ভরাট হওয়ার পরে এখন যে অবস্থায়। ছবি: প্রকাশ পাল।
চোখের সামনেই ভরাট হয়ে গিয়েছিল আস্ত পুকুরটা। প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন বাসিন্দারা। পারেননি। তবে লড়াই ছাড়েননি। নানা দফতর ঘুরে শেষে আদালতের শরণাপন্ন হন। আর তাতেই দেরি হলেও ফল মিলেছে। নড়ে বসেছে সরকারি দফতর। পুকুর ভরাটের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, মৎস্য দফতর তাদের নোটিস পাঠিয়ে নির্দেশ দিয়েছে, ওই জমিকে ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, হুগলির বৈদ্যবাটি এনসি ব্যানার্জি রোডে ৯ কাঠা ১১ ছটাকের ওই পুকুর বাসিন্দাদের কাছে ষষ্ঠীপুকুর নামে পরিচিত। তাঁরা দৈনন্দিন প্রয়োজনে পুকুরটি ব্যবহার করতেন। নিকাশি ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও পুকুরটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পুকুরের চার ধারে ছিল গার্ড-ওয়াল। ২০০১ সালে পুকুরটি ভরাট করা শুরু হয়। প্রথম থেকেই বাসিন্দাদের একাংশ তাতে বাধা দেন। শ্রীরামপুরের তৎকালীন মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপে মাটি ফেলা বন্ধ হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর দু’য়েক পরে ফের পুকুরে মাটি ফেলা শুরু হয়। ফের স্থানীয় পুরসভা, থানা থেকে মহকুমাশাসক, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, মৎস্য দফতর সর্বত্র লিখিতভাবে বিষয়টি জানান তাঁরা। তবে সরেজমিন তদন্তে এলেও কোনও দফতরই সরাসরি এফআইআর করতে চায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘বিভিন্ন দফতরে শুধু চিঠি চালাচালি হয়। আমরা আশ্বাসের পর আশ্বাস পাই। আর এরই ফাঁকে চোখের সামনে পুকুরটা পুরোপুরি বুজদিয়ে দেওয়া হয়।” শুধু তাই নয়, সরকারি নথিতেও পুকুরটির চরিত্রের পরিবর্তন করা হয় বলে অভিযোগ।
এর পর আর প্রশাসনের উপরে আস্থা রাখতে পারেননি এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা ভুবনমোহন বণিক এবং কেদার ঘোষ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই নিয়ে একটি জনস্বার্থের মামলা করেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, পুকুরটির অংশীদাররা সেটি বিক্রি করেছিলেন মানিক রায়, সুকুমার নন্দী, অচিন্ত্য দাস, সঞ্জীব সেন এবং পদ্মাবতী ঘোষকে। ওই পাঁচ জনের বিরুদ্ধেই মামলা হয়। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, পুকুরটি ভরাটের পিছনে তৎকালীন শাসক দলের কিছু নেতারও মদত ছিল।
২০০১ সালে পুকুর বোজানোর ছবি।--ফাইল চিত্র
ভরাট হওয়ার পরে এখন যে অবস্থায়। ছবি: প্রকাশ পাল।
২০১০ সালের ৬ অগস্ট হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল এবং বিচারপতি ভাস্কর ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ হুগলি জেলা মিন ভবনের আধিকারিককে নির্দেশ দেন, অভিযোগের সত্যতা থাকলে বিশেষ ধারা প্রয়োগ করে জমিটি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দু’পক্ষকে শুনানিতে ডাকা হয় চুঁচুড়ায় মিন ভবনে। শেষ পর্যন্ত জেলা মৎস্য দফতরের সহকারি ডিরেক্টর অভিজিৎ সাহা গত ১১ মার্চ ওই পাঁচজনকে নোটিস দেন। তাতে বলা হয়, ওই জায়গায় যে জলাশয় বোজানো হয়েছিল, তা প্রমাণিত। এক মাসের মধ্যে তাঁরা যেন ওই জলাশয়কে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। নিজেদের টাকা খরচ করেই তাঁদের এই কাজ করতে হবে। অন্যথায় মৎস্য দফতর আইন অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ইতিমধ্যেই ওই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও মৎস্য দফতরের এই পদক্ষেপে এলাকার মানুষ খুশি। কেদারবাবু বলেন, “নির্বিচারে পরিবেশের উপর আঘাত হানছে মানুষ। তাই আমরা রুখে দাঁড়াই। আমাদের বক্তব্য যে মান্যতা পেয়েছে, তাতে আমরা খুশি। তবে মৎস্য দফতরের সময়সীমা তো পেরিয়ে গেল। এ বার পুকুর খননের ব্যবস্থা হোক।” জেলা মৎস্য দফতরের সহকারী ডিরেক্টর অভিজিৎ সাহা বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
পুকুর বোজানোয় অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম অচিন্ত্যবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।” আর এক অভিযুক্ত পদ্মাবতীদেবীর স্বামী বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “যখন আমরা ওই জমি কিনি, তখন তা পুকুর অবস্থায় ছিল না। পরচা এবং অন্য রেকর্ডেও ওই জমি বাস্তু বলে দেখানো আছে। মিন ভবনকে তা বলেওছি।”
এই অবস্থায় মিন ভবন কী পদক্ষেপ করে সে দিকেই তাকিয়ে এলাকার মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy