Advertisement
০৮ মে ২০২৪

গাড়ি থেকে দু’হাতে ‘ফ্লাইং কিস’ ছুড়তে ছুড়তে এগোলেন বাপিদা

বলিউডের অভিনেতা সঞ্জয় খান, সুনীল দত্তকে দেখেছে বৈদ্যবাটি। এ বার দেখছে বাপি লাহিড়ীকে। তফাৎ কী বুঝছেন? প্রশ্ন শুনেই উত্তেজিত চাঁপদানির পলতাঘাটের ব্যবসায়ী দু’ভাই রতন এবং তপন সাউ। বললেন, “ভোট এলে অনেক রঙ্গ দেখেছি দাদা। অভিনেতা-অভিনেত্রীকে নিয়েও এতটা উন্মাদনা চোখে পড়েনি, যতটা বাপ্পিদাকে নিয়ে দেখছি।”

তারকা প্রার্থীর ছবি মোবাইলে ধরে রাখার হুড়োহুড়ি। শুক্রবার বৈদ্যবাটিতে ছবিটি তুলেছেন প্রকাশ পাল।

তারকা প্রার্থীর ছবি মোবাইলে ধরে রাখার হুড়োহুড়ি। শুক্রবার বৈদ্যবাটিতে ছবিটি তুলেছেন প্রকাশ পাল।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৪ ০২:২২
Share: Save:

বলিউডের অভিনেতা সঞ্জয় খান, সুনীল দত্তকে দেখেছে বৈদ্যবাটি। এ বার দেখছে বাপি লাহিড়ীকে। তফাৎ কী বুঝছেন? প্রশ্ন শুনেই উত্তেজিত চাঁপদানির পলতাঘাটের ব্যবসায়ী দু’ভাই রতন এবং তপন সাউ। বললেন, “ভোট এলে অনেক রঙ্গ দেখেছি দাদা। অভিনেতা-অভিনেত্রীকে নিয়েও এতটা উন্মাদনা চোখে পড়েনি, যতটা বাপ্পিদাকে নিয়ে দেখছি।”

প্রচারের দ্বিতীয় দিন, শুক্রবার কেমন ছিল সেই উন্মাদনার চিত্রটা?

বিকেল ৫টা নাগাদ বাপি লাহিড়ী এলেন বৈদ্যবাটি চৌমাথায়। পরনে সাদা আলখাল্লা, চোখে বহু পরিচিত কালো সানগ্লাস (লোকে বলে, তাঁর নতুন নতুন সানগ্লাসের সংখ্যা নাকি তিনি নিজেই গুনে শেষ করতে পারেন না), গলায় ফুলের মালা। এ দিনও ‘মিস’ বলতে বাপিদার গলায় থরে থরে ঝোলা সোনার হারগুলো। সেগুলো যথারীতি ঢাকা পড়েছে ফুলের মালায়। ছোট্টখাট্ট গোলগাল চেহারায় একমুখ হাসি।

বৃহস্পতিবার উত্তরপাড়া থেকে রোড শো-র প্রথম দিনটা যতটা হট্টমেলা মনে হচ্ছিল, এ দিন তা অনেকটাই সামলে নিয়েছেন বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব। যে কারণে বাপিদার হুড খোলা গাড়ির দু’পাশে মোটা দড়ি ধরে রেখেছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। তাতে আশপাশের লোকজনের হুড়োহুড়ি অনেকটা সামাল দেওয়া গিয়েছে। রোড শো যত এগিয়েছে, ক্রমে তা বিশাল মিছিলের আকার নিয়েছে। ফলে এ দিনও যানজটে ভুগতে হয়েছে জিটি ধরে যাতায়াত করা বহু নিত্যযাত্রীকে। যদিও রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন বয়সের মহিলা-পুরুষের হইচইয়ের সামনে সে সব তো ফিকে।

এ দিন অকাতরে অটোগ্রাফ বিলিয়েছেন ‘বাপ্পিদা।’ এ দিক থেকে ডাক, ‘দাদা একটা সই’ তো ও দিক থেকে কাতর অনুরোধ, ‘দাদা, দু’কলি গান...।’ আজ ভক্তের মনোবাঞ্ছা কিছুই অপূর্ণ রাখেননি প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী। রাজনীতির আঙিনায় অনভ্যস্ত বাপিদাকে গত কাল যদি বা কিছুটা আড়ষ্ঠ লেগেছে, এ দিন সে সব উধাও। চেহারায় আত্মবিশ্বাস আর মুখে হাসি দিয়ে মন ভুলিয়ে দিয়েছেন অগণিত হুগলিবাসীর। আর জনতার বাড়তি পাওনা হিসাবে দু’হাতে চুমু ছুড়তে ছুড়তে এগিয়েছেন বাষট্টি বছরের তরুণ। হ্যান্ড মাইক এ দিনও ছিল না। তবে কোথাও কোথাও গাড়ি থামিয়ে বাপ্পি খালি গলাতেই গেয়ে উঠেছেন, “শ্রীরামপুরকে আমি করি প্রণাম...।”

পূজা গঙ্গাপুত্র পরে নবম শ্রেণিতে। ফুটফুটে মেয়েটা দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার ধারে। ভিড়ের ধাক্কায় পৌঁছতে পারল না বাপিদার গাড়ির কাছাকাছি। অশোককুমার সিংহ আবার মেয়েকে মোটর বাইকে করে এনেছিলেন ‘বাপ্পি-দর্শনে।’ মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়েছে বাপ-মেয়ের। শ্যাওড়াফুলির নবম শ্রেণির পড়ুয়া রোহিত চৌধুরীও চলে এসেছে বাপিদাকে দেখতে। মাথায় নমো টুপি।

বাপিদার প্রচার হবে, আর গান-বাজনা থাকবে না! গত কাল ঠিক যেন আশ মেটেনি শ্রীরামপুরের। এ দিন অবশ্য বাপিদার গলায় মাইকে গান না শুনতে পেলেও গাড়ির পিছনে পিছনে ব্যাঞ্জোর উদ্দাম জগঝম্প রোড শো-র পরিবেশটাকে দিব্যি খোলতাই করেছে। কাড়া-নাকাড়ায় বেজে উঠেছে ‘উ লালা উ লালা’ ‘আই অ্যাম এ ডিস্কো ড্যান্সার’-এর মতো বাপিদার সুরের মণিমুক্তো। সঙ্গে জুটে গিয়েছিল বেশ কিছু অল্পবয়সী ছেলেছোকরা। তাদের লাগামছাড়া নাচ দেখে কে বলবে, ভোটের প্রচার নাকি মাঠের ট্রফি আসার আনন্দ! জামা-টামা খুলেও নাচতে দেখা গেল অনেককে। এত সবের মাঝে ‘হর হর মোদি’ কিংবা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শুনে তবু মনে হচ্ছিল রাজনীতির প্রচারই চলছে। না হলে সব মিলিয়ে যেন পুরো পুজো-হাঙ্গামা।

‘উল্টে দেব পাল্টে দেব, শ্রীরামপুরকে বদলে দেব’ বাপিদার রোড শো-এ বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা মাঝে মাঝেই এই স্লোগানেও গলা গরম করছিলেন। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক সুন্দরীকে চুপি চুপি জিজ্ঞাসা করা গেল, খুব তো মজা হচ্ছে, ভোটটা দেবেন কাকে? “বলব কেন” বলেই দু’হাত শূন্যে ছুড়ে মিহি গলায় চেঁচিয়ে উঠলেন, “বাপ্পিদা, জিন্দাবাদ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bappi lahiri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE