Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পুকুর ভরাটে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা

আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙার একটি পুকুরের জল তুলে ফেলে একাংশ ভরাট করে নির্মাণকাজ চলছে জোরকদমে। তৈরি হয়ে গিয়েছে কংক্রিটের স্তম্ভ। পুকুর ব্যবহার করতে না পেরে গ্রামবাসী ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সরকারি দফতরে লিখিত জানিয়েছেন।

এই পুকুরই ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।

এই পুকুরই ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৪ ০০:৪৭
Share: Save:

আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙার একটি পুকুরের জল তুলে ফেলে একাংশ ভরাট করে নির্মাণকাজ চলছে জোরকদমে। তৈরি হয়ে গিয়েছে কংক্রিটের স্তম্ভ। পুকুর ব্যবহার করতে না পেরে গ্রামবাসী ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সরকারি দফতরে লিখিত জানিয়েছেন। কিন্তু পুকুর ভরাট বন্ধ হয়নি।

পুকুরটির মালিক তৃণমূলের বুথ কমিটির সভাপতি তুষারকান্তি বিশ্বাস। তিনিই বেআইনি ভাবে নিজের পুকুর ভরাট করাচ্ছেন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। অভিযোগ উড়িয়ে তুষারবাবুর দাবি, ‘‘পুকুর পুকুরই থাকবে। একাংশে আমি গার্ড-ওয়াল দিচ্ছি মাত্র। কারও কোনও দুশ্চিন্তার কারণ নেই।’’ তবে, গার্ড-ওয়াল দিতে অত বড় কংক্রিটের পিলার তৈরি হচ্ছে কেন? কেনই বা পুকুরের জল তুলে ফেলতে হল? এ ব্যাপারে অবশ্য তুষারবাবুর কাছ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। তিনি এ জন্য প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছিলেন কি না, তা নিয়েও মুখ খোলেননি তুষারবাবু। হুগলির জেলাশাসক মনমীত নন্দা অবশ্য জানান, ব্যক্তি-মালিকানাধীন হোক বা না-হোক, যে কোনও ধরনের জলাশয় বোজানোই বেআইনি। এ জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, “পুকুরে গার্ড ওয়াল দিতে হলেও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের থেকে বিধিবদ্ধ অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।”

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক গ্রামবাসীর থেকে কয়েক বছর আগে চাঁপাডাঙার মুক্তারপুর দক্ষিণপাড়ায় বাড়ির পাশেই ৪১ শতকের পুকুরটি কেনেন তুষারবাবু। ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে তা পুকুর হিসেবেই নথিভুক্ত রয়েছে। পুকুরে একাধিক ঘাট ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা তা ব্যবহার করতেন। বর্ষায় এলাকার জল নিকাশিতেও জলাশয়টির কার্যকর ভূমিকা ছিল। পুকুরে মাছ চাষও করতেন গ্রামবাসীরা।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুকুরটি কেনার পরে একটি বাদে বাকি ঘাটগুলি বন্ধ করে দেন তুষারবাবু। বছর তিনেক ধরে কোনও অনুমতি না নিয়েই খুব ধীরে ধীরে পুকুরে বালি, মাটি ফেলা শুরু হয়। তুষারবাবুর এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘সম্প্রতি মাটি ফেলার বহর বেড়ে যায়। দিন দশেক আগে পুকুরের পুরো জল তুলে ফেলা হয়। তার পরেই কংক্রিটের গাঁথনি শুরু হয়।’’

গ্রামবাসীরা গণস্বাক্ষর করে বিষয়টি তারকেশ্বর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জানান। বিডিও-র কাছেও অভিযোগ জানানো হয়। এর পরে বার কয়েক তদন্তে পুলিশ আসে। গ্রামবাসীরা জানান, সেই সময়ে কিছু দিন নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। তার পরে ফের শুরু হয়। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পুকুরের সব জল তুলে ফেলা হয়েছে। এক পাশে কংক্রিটের গাঁথনি তোলা হয়েছে। পুকুরের ধারে ইটের পাঁজা আর বালি পড়ে রয়েছে। পুকুর ভরাট নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে কানাঘুষো চলছে। কিন্তু ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, তুষারবাবু শাসক দলের নেতা হওয়াতেই সব জেনেশুনেও প্রশাসন নির্বিকার।

পঞ্চায়েতের কোনও অনুমতি ছাড়াই পুকুরটি ভরাট করা এবং জল তুলে ফেলা হয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন তালপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘‘পুকুরটি স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার করছিলেন। এ ভাবে জলাশয় বুজে গেলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে।’’ তারকেশ্বরের বিডিও প্রভাংশু হালদার বলেন, ‘‘বিষয়টি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক্তিয়ারে পড়ে। অভিযোগপত্র ওই দফতর এবং থানায় পাঠিয়ে দিয়েছি। তারাই এ ব্যাপারে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে।’’ বিএলএলআরও সুদেষ্ণা রায় এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব জানান, দলীয় ভাবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE