Advertisement
০৩ মে ২০২৪

পুরভবনের নীচে টেবিল পেতে কাজ পুরপ্রধানের

পরিষেবা সচল রাখতে বৃহস্পতিবার সকালে পুরভবনের নীচে চেয়ার-টেবিল পেতে বসলেন বৈদ্যবাটির তৃণমূল পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ। সেখানেই নাগরিকদের কথা শুনলেন। পুরসভার অফিসার বা কর্মীরা সেখানে গিয়েই তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।

এখানে বসেই কাজ সামলালেন পুরপ্রধান। ছবি: প্রকাশ পাল।

এখানে বসেই কাজ সামলালেন পুরপ্রধান। ছবি: প্রকাশ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বৈদ্যবাটি শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪৭
Share: Save:

পরিষেবা সচল রাখতে বৃহস্পতিবার সকালে পুরভবনের নীচে চেয়ার-টেবিল পেতে বসলেন বৈদ্যবাটির তৃণমূল পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ। সেখানেই নাগরিকদের কথা শুনলেন। পুরসভার অফিসার বা কর্মীরা সেখানে গিয়েই তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। এক কর্মীর বকেয়া বেতন-সংক্রান্ত মামলায় আদালতের নির্দেশে বুধবার বৈদ্যবাটির পুরপ্রধানের চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

পুরপ্রধান বলেন, “প্রতিদিন বহু মানুষ নানা প্রয়োজনে দেখা করতে আসেন। অফিসের কর্মী বা কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। মানুষের কাজের দায় আমার উপরে রয়েছে। নাগরিক পরিষেবা যাতে বিন্দুমাত্র ব্যাহত না হয়, সেই কারণেই এ ভাবে কাজ চালাচ্ছি।” ভাইস চেয়ারম্যান পিন্টু মাহাতো-সহ অন্য কয়েক জন কাউন্সিলরও পুরপ্রধানের পাশে এসে বসেন। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।

দীর্ঘ দিন ধরে নিয়ম মাফিক বেতন পাচ্ছেন না বলে পুতুল দেবনাথ নামে এক পুরকর্মী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। আদালতকে ওই মহিলা জানান, তিনি পুরসভার স্থায়ী কর্মী। অথচ বেতনক্রম মেনে তাঁকে বেতন দেওয়া হয় না। বার বার আবেদন-নিবেদন করেও কোনও ফল হয়নি। পুরপ্রধান কোনও পদক্ষেপ করেননি। মহিলার আরও অভিযোগ, আদালত তাঁকে সঠিক বেতন দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা মানা হয়নি। বিষয়টি আদালতে জানান পুকুলদেবী। সেই মামলার শুনানিতেই শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসককে পুরপ্রধানের চেম্বার বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী। বুধবার দুুপুরে শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক মৃণালকান্তি হালদার পুলিশ নিয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানের ঘরে চাবি দিয়ে দেন। বিচারপতির নির্দেশ মতো ঘরের চাবিটি নিজের কাছে রেখে দেন। আদালতের নির্দেশের কারণ দেখিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “আদালত যা নির্দেশ দিয়েছে, আমরা সেটাই পালন করেছি।” পুতুলদেবীর দাবি, তিনি সঠিক দাবি করেছিলেন বলেই আদালত তাঁর পক্ষে রায় দিয়েছে।

পুরপ্রধানের বক্তব্য, “ওই মহিলা পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। কিন্তু নিজেকে স্থায়ী কর্মী বলে আদালতকে বিপথে চালিত করেছেন। যিনি স্থায়ী কর্মী নন, তাকে ওই বেতন দেওয়া কী ভাবে সম্ভব!” পুরসভা সূত্রে খবর, ২০০৬ সালে (তখন ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট) ওই মহিলা তত্‌কালীন পুরপ্রধানের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে সাসপেন্ড হয়েছিলেন। তিন বছর সাসপেন্ড থাকাকালীন তিনি নিয়ম অনুযায়ী অর্ধেক মাইনে পান। বাকি অর্ধেক টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজার। সাসপেনশন উঠলে তিনি ওই টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে আদালতে মামলাও করেন তিনি। মহিলাকে ওই টাকা ফেরতের নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু তত্‌কালীন পুরবোর্ড মাত্র ১৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়। মহিলা ফের মামলা করেন। ২০১০ সালের জুন মাসে পুরপ্রধানের পদে বসেন অজয়প্রতাপবাবু। বিগত পুরবোর্ডের দায় বর্তমান বোর্ডের উপর এসে পড়ে।

অজয়বাবু বলেন, “আমরা যখন পুরসভার দায়িত্ব নিলাম, তখন ৪১ কোটি টাকা দেনা। ওই মহিলার টাকা দেওয়া ওদেরই দায় ছিল। ওরা তা মেটায়নি। ওদের সেই কাজের দায় আমাদের ঘাড়ে বর্তেছে। কিন্তু আমরা অত টাকা জোগাড় করে উঠতে পারিনি। জোগাড় হলেই দেওয়া হবে।” তাঁর সংযোজন, “অন্যান্য অস্থায়ী কর্মীরা যে ভাবে বেতন পান, ওই মহিলার ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়। কিন্তু তাঁকে স্থায়ী কর্মীর বেতন দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা গোটা বিষয়টি নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

baidyabati municipality chairman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE