পুরসভার ৬৬ এবং ৯৫ থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ অংশ ছাড়াও সংযুক্ত এলাকার একাংশ কলোনি এলাকা। বিভিন্ন কলোনির বাসিন্দারা বহু বছর ধরেই বিল্ডিং বিভাগের কোনও রকম অনুমতি ছাড়াই বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন। এমনকি, পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে অতিরিক্ত নির্মাণও করেছেন তাঁরা। এমতাবস্থায় পুর কমিশনারের নতুন বিজ্ঞপ্তি ঘিরে তাঁদের একটাই প্রশ্ন, ‘‘আমরা তো নিজেদের বাড়ির রেজিস্ট্রি করিয়েছি। তা হলে কেন আমাদের দখলদার হিসাবে গণ্য করা হবে?’’ এ বিষয়ে সংযুক্ত এলাকার কর-রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকদের কাছে কলোনি এলাকার বাসিন্দারা নিত্যদিন নানা অভিযোগ জানাচ্ছেন।

এ বিষয়ে গড়িয়াহাট টলি ট্যাক্স বিভাগের এক কর্মী বললেন, ‘‘কমিশনারের নতুন বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কলোনির বাসিন্দারা বেঁকে বসেছেন। তাঁরা সাফ জানাচ্ছেন, নিজেদের কিছুতেই ‘দখলদার’ হিসাবে গণ্য করবেন না। তাঁদের বাড়ি, ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছে। তাই নিজেদের গোটা নির্মাণের মালিক বলেই মনে করেন তাঁরা।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, কলোনি এলাকার বাসিন্দা ও পুরসভার কর-রাজস্ব বিভাগের মধ্যে সংঘাতের জেরে ওই সমস্ত এলাকায় মিউটেশনের কাজ স্থগিত রয়েছে।

৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কলোনি এলাকার এক বাসিন্দার অনুযোগ, ‘‘আমাদের পূর্বসূরিরা উদ্বাস্তু অবস্থায় পালিয়ে এসে কোনও মতে মাথা গোঁজার আশ্রয় পেয়েছিলেন। তখন নিজেদের মতো করে ছোটখাটো বাড়ি বানিয়েছিলেন তাঁরা, যার নকশা অনুমোদনের প্রয়োজন হত না। হঠাৎ করে পুর কমিশনারের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে সিঁদুরে মেঘ দেখছি।’’ পুরসভার কলোনি এলাকার অধিকাংশই যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। যাদবপুরের বিধায়ক তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘কলোনি এলাকার বাসিন্দাদের রেজিস্ট্রি ডিড রয়েছে। তাই তাঁদের দখলদার হিসাবে গণ্য করা ঠিক নয়। লোকসভা ভোট মিটে গেলে এ বিষয়ে পুর কমিশনারের সঙ্গে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Municpal Corporation KMC Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE