Advertisement
E-Paper

পানীয় জল, নিকাশি নিয়ে জেরবার ক্যানিং মাছ বাজার

পরিকাঠামো ও পরিকল্পনার অভাবে ধুঁকছেন ক্যানিংয়ের মাছ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিগত বাম সরকার ও বর্তমান সরকার ক্যানিংয়ের মাছ ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে উদাসীন। এক সময়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তথা রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ মাছের বাজার ছিল ক্যানিংয়ে।

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০০:৪৭
এই পরিবেশেই চলে বাজার। —নিজস্ব চিত্র।

এই পরিবেশেই চলে বাজার। —নিজস্ব চিত্র।

পরিকাঠামো ও পরিকল্পনার অভাবে ধুঁকছেন ক্যানিংয়ের মাছ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিগত বাম সরকার ও বর্তমান সরকার ক্যানিংয়ের মাছ ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে উদাসীন।

এক সময়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তথা রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ মাছের বাজার ছিল ক্যানিংয়ে। এই বাজারে আগে সারা রাত ধরে মাছের কেনাবেচা হত। বর্তমানে তা বন্ধ। এখন সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা তিন বার বসে বাজার। ১৩৩ জন আড়তদার এখানে মাছ বিক্রি করেন। তাঁদের অভিযোগ, মাছ-বাজারে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যে সমস্ত মৎস্যজীবীরা দূর দূরান্ত থেকে ক্যানিং মাছ-বাজারে আসেন, তাঁদের মাছের গাড়ি নিয়ে বাজারে ঢোকার প্রশস্ত জায়গা নেই। এর ফলে এ সমস্ত মৎস্যজীবীদের রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হয়। এ ছাড়াও, রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা, নিকাশি নালার সমস্যা, ছাউনির সমস্যা। পর্যাপ্ত ছাউনি না থাকায় বর্ষার সময়ে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের।

ক্যানিং মাছ-বাজার থেকে প্রতিদিন শহর ও শহরতলির সোনারপুর, গড়িয়াহাট, বৌবাজার, যদুবাবুরবাজার, শোভাবাজার, বাগবাজার-সহ বিভিন্ন প্রান্তের বাজারে মাছ যায়। এ সব বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা এখানে এসে সরপুঁটি, ন্যাদোশ, খলিসা, বাগদা চিংড়ি, হরিণে চিংড়ি, চাপড়া, তেলাপিয়া, পার্সে, ভেটকি, নায়লন টিকা, কই, মাগুর, শিঙি, মাগুর প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের মাছ নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতেন। বর্তমানে কই-মাগুর-শিঙি মাছের দেখা বাজারে মেলে না। দৈনিক প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার মাছ ক্যানিং বাজার থেকে বিক্রি হয় বলে জানালেন ক্যানিং মৎস্যজীবী আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সীতানাথ দাস। আরও জানালেন, এক সময়ে ক্যানিংয়ের মাছ-বাজারের ঐতিহ্য ছিল। দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সারা রাত ধরে মাছ কেনা-বেচা করতেন। মাছ ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার অভাবে তা ক্রমে বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়াও, অন্যান্য সমস্যার কারণে আজ ক্যানিং মাছ-বাজারের ঐতিহ্য ম্লান। যে বাজারে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ আমদানি-রফতানি হয়, সরকারি উদাসীনতায় ও পরিককল্পনার অভাবে তা ধুঁকছে। এখানই যদি সরকার উদ্যোগী না হয়, তা হলে হয় তো এক দিন ক্যানিংয়ের এই ঐতিহ্যপূর্ণ বাজার হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সীতানাথবাবু।

সুন্দরবনের যে সমস্ত মৎস্যজীবীরা নদীতে, খাঁড়িতে মাছ ধরে ক্যানিং মাছ-বাজারে নিয়ে আসে, তাদের মধ্যে জবেদ আলি, সাহজুদ্দিন জমাদার বলেন, “এক সময়ে আমরা সুন্দরবনের মেছুয়া, ফুলখালি, চামটা, বৈকুণ্ঠ, বুড়িরবালি, ভেড়িরচর-সহ বিভিন্ন এলাকায় মাছ ধরতে যেতাম। এখন বন দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, সুন্দরবনের সব নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া যায় না। ফলে ভাল মাছ পাওয়া যায় না। যদি বা কেউ চুরি করে যায়, তা হলে বন দফতর মোটা পরিমাণ টাকা জরিমানা করে এবং নৌকা-জাল, মাছ ধরার অন্য সরঞ্জাম আটকে রেখে দেয়। সে কারণে অনেকে এই এই ব্যবসা থেকে সরে যাচ্ছে। এ সব কারণে আগের মতো মাছও বাজারে আসছে না।”

ক্যাননিংয়ের মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য জানালেন, মাছ বাজারের পরিকাঠামাগত উন্নয়নের জন্য তাঁদের কাছে কোনও সরকারি তহবিল নেই। তবে ব্যবসায়ী, মৎস্যজীবীরা যদি সমস্যার কথা তাঁকে জানান, তা হলে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, “ঐতিহ্যপূর্ণ ক্যানিং মাছ-বাজারে দূরবস্থা আমি দেখে এসেছি। এ ব্যাপারে রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী ও মৎস্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে অবিলম্বে কিছু একটা ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা দেখছি। এখন যেহেতু নির্বাচন, তাই এখনই কিছু করা যাবে না।”

samsul huda canning fish market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy