Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

খাসতালুকেই পিছিয়ে কল্যাণ, ময়না-তদন্তে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত

ফলাফল ৬-১। দেড় লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতলেও শ্রীরামপুর বিধানসভা কেন্দ্র পাশে থাকল না কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই কেন্দ্রে তিনি পিছিয়ে রয়েছেন বাপ্পি লাহিড়ীর চেয়ে। মোট ৫ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৩৩ ভোট পেয়ে এ বারও শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০১:১০
Share: Save:

ফলাফল ৬-১।

দেড় লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতলেও শ্রীরামপুর বিধানসভা কেন্দ্র পাশে থাকল না কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই কেন্দ্রে তিনি পিছিয়ে রয়েছেন বাপ্পি লাহিড়ীর চেয়ে।

মোট ৫ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৩৩ ভোট পেয়ে এ বারও শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ। কিন্তু সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে শ্রীরামপুরে কেন তিনি বিজেপি প্রার্থী বাপ্পি লাহিড়ীর চেয়ে কম ভোট পেলেন, তা নিয়ে দলের কাঁটাছেঁড়ায় মিলছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিতই। অবশ্য শ্রীরামপুর ছাড়াও তৃণমূলের মাথাব্যথা বাড়িয়েছে চাঁপদানি বিধানসভাও। এখানে কল্যাণ জিতেছেন ঠিকই। কিন্তু বাপ্পির সঙ্গে তাঁর ব্যবধান খুব বেশি নয়।

শ্রীরামপুর বিধানসভায় কল্যাণ পেয়েছেন ৫১ হাজার ৫৪১টি ভোট। বাপ্পি ৫৪ হাজার ২৪১টি। শতাংশের হিসেবে তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছেন ৩১% ভোট, বিজেপি প্রার্থী ৩৩%। চাঁপদানি বিধানসভা কেন্দ্রে কল্যাণ পেয়েছেন ৫৪ হাজার ১২৮টি ভোট। বাপ্পি ৫১ হাজার ৬৯৫টি। শতাংশের হিসেবে প্রথম জন পেয়েছেন ৩১% ভোট। দ্বিতীয় জন তাঁর চেয়ে এক শতাংশ কম।

স্বয়ং কল্যাণের কাছে এই ফল যে অপ্রত্যাশিত নয়, তার ইঙ্গিত মিলেছিল শুক্রবার, গণনার দিনই। গণনাকেন্দ্রে ঢোকার পর ঘনিষ্ঠ কর্মীদের কাছে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, শ্রীরামপুর এবং চাঁপদানি কেন্দ্রে তাঁর ফল আশানুরূপ হবে না। বাস্তবেও তাই-ই দেখা গেল। অথচ, দু’টি বিধানসভা আসনই রয়েছে তৃণমূলের দখলে।

তা হলে কেন এক কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়লেন কল্যাণ এবং অন্য কেন্দ্রে তাঁর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেললেন বাপ্পি?

কল্যাণের দাবি, “দুই বিধানসভাতে হিন্দিভাষী বহু মানুষ রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিজেপি-হাওয়া কাজ করেছে। ভোটের ফলেও সেই ইঙ্গিতই কাজ করেছে।” একই সঙ্গে অবশ্য তিনি মেনে নিয়েছেন, “এ ব্যাপারে আগামী দিনে সতর্ক হতেই হবে।” তবে, জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশ মনে করছেন, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য শ্রীরামপুর কেন্দ্রে কল্যাণকে হারতে হয়েছে। কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুল মান্নান সে ভাবে ভোট না পাওয়ায় মুখ রক্ষা হয়েছে কল্যাণের।

শাসক দলের দলীয় রাজনীতির সমীকরণের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁরা খুব ভাল করেই জানেন কল্যাণের সঙ্গে শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের সম্পর্ক আদৌ ‘মধুর’ নয়। সেই সম্পর্কের ছায়া এ বার ভোটের বাক্সেও পড়েছে। প্রচারে সুদীপ্তবাবুর অনুগামীদের সে ভাবে কল্যাণের সঙ্গে দেখা যায়নি। একই রকম ভাবে কল্যাণবাবুর জন্য প্রচার থেকে সরে থাকতে দেখা গিয়েছে উত্তরপাড়ার দলীয় বিধায়ক অনুপ ঘোষাল এবং চণ্ডীতলার বিধায়ক স্বাতী খোন্দকারকেও। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন কল্যাণ।

সুদীপ্তবাবুও দাবি করেছেন, তাঁরা প্রচারে নেমেছিলেন।

জেলা তৃণমূল নেতাদের একটি অংশ মনে করছেন, ভোটের প্রস্তুতিতে চালে ভুল করেছেন কল্যাণ। ‘ভোট-ম্যানেজার’ হিসেবে তিনি বেছেছিলেন চুঁচুড়ার ‘ডাকাবুকো’ দলীয় বিধায়ক তপন মজুমদারকে। কিন্তু তপনবাবু একই সঙ্গে চুঁচুড়া ও শ্রীরামপুরে দলকে ভোট-বৈতরণী পার করানোর গুরু দায়িত্ব নিয়ে তাল মেলাতে পারেননি। তপনবাবুর অবশ্য দাবি, “শ্রীরামপুরের কিছু দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছিল। আমি তা পালন করেছি। আমার মূল দায়িত্ব ছিল চুঁচুড়ায়। মানুষ যা রায় দিয়েছেন, তা-ই হয়েছে।”

রাজ্য তৃণমূল সূত্রের খবর, নিজেদের বিধানসভায় দলের ফল আশানুরূপ না হওয়ায় সুদীপ্তবাবু এবং চাঁপদানির দলীয় বিধায়ক মুজফ্ফর খানকে ইতিমধ্যে তিরস্কারও করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রিষড়া পুরসভার হিন্দিভাষী এলাকার মানুষ যে কল্যাণকে ভোট দেননি সে কথা এখন সরাসরি মানছেন তৃণমূল নেতারা। রিষড়ার পুরপ্রধান শঙ্করপ্রসাদ সাউয়ের ওয়ার্ডে শোচনীয় ভাবে পরাজয় হয়েছে তৃণমূলের। ওই পুরসভার উপ-পুরপ্রধান এবং আরামবাগের নব-নির্বাচিত তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দারের ওয়ার্ডেও তৃণমূল পিছিয়ে। উত্তরপাড়া বিধানসভার কানাইপুরের মতো কিছু জায়গাতেও দলের ফল তেমন ভাল হয়নি। চণ্ডীতলার নবাবপুরেও একই অবস্থা।

চাঁপদানির বিধায়ক মুজফ্ফর খানের সঙ্গেও কল্যাণের সম্পর্ক তেমন ঘনিষ্ঠ নয় বলেই দলে সুবিদিত। সেখানকার পুরপ্রধান সুরেশ মিশ্র কল্যাণের অনুগামী। কিন্তু সুরেশবাবুর ওয়ার্ডেও হারতে হয়েছে কল্যাণকে।

আগামী বছর শ্রীরামপুর পুরসভায় ভোট। তার পরের বছর বিধানসভা ভোট। ফাঁকফোকর মেরামত করে নিতে না পারলে বিজেপির জয় যে ঠেকানো যাবে না তা বিলক্ষণ বুঝছেন জেলা তৃণমূল নেতারা। তাই লোকসভা ভোটে বিপুল জয়ের মধ্যেও শ্রীরামপুর এবং চাঁপদানি কাঁটা তাঁদের বিঁধছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gautam banerjee srirampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE