হুগলির ৯টি পুরসভাকে এক ছাদের তলায় আনার ঘোষনা সোমবার করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু ঘোষনা হয়ে গেলেও তাঁর দলের স্থানীয় প্রতিনিধিদের মতই সাধারন মানুষ কিন্তু সোমবার পর্যন্ত অন্ধকারে জেলায় ঠিক কী হতে যাচ্ছে সেই প্রশ্নে। জেলাপ্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে থেকে পুরসভার একজন সাধারন কাউন্সিলর সবাই ধন্ধে ঠিক কী হবে? সোমবার হুগলির জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন,“শ্রীরামপুরে এক সমীক্ষার কাজ হয়েছিল কর্পোরেশন নিয়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের প্রশাসনিক স্তরে কিছু জানানো হয়নি।”
বস্তুত লোকসভা নির্বাচনের আগে মহাকরণ থেকে একটি নির্দেশিকা চন্দননগরের মেয়র এবং শ্রীরামপুর পুরসভার প্রধান পেয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল, জেলার পুরসভাগুলিকে কপর্রোরেশনের আওয়ায় আনা হবে নয়টি পুরসভাকে। সেই সময় প্রস্তাব ছিল চন্দননগর কর্পোরেশন এলাকার সঙ্গে ভদ্রেশ্বর, চাঁপদানি এবং বৈদ্যবাটি পুরসভার সংযোজন ঘটিয়ে এলাকা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্যের। সে জন্যও পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর আলাদা চিঠি (No.18/MA/O/C-4/3R-8/2013) দিয়েছে হুগলির জেলাশাসককে।
শ্রীরামপুরের সঙ্গে বৈদ্যবাটি, রিষড়া, কোন্নগর এবং উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভাকে জুড়ে নতুন কর্পোরেশন গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে বিধাননগর ও দমদম পুরসভাকে কর্পোরেশনে উন্নীত করা এবং চন্দননগর কর্পোরেশনের সঙ্গে লাগোয়া তিনটি পুরসভা জুড়ে এলাকা বাড়ানোর কথাও ভাবা হয়েছে। যদিও সোমবার হুগলিতে একটি কর্পোরেশনেরই ঘোষনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নিয়েও ধন্ধ বেড়েছে। কারণ তাহলে আগের প্রস্তাব কী বাতিল? উঠেছে সেই প্রশ্নও।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সেই সময় বলেছিলেন , “আমরা রাজ্যের বেশ কিছু পুরসভাকে কর্পোরেশনে উন্নীত করার জন্য জেলাশাসকদের থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছি। শ্রীরামপুর ও চন্দননগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। বিষয়টি কার্যকর হলে স্থানীয় পুর কর্তৃপক্ষের আর্থিক স্থিতি মজবুত হবে। সেই সঙ্গে এলাকার উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। বিধাননগর ও দমদম পুরসভার ক্ষেত্রে এই প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার পথে।” মন্ত্রীর সেই সময় আরও দাবি করেছিলেন, “এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা কলকাতা কর্পোরেশনের মতোই সুবিধা পাবেন ভবিষ্যতে।”
হুগলির জেলাশাসককে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর চিঠি দিয়ে সেই সময় (No.19/MA/O/C-4/3R-8/2013) নতুন কর্পোরেশন গড়ার এই প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। সিদ্ধান্ত কার্যকর করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দফতর জেলাশাসকের থেকে মোট ন’টি বিষয়ে বিশদ তথ্য সেই সময় জানতে চেয়েছিল। সেগুলি হল, প্রস্তাবিত কর্পোরেশনের মোট এলাকা, জনসংখ্যা, জনঘনত্বের মতো তথ্য যার অন্যতম। পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য ইতিমধ্যেই সেইসব তথ্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “গঙ্গাপারের পুর-এলাকাগুলির সার্বিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই রাজ্য সরকারের এই পরিকল্পনা। পুর-এলাকা বাদে প্রয়োজনে পঞ্চায়েত এলাকার কোনও অংশ কর্পোরেশনে সংযোজন জরুরি মনে হলে, সে ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনার সুযোগ রয়েছে নতুন এই পরিকল্পনায়। এর ফলে শুধু রাজ্যের নয়, কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণেও সুবিধা হবে।” ওই কর্তার দাবি, শ্রীরামপুর নতুন কর্পোরেশন হলে এলাকায় জলবণ্টন, নিকাশি, জঞ্জাল সাফাই প্রক্রিয়া এবং রাস্তাঘাটের মানোন্নয়ন সম্ভব হবে। পক্ষান্তরে, কপোর্রেশনের সম্পদও বৃদ্ধি পাবে। বর্ধিত আয় থেকে নতুন সম্পদ সৃষ্টি এবং পরিষেবার মান বাড়ানোর সুযোগও মিলবে। তা ছাড়া, জনসংখ্যার নিরিখে বিবেচ্য কেন্দ্রের অনেক প্রকল্পের আওতাতেও আসার সুযোগ পাবে ওই কর্পোরেশনগুলি। শ্রীরামপুরের বর্তমান পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের এই নতুন প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর মতে, প্রস্তাবটি কার্যকর হলে এলাকার উন্নয়ন প্রক্রিয়া অনেকটাই গতি পাবে। একই সুর চন্দননগরের বর্তমান মেয়র রাম চক্রবর্তীর গলাতেও। অমিয়বাবুর মতো তিনিও বলেছেন, “রাজ্য ও কেন্দ্রের বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্প আমরা একই সঙ্গে পাব। উন্নয়ন হবে এলাকার। উপকৃত হবেন স্থানীয় বাসিন্দারা।”রাজনৈকিত বাধ্যবাধকতায় পুর কর্তারা হয়তো বিষয়টি আপাতত মানছেন। কিন্তু এলাকার শুধিজনেরা কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন ছোট পুরসভার ক্ষেত্রেই নাগরিক সুবিধা দিতে পুর কর্তারা নাজেহাল সেক্ষেত্রে উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া পুরসভা হলে আদৌ কী কাজের কাজ কিছু হবে?