Advertisement
১৮ মে ২০২৪

গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকে বাস-গাড়ি, ব্যবহারের অযোগ্য অপরিষ্কার শৌচালয়

সব মিলিয়ে রোজ বাস চলাচল করে ৮১টি। সঙ্গে রিকশা-ভ্যান, ছোট গাড়ি। খেয়াঘাটে আসে লঞ্চ, ভুটভুটি। কিন্তু নামখানা বাসস্ট্যান্ড এবং খেয়াঘাট (নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত) সংলগ্ন এলাকার পরিকাঠামো একেবারেই অপ্রতুল। অল্প একটু এলাকার মধ্যে এতগুলি যান-বাহন এবং তার যাত্রীদের প্রায় হাঁসফাঁস অবস্থা। জায়গার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কোনও বাসস্ট্যান্ড গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।

ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকায় এই পথে হাঁটতে সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা।

ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকায় এই পথে হাঁটতে সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা।

শান্তশ্রী মজুমদার
নামখানা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০২:০৬
Share: Save:

সব মিলিয়ে রোজ বাস চলাচল করে ৮১টি। সঙ্গে রিকশা-ভ্যান, ছোট গাড়ি। খেয়াঘাটে আসে লঞ্চ, ভুটভুটি। কিন্তু নামখানা বাসস্ট্যান্ড এবং খেয়াঘাট (নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত) সংলগ্ন এলাকার পরিকাঠামো একেবারেই অপ্রতুল। অল্প একটু এলাকার মধ্যে এতগুলি যান-বাহন এবং তার যাত্রীদের প্রায় হাঁসফাঁস অবস্থা। জায়গার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কোনও বাসস্ট্যান্ড গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। স্বল্প পরিসরে বাসস্টপ এবং খেয়াঘাট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা রকমের অভিযোগ থাকলেও সমস্যা সমাধানে পঞ্চায়েত সমিতি এবং ব্লক প্রশাসনের তেমন ভূমিকা দেখা যায় না বলেই অভিযোগ স্থানীয় মানুষ ও নিত্যযাত্রীদের।

নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির অধীন নারায়ণপুর থেকে বাস চলাচল করে কলকাতা, দিঘা, হুগলি, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার এবং সংলগ্ন আরও কয়েকটি এলাকায়। বাসস্টপ বলতে ঘাট থেকে মাত্র ১০০ মিটারের মধ্যেই গোলপার্ক এলাকায় রাস্তার উপরে দাঁড়িয়েই যাত্রী ওঠানামা করতে হয়। সুনির্দিষ্ট বাসস্টপ না থাকায় গাঁধীমূর্তির চারদিকেই বাসগুলি দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে অফিস টাইমে ব্যাপক যানজট হয় এলাকায়। তার মধ্যে নামখানার প্রধান ব্লকে যাওয়ার জন্য হাতানিয়া-দোয়ানিয়া ঘাট পর্যন্ত রাস্তার উপর হকার বসে, রিকশা-ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে।

নিত্যযাত্রী হিমাংশু দাস জানালেন, বাসগুলির পিছন থেকে উত্তরে ২ নম্বর কার্লভার্টের দিকটায় সার সার মালবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে জট পাকিয়ে থাকে। রোজই তিনি যাতায়াত করে ডায়মন্ড হারবারে। শৌচাগার, যাত্রী প্রতীক্ষালয়, পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে অসুবিধায় পড়তে হয় বলে জানালেন। খেয়াঘাটের খুব কাছে শৌচাগার থাকলেও তা প্রচণ্ড দুর্গন্ধময়, অপিরচ্ছন্ন। যাত্রী প্রতীক্ষালয় রয়েছে। তবে সেখানে অপেক্ষা করা প্রায় যায় না। কারণ বেশিরভাগ সময়ই পাগল, ভবঘুরেরা ময়লা করে রাখে। এলাকায় রাজৈনিতক সমাবেশ হলে সেখানে ডেকরেটর মালপত্র রেখে তালা দিয়ে যান বলে দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সমস্যা আরও চরমে ওঠে মাছের মরসুমে। খেয়াঘাটের আরও পূর্বে ‘ফিস ল্যান্ডিং ঘাট’ থাকলেও প্রচুর যানজট হয় যাত্রী পারাপার এবং বাসস্টপ এলাকায়। যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের পশ্চিমে পিডব্লুউডির মাঠ ভরে যায় গাড়িতে। এলাকায় ১৩টি বরফকলের প্রায় ১ হাজার ভ্যান জড়ো হয় এলাকায়। লোকজনের যাতায়াত বাড়ে অন্যতম এই নদী বন্দরে।

বন্ধ যাত্রী প্রতীক্ষালয়।

সমস্যা রয়েছে খেয়া পারাপার নিয়েও। ভোর ৪টে থেকে বাস, ট্রেন চালু হলেও খেয়া চালু হয় সকাল ৬টায়। এই সময় ১ টাকা ভাড়া। তার আগে পারাপার করতে হলে বেশি টাকা দিতে হয় বলে বললেন আর এক নিত্যযাত্রী রাজীব হালদার। নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির অনুমোদনে ৪টি ভুটভুটি পারাপার করে। কিন্তু দু’তিনটির বেশি দেখা যায় না বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।

নদী পেরিয়ে ওপারে নামখানার প্রধান ব্লক থেকেও প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন খেয়াঘাট দিয়ে। পাথরপ্রতিমা ব্লকের সীতারামপুর, ব্রজবল্লভপুর, রাক্ষসখালি, সাগর ব্লকের চেমাগুড়ি, সুমতিনগর থেকেও যাতায়াত করে অনেকগুলি ভুটভুটি। বকখালি থেকে নামখানার ওপার পর্যন্ত চলে ২৯ কিলোমিটার রাস্তায় চলে ২২টি বাস। পরিকাঠামো ঠিক করার ক্ষেত্রে কোনও ইতিবাচক ভূমিকা কেন নিতে পারেনি প্রশাসন?

নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রীমন্ত মালির গলায় অসহায়তার সুর। বললেন, “বাসস্ট্যান্ড করতে হলে কোথায় করা যাবে? এখানে জায়গা বড়ই কম। যাত্রীদের জন্য শৌচাগার রয়েছে। তবে তার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে অভিযোগ পাই। ব্যবস্থাপনার ভার যার হাতে রয়েছে, এ বার তাদের বদলানো হবে।” পাশাপাশি তাঁর দাবি, প্রতীক্ষালয় খোলা থাকে এবং তা ব্যবহারও করা যায়। ভুটভুটিও নিয়মিত পরিষেবা দেয়। শ্রীমন্তবাবুর দাবি, পঞ্চায়েত সমিতি সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সময়ই টেন্ডার হয় ভুটভুটির। তার বেশি সময় পরিষবা দিতে গেলে আরও টাকা দিতে হবে নৌকো মালিকদের। তাই ওই সময়ের বাইরে আর দায়িত্ব নেয় না পঞ্চায়েত সমিতি। সকাল ৬টার আগে এবং রাত ১০টার পর ভুটভুটিতে নদী পারাপার করার জন্য যাত্রীপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেল। এর উপরে নিয়ন্ত্রণ নেই কেন? নামখানা ব্লকের বিডিও তাপস মণ্ডল বলেন, “আমরা এই অভিযোগ পাই। ভুটভুটির মালিকদের বলাও হয়। তবে সব সময়ে তো নজরদারির জন্য পুলিশ রাখা যায় না।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shantashri majumder namkhana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE